সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনের জন্য ঘুম অপরিহার্য। ঘুম ছাড়া স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব নয়। ঘুমের ঘাটতি থাকলে কোনো কাজ ঠিকমতো করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন ও স্বাভাবিক জীবনের তাগিদেই মানুষকে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় ঘুমাতে হয়। ঘুমের জন্য উপযুক্ত সময় রাত। রাতের নিরবতা ও আরামদায়ক পরিবেশই মূলত প্রশান্তির ঘুমের জন্য উপযোগী। 

রাতের পরিবেশ ঘুমের জন্যই নির্ধারণ করেছেন আল্লাহ তায়ালা। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, 

وَ هُوَ الَّذِیۡ جَعَلَ لَكُمُ الَّیۡلَ لِبَاسًا وَّ النَّوۡمَ سُبَاتًا وَّ جَعَلَ النَّهَارَ نُشُوۡرًا

আর তিনিই তোমাদের জন্য রাতকে করেছেন আবরণস্বরূপ, বিশ্রামের জন্য তোমাদের দিয়েছেন নিদ্ৰা(১) এবং ছড়িয়ে পড়ার জন্য করেছেন দিন। (সূরা ফুরকান, আয়াত : ৪৭)

ঘুমকে আল্লাহ তায়ালা এমন করেছেন যে, এর ফলে সারাদিনের ক্লান্তি ও শ্রান্তি ছিন্ন তথা দূর হয়ে যায়। চিন্তা ও কল্পনা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে মস্তিষ্ক শান্ত হয়। আর আবরণ ও পোশাক যেমন মানুষের শরীর ঢেকে রাখে, একইভাবে রাতের অন্ধকার মানুষকে লুকিয়ে রাখে এবং ঘুমের উপযুক্ত সময় হিসেবে বিবেচিত হয়।

ঘুমের জন্য রাত উপযুক্ত সময় হলেও বর্তমানে অনেকের মাঝেই রাত জাগার প্রবণতা দেখা যায়। দীর্ঘ রাত জেগে শেষ ভোরের দিকে ঘুমানো অথবা সারা রাত জেগে সকালে ঘুমানো এখন অনেকের নিয়মিত রুটিনের অংশ।  অথচ এতে স্বাস্থ্য ও সুস্থতার ঝুঁকি রয়েছে। এর কারণে মস্তিষ্কেও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

বর্তমান সময়ে মানুষের রাত জাগার প্রবণতা বাড়লেও প্রায় ১৪০০ বছর আগেই রাসূল সা. রাত না জাগার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। এশার পর না ঘুমিয়ে অহেতুক কথাবার্তা বলা তাঁর কাছে অপছন্দীয় ছিল। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমালে স্বাস্থ্য ঝুঁকি যেমন কম থাকে। তেমনি প্রতিদিন সময় মতো জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায়ের সুযোগ পাওয়া যায়। শেষ রাতে একটু আগে ওঠা সম্ভব হলে দু-চার রাকাত তাহাজ্জুদওপড়া যায়।

হজরত আবু বারযা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন-

أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَكْرَهُ النَّوْمَ قَبْل العِشَاءِ وَالحَدِيثَ بَعْدَهَا

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার আগে ঘুমিয়ে এবং এশার পর অহেতুক আলাপচারিতায় লিপ্ত হওয়া অপছন্দ করতেন। -(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৪১)

সুনানে ইবনে মাজাহয় আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

مَا نَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَبْلَ الْعِشَاءِ، وَلَا سَمَرَ بَعْدَهَا

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার আগে ঘুমাতেন না এবং এশার পর আলাপচারিতায় লিপ্ত হতেন না। -(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৭০২)

আলেমরা বলেন, এশার পর বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কিংবা দ্বীনী বা দুনিয়াবী কোনো কল্যাণকর বিষয় ছাড়া অযথা আলাপচারিতায় লিপ্ত হওয়া মাকরূহ। 

এর কারণ সুস্পষ্ট। কারণ, অযথা আলাপচারিতা ও গল্পগুজব করার ফলে যখন রাতের উল্লেখযোগ্য অংশ নষ্ট করে দেওয়া হবে তখন এটি খুবই স্বাভাবিক যে, শেষ রাতে ওঠা এ ব্যক্তির পক্ষে কষ্টকর হবে; বরং প্রবল আশঙ্কা রয়েছে ফজরের নামাজই কাজা হয়ে যাবে। এ ছাড়াও রাত জাগার কারণে দিনের বেলা অলসতা ভর করে। তাই পূর্ণ উদ্যমের সাথে ধর্মীয়-দুনিয়াবী দায়-দায়িত্ব পালন ও কাজকর্ম যথাযথভাবে পালন করাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। রাত মুমিনের জীবনে অতি মূল্যবান। শেষ রাতের কান্নাকাটি, তাওবা ইস্তিগফার, জিকির আজকার দু-চার রাকাত নামাজ আল্লাহ তায়ালার কাছে খুবই প্রিয়।