খলিলুল্লাহ হজরত ইবরাহিম আ. দীর্ঘ দিন নিঃসন্তান ছিলেন। সন্তান লাভের আশায় তিনি দুই বিয়ে করেছিলেন। প্রথম স্ত্রীর নাম সারা। দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন হাজেরা। প্রথম স্ত্রীর সন্তান না হওয়ায় তিনি হাজেরাকে বিয়ে করেন। হাজেরার গর্ভ থেকে ইসমাঈল আ. জন্ম গ্রহণ করেন। 

ইসমাঈলের বয়স যখন ১৪ এবং তার সঙ্গে কোরবানির ঐতিহাসিক ঘটনার পর আল্লাহ তায়ালা ইবরাহিম আ.-কে প্রথম স্ত্রীর সারা মাধ্যমে ইসহাক আ.-এর জন্মের সুসংবাদ দান করেন। ফেরেশতারা ইসহাকের জন্মের সুসংবাদ নিয়ে আগমন করেন। ইবনু আববাস রা, বলেন, এই ফেরেশতারা ছিলেন হজরত জিবরাঈল, মীকাঈল ও ইসরাফীল আ.। তারা মানুষের রূপ ধারণ করে এসেছিলেন।

হজরত লূত আ.-এর সমকামী  সম্প্রদায়কে ধ্বংসের জন্য আল্লাহ তায়ালা এই ফেরেশতাদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। তাঁরা লূত আ.-এর সম্প্রদায়ের কাছে যাওয়ার আগে ইবরাহিম আ.-এর কাছে মেহমান হিসেবে আগমন করেন এবং তাকে সেই সুসংবাদ দান করেন। সুসংবাদ শুনে সারা আ. আশ্চয় হয়ে যান। কারণ তখন তারা বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হয়েছিলেন। সারার বয়স ছিল ৯০, ইবরাহিম আ.-এর বয়স ছিল। ১০০। তখন মানুষরূপী ফেরেশতারা তাদেরকে বলেন, আল্লাহর রহমতে সব সম্ভব।

 এ বিষয়ে কোরআনের বিবরণ হলো এমন—

وَلَقَدۡ جَآءَتۡ رُسُلُنَاۤ اِبۡرٰہِیۡمَ بِالۡبُشۡرٰی قَالُوۡا سَلٰمًا ؕ قَالَ سَلٰمٌ فَمَا لَبِثَ اَنۡ جَآءَ بِعِجۡلٍ حَنِیۡذٍ ٦٩ فَلَمَّا رَاٰۤ اَیۡدِیَہُمۡ لَا تَصِلُ اِلَیۡہِ نَکِرَہُمۡ وَاَوۡجَسَ مِنۡہُمۡ خِیۡفَۃً ؕ  قَالُوۡا لَا تَخَفۡ اِنَّاۤ اُرۡسِلۡنَاۤ اِلٰی قَوۡمِ لُوۡطٍ ؕ ٧۰ وَامۡرَاَتُہٗ قَآئِمَۃٌ فَضَحِکَتۡ فَبَشَّرۡنٰہَا بِاِسۡحٰقَ ۙ وَمِنۡ وَّرَآءِ اِسۡحٰقَ یَعۡقُوۡبَ ٧١ قَالَتۡ یٰوَیۡلَتٰۤیءَ اَلِدُ وَاَنَا عَجُوۡزٌ وَّہٰذَا بَعۡلِیۡ شَیۡخًا ؕ اِنَّ ہٰذَا لَشَیۡءٌ عَجِیۡبٌ ٧٢ قَالُوۡۤا اَتَعۡجَبِیۡنَ مِنۡ اَمۡرِ اللّٰہِ رَحۡمَتُ اللّٰہِ وَبَرَکٰتُہٗ عَلَیۡکُمۡ اَہۡلَ الۡبَیۡتِ ؕ اِنَّہٗ حَمِیۡدٌ مَّجِیۡدٌ ٧٣ 

‘আর আমাদের প্রেরিত সংবাদবাহকগণ (অর্থাৎ ফেরেশতাগণ) ইবরাহীমের নিকটে সুসংবাদ নিয়ে এলো এবং বলল, সালাম। সেও বলল, সালাম। অতঃপর অল্পক্ষণের মধ্যেই সে একটা ভূনা করা বাছুর এনে (তাদের সম্মুখে) পেশ করল’। 

‘কিন্তু সে যখন দেখল যে, মেহমানদের হাত সেদিকে প্রসারিত হচ্ছে না, তখন সে সন্দেহে পড়ে গেল ও মনে মনে তাদের সম্পর্কে ভয় অনুভব করতে লাগল (কারণ এটা তখনকার যুগের খুনীদের নীতি ছিল যে, যাকে তারা খুন করতো, তার বাড়ীতে তারা খেত না)। তারা বলল, আপনি ভয় পাবেন না। আমরা লূত্বের কওমের প্রতি প্রেরিত হয়েছি। তার স্ত্রী (সারা) নিকটেই দাঁড়িয়েছিল, সে হেসে ফেলল। আমরা তাকে ইসহাকের জন্মের সুখবর দিলাম এবং ইসহাকের পরে (তার পুত্র) ইয়াকূবেরও। 

সে বলল, হায় কপাল! আমি সন্তান প্রসব করব? অথচ আমি বার্ধক্যের শেষ সীমায় পৌঁছে গেছি। আর আমার স্বামীও বৃদ্ধ। এতো ভারী আশ্চর্য কথা! তারা বলল, আপনি আল্লাহর নির্দেশের বিষয়ে আশ্চর্য বোধ করছেন? হে গৃহবাসীগণ! আপনাদের উপরে আল্লাহর রহমত ও প্রভূত বরকত রয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রশংসিত ও মহিমময়।’ ( সূরা হূদ, আয়াত :৬৯-৭৩)। 

আল্লাহ তায়ালা ইসমাঈল আ.-এর মতো ইসহাক আ.-কেও নবী বানিয়েছিলেন। তিনি শামের বিস্তির্ণ অঞ্চলে বসবাস করতেন। ইবরাহিম আ. তাঁকে রাফক্বা বিনতে বাতওয়াঈল নামে এক নারীর সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনিও বন্ধ্যা ছিলেন। 

পরে ইবরাহীম আ.-এর বিশেষ দোয়ার বরকতে তিনি সন্তান লাভ করেন। তাঁর গর্ভে ঈছ ও ইয়াকূব নামে পরপর দু’টি পুত্র সন্তান জন্ম লাভ করে।  তার মধ্যে ইয়াকূব নবী হয়েছিলেন। পরে ইয়াকূবের বংশধর বনী ইসরাঈল নামে পরিচিতি লাভ করে। তাদের মাঝে আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য নবী প্রেরণ করেছিলেন। তারা পৃথিবীবাসীকে তাওহীদের আলোয় আলোকিত করেন। কিন্তু ইহুদী নেতাদের হঠকারিতার কারণে তারা আল্লাহর আজাবে পতিত হয় এবং অভিশপ্ত জাতি হিসাবে নিন্দিত হয়। যা কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

ইসহাক আ. ১৮০ বছর বয়স পান। তিনি কেনানে মৃত্যুবরণ করেন এবং পুত্র ঈছ ও ইয়াকূবের মাধ্যমে হেবরনে পিতা ইবরাহীমের কবরের পাশে সমাহিত হন।  (আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ ১/১৮১-১৮৪)