হিজরতের পথে প্রিয়নবী (সা.) কে সহযোগিতা করেছিলেন যে নারী সাহাবি
রাসূল সা.-এর সহধর্মীনী আয়েশা রা.-এর বোন ও ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর রা.-এর মেয়ে হজরত আসমা রা.। তাঁর স্বামী ছিলেন রাসূল সা.-এর বিশেষ সাহায্যকারী যুবাইর ইবনুল আওয়াম রা.। তাঁর সন্তান আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. ন্যায়ের পথে অবিচল থেকে শহীদ হয়েছিলেন।
ইসলাম গ্রহণ
বিজ্ঞাপন
আসমা রা. হিজরতের ২৭ বছর আগে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রথম ইসলাম গ্রহণকারীদের একজন ছিলেন। তাঁর আগে মাত্র ১৭ জন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
‘জাতুন নিতাকাইন’
রাসূল সা. যখন আবু বকর রা.-কে নিয়ে হিজরতের জন্য বের হয়েছিলেন তখন তিনি তাদের বিশেষ সহযোগিতা করেছিলেন। আল্লাহর রাসূল সা. যে কয়দিন সাওর গুহায় অবস্থান করেছিলেন তিনি তাদের খাবার দিয়ে আসতেন। একদিন তিনি থলিতে করে খাবার নিয়ে যাওয়ার সময় থলির মুখ বাঁধার জন্য আশাপাশে কিছুই পাচ্ছিলেন না। কিছু না পেয়ে শেষে তিনি নিজের কোমরের নিতাক বা বন্ধনী খুলে দু’টুকরো করে এক অংশ দিয়ে থলি অপরটি দিয়ে মশকের মুখ বাঁধলেন। এ ঘটনা জানার পর রাসূল সা. তাঁর জন্য দোয়া করেন—
হে আল্লাহ! এর বিনিময়ে আপনি জান্নাতে তাঁকে দুটি নিতাক দান করুন। রাসূল সা. এই দোয়ার মাধ্যমে তিনি ‘জাতুন নিতাকাইন’ উপাধি লাভ করেন।
আবু জাহেলের সামনে দৃঢ় মনোভাব
রাসূল সা. ও আবু বকর রা.-এর হিজতের খবর মক্কায় ছড়িয়ে পড়লে আবু জাহেল ও মক্কার কুরাইশ নেতারা এসে আসমার কাছে জানতে চায়, তোমার বাবা এখন কোথায়?
তিনি আবু জাহেলকে ভয় না পেয়ে দৃঢ় মনোবল নিয়ে তাদের খোঁজ দিতে অস্বীকৃতি জানান। আবু জাহেল হুমকি ধামকী দিলেও এতে কোনো কাজ হয়নি, আসমা অনড়। রেগে গিয়ে নরাধম আবু জাহল তাঁর গালে জোরে থাপ্পড় মারে। এতে তাঁর কানের দুল দুটি ছিটকে পড়ে যায়।
রাতের অন্ধকারে সাওর পর্বতে
মক্কায় তখন রাসূল সা.-এর নামে মুশরিকদের পক্ষ থেকে মৃত্যুর প্ররোয়ানা জারি করা হয়। এই কঠিন মুহূর্তে আসমা প্রতিদিন রাতের অন্ধকারে সাওর পর্বতে তাদের জন্য খাবার নিয়ে যেতেন।
আরও পড়ুন
আবু কুহাফাকে সান্ত্বনা
হিজরতের সময় আবু বকর রা. নিজের সঙ্গে নগদ অর্থ সব নিয়ে যান। তা জানতে পেরে আবু বকরের বাবা আবু কুহাফা আফসোস করে বলেন, সে আমাদের জানমাল সব কিছুর মাধ্যমে কষ্ট দিয়ে গেল।
আবু কুহাফা ছিলেন অন্ধ। তাকে বুঝ দেওয়ার জন্য অর্থ সম্পদ রাখার জায়গাতে আসমা অনেকগুলো পাথর রেখে দাদাকে ডেকে বলেন, দেখুন অনেক কিছু রেখে গেছেন বাবা আমাদের জন্য। আবু কুহাফা অন্ধ থাকার কারণে নাতনি কথা বিশ্বাস করেন।
এ ঘটনা সম্পর্কে আসমা রা. বলেন, সেই পরিস্থিতিতে দাদাজানকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য আমাকে এমনটা করতে হয়েছে। সেখানে আসলে কিছুই ছিল না।
হিজরতের পথে প্রসব
হিজরতের সময় তিনি অন্তঃসত্তা ছিলেন। তাঁর গর্ভে ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা.। সন্তান পেটে নিয়েই তিনি হিজরতের কঠিন পথ পাড়ি দিয়েছিলেন। একটুও ঘাবড়াননি, আল্লাহর নামে বেরিয়ে পড়েন।
মদিনায় মুহাজিরদের প্রথম শিশুর জন্ম
কুবা পৌঁছার পর আব্দুল্লাহকে প্রসব করেন। আবদুল্লাই ছিলেন মদিনায় আসা মুহাজির সাহাবিদের প্রথম জন্মগ্রহণকারী সন্তান। মুসলমানরা তাঁর জন্মের পর তাকবীর ধ্বনি দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন।
আসমা রা. মদিনায় পৌঁছে রাসূল সা.-এর কোলে তুলে দেন সন্তানকে। রাসূল সা. নিজের জিহ্বা থেকে কিছু থু থু নিয়ে শিশুর মুখে দেন এবং তাহনীক (খুরমা বা কিছু চিবিয়ে মুখে দেওয়া) করে তার জন্য দোয়া করেন।
(আসহাবে রাসূলের জীবনকথা, ১/২০৩)