প্রতীকী ছবি

জান্নাত থেকে মানুষের পৃথিবীতে আগমন। নির্দিষ্ট সময়ের পর মৃত্যুর মাধ্যমে পরকালের যাত্রা। কিয়ামত, হাশর, বিচার, হিসাব-নিকাশ শেষে পুলসিরাতের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে চূড়ান্ত গন্তব্য। পুলসিরাত কোরআন-হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত বিষয়।

‘পুল’ ফারসি শব্দ। এর অর্থ সেতু। আর আরবি শব্দ 'সিরাত'-এর অর্থ রাস্তা বা পথ। তবে ইসলামী পরিভাষায় এর অর্থ, পারলৌকিক সেতু বা পুল। কিয়ামত হওয়ার পর সব মানুষকে পুনরুজ্জীবিত করে হাশরের ময়দানে সমবেত করা হবে এবং ইহলৌকিক জীবনের বিচার করা হবে। এ বিচারের পর হাশরের মাঠ থেকে ‘পুলসিরাত’ পার হয়ে জান্নাতের দিকে যেতে হবে।

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের কোথাও সরাসরি ‘পুলসিরাত’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়নি। বরং বিভিন্ন জায়গায় শুধু ‘সিরাত’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে, তাকে এটা পার হতে হবে না। এটা তোমার প্রতিপালকের অবধারিত ফয়সালা। তারপর আমি ধর্মভীরুদের নিস্তার দেব এবং অত্যাচারীদের অধঃমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।’ (সূরা মারিয়াম : ৭১-৭২)।

পুলসিরাত সম্পর্কে এক হাদিসে আবু সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, যেখানে আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ,আল্লাহকে দেখা এবং শাফাআতের কথা আলোচিত হয়েছে, সেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘.. তারপর পুল নিয়ে আসা হবে, এবং তা জাহান্নামের উপর স্থাপন করা হবে।

আমরা (সাহাবিরা) বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, পুল’ কি? তিনি বললেন, তা পদস্খলনকারী, পিচ্ছিল, যাতে লোহার হুক ও বর্শি এবং চওড়া ও বাঁকা কাটা থাকবে, যা নাজদের সাদান গাছের কাঁটার মত। মুমিনগণ তার উপর দিয়ে কেউ চোখের পলকে, কেউ বিদ্যুৎগতিতে, কেউ বাতাসের গতিতে, কেউ দ্রুতগামী ঘোড়া ও অন্যান্য বাহনের গতিতে অতিক্রম করবে। কেউ সহিহ সালামতে বেঁচে যাবে, আবার কেউ এমনভাবে পার হয়ে আসবে যে, তার দেহ জাহান্নামের আগুনে জ্বলসে যাবে। এমন কি সর্বশেষ ব্যক্তি টেনে-হেঁচড়ে, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কোনরকম অতিক্রম করবে’। (বুখারি, হাদিস : ৭৪৩৯)

এছাড়া আরও অনেক হাদিসে পুলসিরাতের গুণাগুণ বর্ণিত হয়েছে। হাদিসে বর্ণিত রাসূলের কথার মূল উদ্দেশ্য হলো, পুলসিরাত চুলের চেয়েও সরু, তরবারীর চেয়েও ধারাল, পিচ্ছিল, পদস্থলনকারী, আল্লাহ যাকে প্রতিষ্ঠিত রাখতে চান সে ছাড়া কারো পা তাতে স্থায়ী হবে না। অন্ধকারে তা স্থাপন করা হবে, মানুষকে তাদের ঈমানের পরিমাণ আলো দেয়া হবে, তাদের ঈমান অনুপাতে তারা এর উপর দিয়ে পার হবে। 

পুলসিরাতের রাস্তার দূরত্ব প্রত্যেক ব্যক্তির আমল অনুযায়ী হবে। যার ঈমান ও আমল যত মজবুত ও দৃঢ় হবে তার জন্য পুলসিরাত সেই অনুপাতে হবে।

অর্থাৎ,যার আমল ভালো হবে তার জন্য পুলসিরাত কম ও দ্রুতগতির রাস্তা হিসেবে বিবেচিত হবে আর যার আমল খারাপ তার ততটুকুই বেশি ও মন্থর হবে।

কেউ কেউ বিজলির গতিতে মুহুর্তেই তা পার হয়ে যাবে। কেউ বাতাসের গতিতে পার হবে। কেউ দ্রুতগামী ঘোড়ার গতিতে পাড় হবে। কেউ পায়ে হেঁটে চলার মত। আবার কেউ তা পার হতে পারবে না। বরং জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।