প্রতীকী ছবি

সূরা মুসরালাত পবিত্র কোরআনের ৭৭ নম্বর সূরা। সূরাটি কোরআনের ২৯ তম পারায় অবস্থিত। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সূরার শানে নুজুল সম্পর্কে হজরত ইবনে মাসউদ রা. বলেন—

আমরা নবী সা.-এর সঙ্গে মিনায় একটি গুহায় ছিলাম। এ সময় রাসূল সা.-এর উপর সূরা মুরসালাত অবতীর্ণ হয়। তিনি সূরাটি পাঠ করছিলেন আর আমি তাঁর কাছ থেকে তা গ্রহণ করছিলাম। হঠাৎ করে সেখানে একটি সাপ এসে গেল। তিনি বললেন, তোমরা ওকে মেরে ফেল। কিন্তু সে (সাপটি) দ্রুত অদৃশ্য হয়ে গেল। তিনি বললেন, ‘তোমরা তার অনিষ্ট থেকে এবং সে তোমাদের অনিষ্ট থেকে বেঁচে গেল।’ (বুখারি ও মুসলিম)

এই সূরার শুরুতে কিয়ামতের সত্যতা এবং নিশ্চিত সংঘটিত হবে বুঝানোর জন্য আল্লাহ তায়ালা পাঁচটি বিষয়ের শপথ গ্রহণ করেছেন। বর্ণিত হয়েছে—

وَالۡمُرۡسَلٰتِ عُرۡفًا ۙ ١ فَالۡعٰصِفٰتِ عَصۡفًا ۙ ٢ وَّالنّٰشِرٰتِ نَشۡرًا ۙ ٣ فَالۡفٰرِقٰتِ فَرۡقًا ۙ ٤ فَالۡمُلۡقِیٰتِ ذِکۡرًا ۙ ٥ 

 অর্থ: শপথ একের পর এক প্রেরিত বায়ুর। তারপর প্রচণ্ড বেগে ছুটে চলা ঝড়ো হাওয়ার। এবং শপথ (মেঘমালাকে) ইতস্তত বিক্ষিপ্তকারী বায়ুর। অতঃপর শপথ তাদের (অর্থাৎ সেই ফেরেশতাদের), যারা সত্য ও মিথ্যাকে পৃথক করে দেয়। তারপর অবতীর্ণ করে উপদেশবাণী।

সূরার শুরুতে আল্লাহ তায়ালা এই পাঁচটি বস্তুর শপথ করে কিয়ামতের নিশ্চিত আগমনের কথা ব্যক্ত করেছেন। যে পাঁচটি জিনিসের শপথ করা হয়েছে কোরআনুল কারিম সেগুলোকে স্পষ্ট করে উল্লেখ করেনি, বরং সেগুলোর নামের পরিবর্তে পাঁচটি বিশেষণ উল্লেখ করেছে। 

যেমন বলা হয়েছে, (এক) একের পর এক প্রেরিত বা কল্যাণ হিসেবে প্রেরিত, (দুই) অত্যন্ত দ্রুত এবং প্রচন্ডবেগে প্রবাহিত, (তিন) ভালভাবে বিক্ষিপ্তকারী, (চার) ভালভাবে বিচ্ছিন্নকারী এবং (পাঁচ) স্মরণকে জাগ্রতকারী। 

লক্ষণীয় বিষয় হলো, এগুলো কোনো প্ৰাণী বা বস্তুর বিশেষণ, নাম নয়। কিন্তু এগুলো কার বিশেষণ তা পুরোপুরি নির্দিষ্ট করা হয়নি। তাই এ সম্পর্কে বিভিন্নভাবে তাফসীর বর্ণিত আছে। 

এক দল মুফাসসির বলেন, প্রথম তিনটির মাধ্যমে বাতাস এবং পরের দুটির মাধ্যমে ফেরেশতা বুঝানো হয়েছে। (ইবন কাসীর, ফাতহুল কাদীর) 

অপর এক দল মুফাসসির বলেন, প্রথম দুটির মাধ্যমে বাতাস এবং পরের তিনটির মাধ্যমে ফেরেশতা বুঝানো হয়েছে। 

তৃতীয় এক দল মুফাসসির বলেন, প্রথম তিনটি বিশেষণের মাধ্যমৈ বাতাস, চতুর্থটির মাধ্যমে কোরআন এবং পঞ্চমটির মাধ্যমে ফেরেশতা বুঝানো হয়েছে। (তাফসিরে জালালাইন)

কেউ কেউ বলেন যে প্রতিটি বিশেষণের মাধ্যমে ফেরেশতাদের বুঝানো হয়েছে। সম্ভবত ফেরেশতাদের বিভিন্ন দল এসব বিভিন্ন বিশেষণে বিশেষিত। 

তবে ইমাম তাবারী রহ. বলেন, প্রথম আয়াতের মাধ্যমে ফেরেশতা বা বাতাস- দুটিই উদ্দেশ্য হতে পারে। দ্বিতীয় আয়তটির মাধ্যমে প্রবাহিত বাতাস, আর তৃতীয় আয়াতটির মাধ্যমে বাতাস, বৃষ্টি বা ফেরেশতা সবই উদ্দেশ্য হতে পারে। চতুর্থটির মাধ্যমে যেকোনো সত্য-মিথ্যা পার্থক্যকারী উদ্দেশ্য হতে পারে, চাই তা ফেরেশতা হোক বা কোরআন হোক, বা অন্য কিছু হোক। আর পঞ্চমটির মাধ্যমে ফেরেশতাদের উদ্দেশ্য করা হয়েছে।

সূরা শুরুতে এই বিষয়গুলোর শপথ গ্রহণ করার অর্থ হল, কোনো বিষয় বা কথার জন্য শপথ গ্রহণ করা হয় শ্রোতাদের কাছে তার গুরুত্ব স্পষ্ট করা এবং তার সত্যতাকে প্রকাশ করার জন্য। এখানে যে কথার জন্য শপথ করা হয়েছে তার মাধ্যমে বুঝানো হয়েছে, তোমাদের সাথে কিয়ামতের যে অঙ্গীকার করা হয়েছে তা অবশ্যই সংঘটিত হবে। অর্থাৎ, এতে সন্দেহ করার কিছু নেই, বরং এর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করার প্রয়োজন আছে।