পরকালে সুখ-শান্তিতে থাকতে চাইলে নেক আমল করার কোনো বিকল্প নেই। অনেকেই অনেক ধরনের নেক আমল করেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘যারা ঈমান আনে ও নেক কাজ করে, তাদের জন্য আছে নেয়ামতে ভরা জান্নাত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা লোকমান, আয়াত : ৮-৯)

অপর আয়াতে আরও বলা হয়েছে,

اِنَّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ کَانَتۡ لَهُمۡ جَنّٰتُ الۡفِرۡدَوۡسِ نُزُلًا


‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, তাদের মেহমানদারির জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফেরদাউস।’ (সূরা কাহফ, আয়াত : ১০৭)

নেক আমল যত ছোট বা অল্পই হোক না কেন, এর প্রতিদান আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই দেবেন। এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 

 فَمَنۡ یَّعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّۃٍ خَیۡرًا یَّرَهٗ - وَ مَنۡ یَّعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّۃٍ شَرًّا یَّرَهٗ

‘কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে।’ (সূরা যিলযাল, আয়াত : ৭-৮)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো-তা এক টুকরা খেজুর দান করার বা একটি ভালো কথা বলার বিনিময়েই হোক না কেন’। (বুখারি, হাদিস, ৬৫৪০)

অপর এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘কোন সৎকাজকেও সামান্য ও নগণ্য মনে করো না, যদিও তা কোনো পানি পার করতে ইচ্ছুক ব্যক্তির পাত্রে এক মগ পানি ঢেলে দেওয়াই হয় অথবা তোমার কোনো ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাত করাই হয়।’  (মুসনাদে আহমাদ, ৫/৬৩)

নেক আমল করার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ আবার এমন কিছু কাজও করেন, যে কারণে তাদের নেক আমল নষ্ট হয়ে যায়। তাই আমাদের এমন কাজ থেকে সতর্ক থাকতে হবে, যে কাজের কারণে নেক আমল নষ্ট হয়ে যায়।

নেক আমল নষ্ট হওয়ার বিষয়ে ইমাম আবু হানিফা রহ. বলেন, নেক আমল নষ্ট করে এমন সব থেকে দূরে থাকতে হবে এবং কুফর বা ধর্মত্যাগের মতো অশোভন আচরণের মাধ্যমে নেক আমল নষ্ট করা যাবে না ...। 

তিনি আরও বলেছেন, নেক আমল নষ্ট করে তিনটি বিষয়। প্রথম বিষয়— আল্লাহর সাথে শিরক করা; কারণ মহান আল্লাহ বলেছেন, আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে কুফরী করবে তার কর্ম নষ্ট হবে। (সূরা মায়িদা, আয়াত : ৫ )

নেক আমলনষ্টকারী দ্বিতীয় বিষয়— (খোঁটা বা কষ্ট দেওয়া, তা) মানুষ কোনো নেক আমল করল, যেমন একজন ক্রীতদাসকে মুক্ত করল, কোনো আত্মীয়কে সহযোগিতা করল অথবা কিছু সম্পদ দান করল। এ সব কাজ সে একান্তই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করল। এরপর যখন সে ক্রোধান্বিত হলো- অথবা ক্রোধ ছাড়াই- সে খোঁটা দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বলল: আমি কি তোমাকে মুক্ত করিনি? আমি কি তোমাকে সাহায্য করিনি? অথবা এমন কোনো কথা দিয়ে তার মাথায় আঘাত করল।

 এজন্য এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেছেন, তোমরা খোঁটা দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে তোমাদের দান-কল্যাণকর্মগুলো বাতিল করো না। (সূরা বাকারা, আয়াত : ২৬৪)

নেক আমল নষ্টকারী তৃতীয় বিষয়— রিয়া বা মানুষকে দেখানোর জন্য আমল করা। যে নেক আমল মানুষের দেখানোর জন্য করা হয় তা আল্লাহ কবুল করেন না। এ ছাড়া যত পাপ তা নেক কর্ম নষ্ট করে না। (ইমাম আবূ হানীফা, আল-আলিম ওয়াল মুতাআল্লিম, পৃ. ৩২)