প্রতীকী ছবি

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মের কয়েক মাস আগে তাঁর বাবা মারা যান। জন্মের আগেই বাবাকে হারানো নাতির প্রতি মনে অন্য এক রকম স্নেহ-ভালোবাসা কাজ করতো দাদা আব্দুল মুত্তালিবের ভেতর।

নাতির জন্মের খবরে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠলেন তিনি। নাতিকে দেখে আদর করে কোলে নিয়ে নিয়ে কাবা শরীফে প্রবেশ করলেন। উপস্থিত সবার মাঝে নাতির জন্মের খুশি প্রকাশ করে তাঁকে আল্লাহর হেফাজতে ন্যস্ত করার ঘোষণা দিয়ে বললেন—

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার যিনি আমাকে এই পবিত্র শিশুটি দান করেছেন। এই শিশু দোলনায় অবস্থানকারী সকল শিশুর সরদার। তাকে এই পবিত্র ঘরের আশ্রয়ে ন্যস্ত করছি। সকল হিংসুক ও শত্রুর আক্রোশ থেকে তার নিরাপত্তা কামনা করছি।

জন্মের সপ্তম দিনে তিনি নাতির আকীকা করেন। আকীকা অনুষ্ঠানের কুরাইশের সবাইকে দাওয়াত করলেন। সবার সামনে নাতির জন্য মুহাম্মদ নাম নির্বাচন করলেন। উপস্থিত কুরাইশগণ বললেন, হে আবুল হারিস! (আব্দুল মুত্তালিবের উপনাম)। এ নামটি আপনার পূর্ব-পুরুষ বা সম্প্রদায়ের কেউ এর আগে রাখেনি। আপনি এ নামটি কেন রাখলেন?

আব্দুল মুত্তালিব বললেন, এ নাম রাখার কারণ হলো যেন পৃথিবীর সমস্ত সৃষ্টি জীব এ নবজাতকের প্রশংসা করে।

আব্দুল মুত্তালিব নবীজি সা.-এর জন্মের আগে একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন, এই স্বপ্নের উপর ভিত্তি করে তিনি নাতির নাম মুহাম্মদ রাখেন। স্বপ্নে তিনি দেখেছিলেন—

তাঁর পিঠ থেকে একটি শেকল বের হয়েছে, যার একটি মাথা আসমানে, আরেকটি জমিনে। একটি মাথা পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত এবং একটি মাথা পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। কিছুক্ষণের মধ্যে ওই শেকলটি একটি বৃক্ষে পরিণত হয়। যার প্রতিটি পাতা সূর্যের আলোর থেকে ৭০ গুণ বেশি আলোকোদ্ভাসিত ছিল। পূর্ব ও পশ্চিমের মানুষেরা ওই বৃক্ষের ডালের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল। কুরাইশের কিছু লোকও গাছের ডালটি আকড়ে ধরে ছিল। আবার কুরাইশের কিছু লোক বৃক্ষটি কাটতে যাচ্ছিলো। তারা গাছের কাছাকাছি এলে সুদর্শন সুঠাম দেহের এক যুবক এসে তাদের সরিয়ে দিলো।

স্বপ্নের ব্যাখ্যাকারগণ এই স্বপ্নের ব্যাখ্যায় বলেন, আপনার বংশে এমন একজন জন্মগ্রহণ করবেন, পূর্ব-পশ্চিমের লোকেরা তাঁর অনুসরণ করবে এবং আসমান ও জমিনের অধিবাসীরা তাঁর প্রশংসা ও স্তুতি জ্ঞাপন করবে। এই ব্যাখ্যা জানার পর আব্দুল মুত্তালিবের মনে নাতির নাম মুহাম্মদ রাখার ইচ্ছা জাগে।

অপর এক বর্ণনা অনুযায়ী, মুহাম্মদ সা. যখন মায়ের গর্ভে ছিলেন তখন তাঁকে স্বপ্নে জানানো হয়েছিল, তুমি সৃষ্টির উত্তম চরিত্রের অধিকারী জাতির নেতাকে গর্ভে ধারণ করেছো তাঁর নাম রাখবে মুহাম্মদ।

মোটকথা ইলহাম, সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে মা, দাদাকে এই নামটি জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

(সীরাতে মুস্তাফা সা. ১/৬৩)