সূরা ফাতিহা পবিত্র কোরআনের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সূরা। এ সূরার মাধ্যমেই পবিত্র কোরআন আরম্ভ হয়েছে এবং এই সূরা দিয়েই সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত নামাজ শুরু করা হয়। অবতরণের দিক দিয়েও পূর্ণাঙ্গ সূরা হিসেবে এটিই প্রথম নাজিল হয়। সূরা ‘ইকরা,মুয্যাম্মিল’ ও সূরা মুদ্দাসসিরে’র কয়েকটি আয়াত অবশ্য সূরা আল-ফাতিহার আগে অবতীর্ণ হয়েছে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ সূরা হিসেবে এ সূরাই সর্বপ্রথম অবতরণ হয়েছে। 

এজন্যই এই সূরার নাম ‘ফাতিহাতুল-কিতাব’ বা কোরআনের উপক্রমণিকা রাখা হয়েছে। ‘সূরাতুল ফাতিহা’ একদিক দিয়ে পুরো কোরআনের সারসংক্ষেপ। এ সূরায় পুরো কোরআনের সারমর্ম সংক্ষিপ্তাকারে বলে দেওয়া হয়েছে। 

কোরআনের অবশিষ্ট সূরাগুলো প্রকারান্তরে সূরাতুল ফাতিহারই বিস্তৃত ব্যাখ্যা। কারণ, পুরো কোরআন প্রধানত ঈমান এবং নেক আমলের আলোচনাতেই কেন্দ্রীভূত। আর এ দু’টি মূলনীতিই এ সূরায় সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনা করা হয়েছে। তাই এ সূরাকে সহিহ হাদিসে ‘উম্মুল কোরআন’ ’উম্মুল কিতাব’, ‘কোরআনে আযীম’ বলেও অভিহিত করা হয়েছে। (কুরতুবী) 

এই সূরার প্রথম তিনটি আয়াতে আল্লাহর প্রশংসা এবং শেষের তিনটি আয়াতে মানুষের পক্ষ থেকে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা ও দরখাস্তের বিষয়বস্তু, যা আল্লাহ তায়ালা নিজেই দয়াপরবশ হয়ে মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন । মধ্যের একটি আয়াত প্রশংসা ও দোয়া-মিশ্রিত বিষয়বস্তুর সংমিশ্রণ।

মুসলিম শরিফে হজরত আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূল সা. বলেছেন,...আর যখন বান্দা বলে 

إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ 

তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন যে, এ আয়াতটি আমি এবং আমার বান্দাদের মধ্যে সংযুক্ত। কেননা, এর এক অংশে আমার প্রশংসা এবং অপর অংশে বান্দাদের দোয়াও বর্ণিত হয়েছে। এ সঙ্গে এ কথাও বলা হয়েছে যে, বান্দারা যা চাইবে তারা তা পাবে।

এখানে একটি বিশেষ ধরনের বর্ণনারীতির মাধ্যমে মানুষকে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যে, যখন আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া বা কোনো আকুতি পেশ করতে হয়, তখন প্রথমে তাঁর প্রশংসা কর, তাঁর দেওয়া সীমাহীন নিয়ামতের স্বীকৃতি প্রদান করো। এরপর একমাত্র তিনি ছাড়া অন্য কাউকেও দাতা ও অভাব পূরণকারী মনে করা যাবে না কিংবা অন্য কাউকেই ইবাদতের যোগ্য বলে স্বীকার করা যাবে না। তারপর আল্লাহ তায়ালার কাছে নিজের আবেদন ও আকুতি পেশ করতে হবে। 

এ নিয়মে যে দোয়া করা হয়, তা কবুল হওয়ার ব্যাপারে বিশেষ আশা করা যায়। দোয়া করতেও এমন ব্যাপক পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত যেখানে মানুষের সব ধরনের উদ্দেশ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে। যেমন— সরল পথ লাভ করা এবং দুনিয়ার যাবতীয় কাজে সরল-সঠিক পথ পাওয়া, যেনো কোথাও কোনো ক্ষতি বা পদস্খলনের আশংকা না থাকে।