বাপ-দাদার পাপ, পূণ্যের প্রতিদান সন্তানেরা পাবে?
পূর্ব পুরুষের সহায়-সম্পত্তিতে ভাগ পেয়ে থাকেন পরবর্তী বংশধরেরা। এটাই নিয়ম। সম্পদ ভাগের বিষয়ে কোরআনেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কার ভাগের অংশ কতটুকু হবে এ বিষয়টিও স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
وۡصِیۡكُمُ اللّٰهُ فِیۡۤ اَوۡلَادِكُمۡ ٭ لِلذَّكَرِ مِثۡلُ حَظِّ الۡاُنۡثَیَیۡنِ ۚ فَاِنۡ كُنَّ نِسَآءً فَوۡقَ اثۡنَتَیۡنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ ۚ وَ اِنۡ كَانَتۡ وَاحِدَۃً فَلَهَا النِّصۡفُ ؕ وَ لِاَبَوَیۡهِ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِّنۡهُمَا السُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ اِنۡ كَانَ لَهٗ وَلَدٌ ۚ فَاِنۡ لَّمۡ یَكُنۡ لَّهٗ وَلَدٌ وَّ وَرِثَهٗۤ اَبَوٰهُ فَلِاُمِّهِ الثُّلُثُ ۚ فَاِنۡ كَانَ لَهٗۤ اِخۡوَۃٌ فَلِاُمِّهِ السُّدُسُ مِنۡۢ بَعۡدِ وَصِیَّۃٍ یُّوۡصِیۡ بِهَاۤ اَوۡ دَیۡنٍ ؕ اٰبَآؤُكُمۡ وَ اَبۡنَآؤُكُمۡ لَا تَدۡرُوۡنَ اَیُّهُمۡ اَقۡرَبُ لَكُمۡ نَفۡعًا ؕ فَرِیۡضَۃً مِّنَ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ كَانَ عَلِیۡمًا حَكِیۡمًا
বিজ্ঞাপন
আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন, এক ছেলের জন্য দুই মেয়ের অংশের সমপরিমাণ। তবে যদি তারা দুইয়ের অধিক মেয়ে হয়, তাহলে তাদের জন্য হবে, যা সে রেখে গেছে তার তিন ভাগের দুই ভাগ; আর যদি একজন মেয়ে হয় তখন তার জন্য অর্ধেক। আর তার মাতা পিতা উভয়ের প্রত্যেকের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ সে যা রেখে গেছে তা থেকে, যদি তার সন্তান থাকে।
আর যদি তার সন্তান না থাকে এবং তার ওয়ারিছ হয় তার মাতা পিতা তখন তার মাতার জন্য তিন ভাগের এক ভাগ। আর যদি তার ভাই-বোন থাকে তবে তার মায়ের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ। অসিয়ত পালনের পর, যা দ্বারা সে অসিয়ত করেছে অথবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের মাতা পিতা ও তোমাদের সন্তান-সন্ততিদের মধ্য থেকে তোমাদের উপকারে কে অধিক নিকটবর্তী তা তোমরা জান না। আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা, আয়াত : ১১)
সন্তান বংশ পরম্পরায় বাপ-দাদার সম্পত্তিতে ভাগ পেলেও তাদের নেক আমল বা পাপ সন্তানের কোনো কল্যাণ বা ক্ষতি করতে পারবে না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নেক আমল করবে। একইভাবে বাপ-দাদার কোনো অন্যায় বা পাপের শাস্তিও সন্তানরা ভোগ করবে না, যদি তারা সৎপরায়ণ হয়।
পবিত্র কোরআনে এ বিষয়টি বারবার বিভিন্ন ভঙ্গিতে বর্ণনা করেছে। বিভিন্ন আয়াতে বলা হয়েছে, একজনের বোঝা অন্যজন বহন করবে না’। (সূরা আল-আনআম, আয়াত : ১৬৪)
আরেক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তারা ছিল এমন এক জাতি, যারা অতীত হয়ে গেছে। তারা যা অর্জন করেছে তা তাদের, তোমরা যা অর্জন করেছো তা তোমাদের। আর তারা যা করত সে সম্বন্ধে তোমাদেরকে প্রশ্ন করা হবে না। (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৩৪)
সূরা বনী ইসরাঈলে বর্ণিত হয়েছে, যে সঠিক পথে চলবে সে তার নিজের কল্যাণের জন্যই সঠিক পথে চলবে, আর যে গুমরাহ হবে তার গুমরাহীর পরিণাম তার নিজের উপরেই পড়বে। কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না। আমি ‘আযাব দেই না যতক্ষণ একজন রসূল না পাঠাই। (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত : ১৫)
আরও পড়ুন
এক হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে বনী-হাশেম! এমন যেন না হয় যে, কেয়ামতের দিন অন্যান্য লোকজন নিজ নিজ নেক আমল নিয়ে আসবে আর তোমরা আসবে নেক আমল থেকে উদাসীন হয়ে শুধু বংশ গৌরব নিয়ে এবং আমি বলব যে, আল্লাহর আজাব থেকে আমি তোমাদের বাঁচাতে পারব না। (মুসলিম, হাদিস : ২৫৪৩)
অন্য এক হাদিসে আছে, ‘আমল যাকে পিছনে ফেলে দেয়, বংশ তাকে এগিয়ে নিতে পারে না’। (মুসলিম, হাদিস : ২৬৯৯, আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৫৫)
সাধারণ মানুষ মৃত্যুর সময় সন্তানকে ধন-সম্পদ দিয়ে যেতে চায়। একজন বিত্তশালী ব্যবসায়ী কামনা করে—তার সন্তান মিল-ফ্যাক্টরীর মালিক হোক, আমদানি ও রফতানির বড় বড় লাইসেন্স লাভ করুক, লক্ষ লক্ষ এবং কোটি কোটি টাকার ব্যাংক-ব্যালেন্স গড়ে তুলুক।
একজন চাকরিজীবী চায়—তার সন্তান উচ্চপদ ও মোটা বেতনে চাকরি করুক। অপরদিকে একজন শিল্পপতি মনেপ্রাণে কামনা করে তার সন্তান শিল্পক্ষেত্রে চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন করুক। সে সন্তানকে সারা জীবনের অভিজ্ঞতালব্ধ কলাকৌশল বলে দিতে চায়।
তারা সন্তানদের লালন-পালন ও পার্থিব আরাম-আয়েশের জন্য যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করে এর চাইতে বরং তাদের কার্যকলাপ ও চরিত্র সংশোধনে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। মন্দ পথ ও মন্দ কার্যকলাপ থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা আবশ্যক। এর মাধ্যমেই সন্তানদের প্রতি সত্যিকার ভালবাসা ও প্রকৃত শুভকামনা নিহিত।