রাসূল সা.-কে আল্লাহ তায়ালা যখন নবুয়ত দিয়েছিলেন তখন আরবের পুরো পরিবেশ ছিল তাওহীদ বিরোধী। ঈসা আ.-এর পর দীর্ঘদিন পৃথিবীতে নবী না থাকায় মানুষ আসমানী শিক্ষা থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করেছিল। আল্লাহকে ছেড়ে বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজায় লিপ্ত ছিল। এমন পরিবেশে আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ সা.-কে নবুয়ত দান করলেন।

সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী একটি পরিবেশে নবুয়তের দায়িত্ব পেয়ে রাসূল সা. কিছুটা শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। কীভাবে, কাকে ইসলামের প্রতি আহ্বান করবেন এ নিয়ে চিন্তিত ছিলেন তিনি। 

এই মুহূর্তে রাসূল সা.-কে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন আম্মাজান হজরত খাদিজা রা.। তিনি নিজেই সবার আগে রাসূল সা.-এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করলেন। এরপর ওয়ারাকা ইবনে নওফেল ও আলী রা. ইসলাম গ্রহণ করেন।

পরিবারভুক্ত এই লোকেরা ইসলাম গ্রহণের পর রাসূল সা. নিজের বন্ধু ও কাছের মানুষদের ইসলামের প্রতি আহ্বান জানালেন। বন্ধুদের ইসলামের দিকে আহ্বানের ক্ষেত্রে তিনি সর্বপ্রথম নিঃস্বার্থ, সুহৃদ, আন্তরিক আবু বকর রা.-কে নির্বাচন করলেন। আল্লাহর রাসূল সা. আবু বকরকে ইসলামের আহ্বান জানানোর সঙ্গে সঙ্গে তিনি কোনো চিন্তা-ভাবনা, দ্বিধা-সংশয় ছাড়াই প্রথম আহ্বানেই ইসলাম গ্রহণ করলেন।

আল্লাহর রাসূল সা. এক হাদিসে বলেছেন, আমি যার কাছেই ইসলামের আহ্বান নিয়ে গেছি, সেই ইসলাম গ্রহণে প্রথমে কিছু না কিছু ইতস্তত করেছে। কিন্তু আবু বকর ইসলাম গ্রহণে এক মুহূর্ত বিলম্ব করেনি।

আবু বকর রা.-এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে— রাসূল সা. নবুয়তপ্রাপ্তির কিছু দিন আগে আবু বকর রা. কোনো এক প্রয়োজনে ইয়েমেনে যান। ইয়েমেন থেকে ফেরার পর তিনি শুনতে পান রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুয়তপ্রাপ্ত হয়েছেন।

তখন তিনি নবীজির বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি আপনার বাপ-দাদার ধর্ম ছেড়ে দিলেন কেন? তিনি তাকে বলেন, হে আবু বকর, আমি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে সমস্ত মানুষের জন্য নবী হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। অতএব তুমি এক আল্লাহ ও আমার নবুয়তের ওপর ঈমান আনো। 

তখন আবু বকর রা. বললেন, তাহলে আর দেরি কেন, আপনার হাতটি বাড়িয়ে দিন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, এক আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং আপনি আল্লাহর রাসুল। আবু বকর রা. বলেন, আমার ইসলাম গ্রহণে রাসূল সা. খুব বেশি আনন্দিত হন। (উসদুল গাবাহ : ৩/২০৮-২০৯)