প্রতীকী ছবি

বিয়ে একজন মানুষকে পরিণত করে, দায়িত্বশীল হতে শেখায়। বিয়ের মাধ্যমে দুজন মানুষ, দুটি পরিবার একসঙ্গে মিলে যায়। এই সম্পর্কের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে আরও অনেক কিছু।

স্বামী-স্ত্রী দুজনের ধৈর্য্য, পারস্পরিক বোঝাপোড়ার মাধ্যমে দাম্পত্য জীবন সুখের হয়ে থাকে। দুজন মানুষ সুন্দর একটি জীবনের সূচনা করতে পারেন। এক্ষেত্রে স্ত্রীকে কিছুটা মানিয়ে নিতে হয়। স্বামীকেও মানিয়ে নেওয়ার মানসিকতা রাখতে হয়।

সুখী সংসারের জন্য স্বামীর অবদান স্ত্রীর তুলনায় কোনো অংশে কম নয়। পরিবারের কর্তা হিসেবে স্বামীকেই সব সুন্দরের আয়োজনের উদ্যোগী, সহযোগী হতে হয়। আদর্শ স্বামী বা আদর্শ কর্তাই একটি সুন্দর পরিবারের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করতে পারেন। একজন আদর্শ স্বামীর মাঝে কেমন গুণ থাকা জরুরি এখানে তুলে ধরা হলো—

স্ত্রীকে বুঝার চেষ্টা করা

বিয়ের মাধ্যমে দুজন মানুষ একত্রিত হন। অধিকাংশ সময়ই তাদের মাঝে পূর্ব পরিচয়, জানাশোনা থাকে না। তাই বিয়ের পর স্বামী উচিত স্ত্রীকে বোঝার চেষ্টা করা। তাকে যথেষ্ট সময় দেওয়া। দুজনের ভালো বোঝাপড়ার মাধ্যমে একটি সুখী সংসারের সূচনা হতে পারে।

স্ত্রীর সঙ্গে দায়িত্বশীল আচরণ করা 

স্বামীর ওপর স্ত্রীর বাসস্থান, ভরণপোষণ ও অন্যান্য যে অধিকার অর্পিত হয়েছে, সে ব্যাপারে তার যত্নবান হওয়া। দায়িত্বশীল স্বামী স্ত্রীর খুবই প্রিয়। যথাযথ দায়িত্ব পালনে অনেক সওয়াবেরও অধিকারী হওয়া যায়। দায়িত্বে অবহেলায় শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।

রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি স্বীয় পরিবার-পরিজনের জন্য পুণ্যের আশায় যখন ব্যয় করে তখন সেটা তার জন্য সদকা হয়ে যায়।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৫)

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক দায়িত্বশীলকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন, সে তা পালন করেছে, না করেনি? এমনকি পুরুষকে তার পরিবার-পরিজন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন।’ (ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৪৪৯৩)

ভালো ব্যবহার করা

স্বামী-স্ত্রীক একজনকে অপরের পোশাকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। অর্থাৎ, পোশাক যেমন মানুষের শরীরের সঙ্গে লেপ্টে থাকে, তারাও একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এভাবে জড়িয়ে যান। তাই স্বামীর জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়ার নারীটির সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা আবশ্যক। 

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে সদ্ভাবে জীবন-যাপন করো। যদি তোমরা তাদের অপছন্দ করো, তবে হয়তো তোমরা এমন জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ অনেক কল্যাণ রেখেছেন।’ (সূরা নিসা, আয়াত : ১৯)

নবীজি সা. বলেছেন, ‘কোনো মুমিন পুরুষ কোনো মুমিন নারীর প্রতি বিদ্বেষ-ঘৃণা পোষণ করবে না। কেননা তার কোনো অভ্যাস অপছন্দ করলে তার অন্য কোনো অভ্যাস সে পছন্দ করবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৩৫৪০)

ঘরের কাজে স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করা

পারিবারিক জীবনে নারীরা সাধারণত ঘরের কাজই করে থাকেন। ঘরের বাহিরে পুরুষের কাজের তুলনায় তাদের কাজের চাপ, পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। সংসার গুছিয়ে রাখতে নারীরা হাসি মুখে এসব কাজ-কর্ম চালিয়ে যান। চাপ কমাতে, মানসিক স্বস্তি দিতে ঘরের কাজে তাদের সহযোগিতা করা উচিত।

নবীজি সা. স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন। আয়েশা রা.)বলেন, ‘তিনি (নবীজি) ঘরের কাজ-কর্মে ব্যস্ত থাকতেন। অর্থাৎ পরিবারবর্গের সহায়তা করতেন। নামাজের সময় হলে নামাজের জন্য চলে যেতেন। (বুখারি, হাদিস : ৬৭৬)

স্ত্রীর সঙ্গে একান্তে বসে খোশগল্প করা

অবসরে স্ত্রীর সঙ্গে একান্তে বসে কিছু গল্পগুজব করা। স্ত্রীকে তার পছন্দনীয় সুন্দর নামে ডাকা। রসাত্মক কোনো কথাবার্তা বলে হাসানো। বৈধ মজাদার কোনো গেম খেলা। 

নবীজি সা. জাবির রা.-কে বলেন, ‘কুমারী বিয়ে করলে না কেন? তুমি তার সঙ্গে খেলতে, সেও তোমার সঙ্গে খেলত। তুমি তাকে হাসাতে, সেও তোমাকে হাসাত।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৩৬৭)

স্ত্রীর পরিবারকে সম্মান করা

স্ত্রীর পরিবারের লোকজনকে সম্মান করলে স্ত্রী সবার কাছে সম্মানিত ও প্রশংসিত হয়। ফলে স্বামীর প্রতি তার মহব্বত ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। সে স্বামী ও তার ফ্যামিলির জন্য নিবেদিত হয়ে যায়।

অসুস্থ স্ত্রীর সেবা করা

স্ত্রী অসুস্থ হলে সাধ্যমতো তার সেবা করা স্বামীর দায়িত্ব। আয়েশা রা. বলেন, রাসূল সা.-এর পরিবারবর্গের কেউ অসুস্থ হলে তিনি ‘মুআববিজাত’ সূরাগুলো পড়ে তাকে ফুঁক দিতেন। (বুখারি, হাদিস : ৫৬০৭)

ইবনে ওমর রা. বলেন, ওসমান রা. বদর যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন। কেননা তাঁর স্ত্রী আল্লাহর রাসূল সা.-এর কন্যা অসুস্থ ছিলেন। তখন নবীজি সা. তাকে বললেন, ‘বদর যুদ্ধে যোগদানকারীর সমপরিমাণ সওয়াব ও অংশ তুমি পাবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৭৪৩)

স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করা

জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়ে স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। এতে পারস্পরিক বোঝাপড়া সুদৃঢ়। সম্পর্ক সুন্দর হয়। স্বামীর কাছে গুরুত্ব পাওয়ার বিষয়টি স্ত্রীকে আনন্দিত করে।। আল্লাহ বলেন, ‘আর জরুরি বিষয়ে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করুন।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)

রাসূল সা. ওহী নাজিলের পর খাদিজা রা.-এর সঙ্গে পরামর্শ করেছেন। (বুখারি, হাদিস : ৪৫৯৩)