যে বিতর্কে হেরে ইবরাহিম (আ.) কে আগুনে নিক্ষেপ করে নমরুদ
হজরত ইবরাহিম আ.-এর যুগের অত্যাচারী, অহংকারী ও খোদাদ্রোহী বাদশা ছিল নমরুদ। নমরুদ ৪০০ বছর ধরে রাজত্ব পরিচালনা করেছিল। সে নিজেকে একমাত্র উপাস্য মনে করে বসেছিল। নমরুদের দরবারে ইবরাহিম আ.-এর বির্তক হয়েছিল আল্লাহর তাওহীদ ও একত্ববাদের বিষয়ে। এই বিতর্কে নমরুদ পরাজিত হয়ে তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করেছিল।
ইবরাহিম আ. যখন নমরুদের রাজ দরবারে গেলেন তখন নমরুদ তাঁকে জিজ্ঞেস করল, বল তোমার উপাস্য কে? নমরুদ ভেবেছিল, ইবরাহীম তাকেই উপাস্য বলে স্বীকার করবে। কিন্তু নির্ভীক কণ্ঠে ইবরাহীম জবাব দিলেন,
বিজ্ঞাপন
رَبِّيَ الَّذِيْ يُحْيِـيْ وَيُمِيْتُ ‘আমার পালনকর্তা তিনি, যিনি মানুষকে বাঁচান ও মারেন’।
মোটাবুদ্ধির নমরুদ বলল, أَنَا أُحْيِـيْ وَأُمِيْتُ ‘আমিও বাঁচাই ও মারি’। অর্থাৎ মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে খালাস দিয়ে মানুষকে বাঁচাতে পারি। আবার খালাসের আসামীকে মৃত্যুদন্ড দিতে পারি। এভাবে সে নিজেকেই মানুষের বাঁচা-মরার মালিক হিসাবে সাব্যস্ত করল।
আরও পড়ুন
ইবরাহীম আ. তখন দ্বিতীয় যুক্তি পেশ করে বললেন,
فَإِنَّ اللهَ يَأْتِيْ بِالشَّمْسِ مِنَ الْمَشْرِقِ فَأْتِ بِهَا مِنَ الْمَغْرِبِ
‘আমার আল্লাহ সূর্যকে পূর্ব দিক থেকে উদিত করেন, আপনি তাকে পশ্চিম দিক থেকে উদিত করুন’।
ইবরাহিম আ.-এর এই চ্যালেঞ্জের কথা শুনে নমরুদ হতবুদ্ধি হয়ে গেল। কিন্তু সে নিজের এই প্রকাশ্য পরাজয় কোনোভাবে মেনে নিল না। অহংকারে ফেটে পড়লো সে। এবং ইবরাহীমকে জ্বলন্ত আগুনে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার নির্দেশ জারি করল। একইসঙ্গে জনগণকে তার নিজের তৈরি ধর্মের দোহাই দিয়ে বললো,
حَرِّقُوهُ وَانصُرُوا آلِهَتَكُمْ إِنْ كُنتُمْ فَاعِلِيْنَ
‘তোমরা একে পুড়িয়ে মার এবং তোমাদের উপাস্যদের সাহায্য কর, যদি তোমরা কিছু করতে চাও।’ (সূরা আম্বিয়া, আয়াত : ৬৮)।
নমরুদের নির্দেশমতো বিশাল আগ্নিকুন্ড তৈরি করা হলো, এতে কয়েকদিন ধরে আগুন জ্বালানো হলো। তারপর সেখানে খলীলুল্লাহকে নিক্ষেপ করা হল। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহর ওপর ভরসা করলেন ইবরাহিম আ.। তিনি বললেন,
حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ
‘আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি কতই না উত্তম তত্ত্বাবধায়ক’।
ইবরাহিম আ.-কে আগুনে নিক্ষেপ করা হলেও আগুন তাঁকে পুড়ালো নাা। আল্লাহ তায়ালা নিজ কুদরত ও অনুগ্রহে তাঁকে আগুনের লেলিহান শিখা থেকে রক্ষা করলেন। তিনি আগুনকে শীতল হওয়ার আদেশ দিলেন। ফলে জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ড ইবরাহিম আ.-এর জন্য আরামদায়ক পরিবেশে পরিণত হলো।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহর নির্দেশের বিষয়টি উঠে এসেছে এভাবে—
قُلْنَا يَا نَارُ كُونِيْ بَرْداً وَّسَلاَماً عَلَى إِبْرَاهِيمَ
‘হে আগুন! ঠান্ডা হয়ে যাও এবং ইবরাহীমের উপরে শান্তিদায়ক হয়ে যাও।’ (সূরা আম্বিয়া, আয়াত : ৬৯)।