সমাজে চলতে গিয়ে মানুষ একে অপরের প্রতি যেসব বিষয়ে সব থেকে বেশি নির্ভরশীল হয় তার একটি বিশেষ প্রয়োজনে ধার-দেনা, ঋণ কর্জ করা। অন্যের প্রয়োজনে এগিয়ে এসে তাকে ঋণ দেওয়া. সাহায্য করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে ইসলামে। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘কে আছে যে আল্লাহকে কর্জে হাসানা উত্তম ঋণ দেবে, তাহলে তিনি তার জন্য একে বর্ধিত করে দেবেন এবং তার জন্য সম্মানজনক প্রতিদানও রয়েছে।’ -(সুরা-৫৭ হাদিদ, আয়াত: ১১)।

অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, নিশ্চয়ই দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, যে ক্ষেত্রে তারা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করে তাদের প্রতিদান বর্ধিত করা হবে এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক প্রতিদান।’ (সুরা- হাদিদ, আয়াত: ১৮)।

অন্যের প্রয়োজনে এগিয়ে আসার বিশেষ ফজিলত বুঝাতে এক হাদিসে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দুনিয়াবি সমস্যাগুলোর একটি সমাধান করে দেয়, আল্লাহ তায়ালা তার আখিরাতের সংকটগুলোর একটি মোচন করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্তের অভাব মোচনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তায়ালাও তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে স্বাচ্ছন্দ্য দান করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ-গুণ গোপন করবে, আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন করবেন। আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে।’ (মুসলিম, হাদিস: ২৬৯৯)।

কেউ ঋণ দিলে তা সময়মতো পরিশোধ করা জরুরি। এতে ঋণদাতার মানসিকতা ভালো থাকবে এবং তিনি অন্য কাউকে প্রয়োজনের সময় সহযোগিতার করতে উৎসাহ পাবেন। আর কারো কাছ থেকে ঋণ নিয়ে আদায়ে গড়িমসি করলে এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। ঋণদাতা এতে বিরক্ত হতে পারেন। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে অন্য কাউকে সহযোগীতায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন।

যখন কেউ কারো কাছ থেকে নেওয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করবেন তখন এই দোয়াটি পড়তে পারেন। এতে আল্লাহ তায়ালা বরকত দান করবেন ইনশাআল্লাহ।দোয়াটি হলো—

بارَكَ اللَّهُ لَكَ فِي أَهْلِكَ وَمَالِكَ، إِنَّمَا جَزَاءُ السَّلَفِ الْحَمْدُ وَالأَدَاءُ

উচ্চারণ : বা-রাকাল্লা-হু লাকা ফী আহলিকা ওয়া মা-লিকা, ইন্নামা জাযা-উস সালাফে আল-হামদু ওয়াল আদা-উ।

অর্থ : আল্লাহ আপনার পরিবারে ও সম্পদে বরকত দান করুন। ঋণের প্রতিদান তো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও (ঠিকভাবে) আদায়। 

এই দোয়াটি সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবু রবিআ আল-মাখযুমি রা. বর্ণনা করেছেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুনাইন যুদ্ধের সময় তার কাছ থেকে ৩০ বা ৪০ হাজার দিরহাম ঋণ নিয়েছিলেন। 

 নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে তার পাওনা পরিশোধ করেন। এরপর তাকে উপরোক্ত দোয়াটি করেন। (নাসাঈ, ইবন মাজাহ, ২/৮০৯, ২৪২৪।)