বিখ্যাত সাহাবি হজরত আলী রা.-এর শৈশব কেটেছিল রাসূল সা.-এর বাড়িতে। তাঁর অভিভাবকত্ব ও তত্ত্ববধায়নে। আলী রা.-এর বাবা আবু তালিবের সংসার ছিল বেশ বড়। একবার মক্কায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিলো। এ সময় আবু তালেবের পরিবার চালাতে বেশ বেগ পেতে হলো।

আবু তালিব ছিলেন মুহাম্মদ সা.-এর চাচা। তিনি দাদা, মা-কে হারানোর পর চাচার কাছেই বড় হয়েছিলেন। দুর্ভিক্ষের দিনে চাচার কষ্টের বিষয়টি মুহাম্মদ সা.-কে বেশ পীড়া দিলো। তিনি চাচার কষ্ট কমাতে তার সঙ্গে পরামর্শ করে চাচাতো আলীকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এলেন। তাঁর সবকিছুর দায়িত্ব নিজেই গ্রহণ করলেন।

ছোটবেলা থেকেই রাসূল সা.-এর কাছে থাকার ফলে প্রথম কয়েকজন ইসলামগ্রহণকারীর কাতারে নিজের নাম লেখানোর সৌভাগ্য অর্জন করেন আলী রা.। হজরত খাদিজা রা., ওয়ারাকা ইবনে নওফেলের পরই ইসলাম গ্রহণ করেন তিনি। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি রাসূল সা.-এর সঙ্গে নামাজ আদায় করেন।

ঐতিহাসিক ইবনে ইসহাকের মতে, মহানবী সা. নবুয়ত লাভের পরদিন আলী রা. নবী সা. ও খাদিজা রা.-কে নামাজ পড়তে দেখে জিজ্ঞেস করেন, এটা কী?

জবাবে তিনি বলেন, এটা আল্লাহর দ্বীন। এ দ্বীন নিয়েই নবীগণ পৃথিবীতে আগমন করেন। আমি তোমাকে আল্লাহর দ্বীনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। তুমি তাঁরই ইবাদত করো এবং লাত-উযযাকে অস্বীকার করো।

আলী রা. বললেন, এতো সম্পূর্ণ নতুন কথা। এর আগে এমন কথা কখনো শুনিনি। আমি আমার বাবা আবু তালিবকে জিজ্ঞেস না করে এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারবো না।

তখন মুহাম্মদ সা. মাত্রই নবুয়ত লাভ করেছিলেন, আল্লাহ তায়ালাও প্রকাশ্যে মানুষকে ইসলামের প্রতি আহ্বানের নির্দেশ দেননি। তাই আলী রা. আবু তালিবকে বিষয়টি জানালে জটিলতা তৈরি হয় কি না— ভেবে রাসূল সা. তাঁকে বললেন, আলী তুমি ইসলাম গ্রহণ না করলেও আপাতত কারো কাছে এ কথা ফাঁস করবে না।

মুহাম্মদ সা.-এর কাছে এই কথা শোনার পর আলী রা. কাউকে কিছু বললেন না। চুপচাপ থাকলেন। তবে এরপর আর একদিনও কাটলো না। পরদিন সকালে তিনি রাসূল সা.-এর কাছে এসে বললেন, আপনি কীসের আহ্বান করছেন?

রাসূল সা. বলেন, সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ এক, তাঁর কোনো শরিক নেই। লাত-উযযাকে অস্বীকার করো, মূর্তিপূজার প্রতি ঘৃণা ও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করো’।

রাসূল সা.-এর কাছে এ কথা শোনার পর আলী রা. ইসলাম গ্রহণ করলেন। দীর্ঘকাল পর্যন্ত (কিছু কিছু বর্ণনামতে, এক বছর) বাবা আবু তালিবের কাছে নিজের ইসলাম গ্রহণের কথা গোপন রাখলেন তিনি।

(সীরাতুল মুস্তফা সা. ১/১৩৬)