যে কারণে শবে কদর এত বেশি মর্যাদাপূর্ণ

পবিত্র কোরআন বিশ্বমানবতার জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। কোরআনের সব বিধি-বিধান আর রাসুল (সা.) তার জীবদ্দশায় বাস্তবে অনুসরণ করেছেন। ফলে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হওয়া সমগ্র মানবজাতির জন্য এক বড় নিয়ামত।

কোরআন নাজিলের বিষয়ে আমরা অনেকে জানি, আবার অনেকে হয়তো জানি না। যদিও মুসলিম হিসেবে প্রত্যেকের জানা উচিত। তবু অবতীর্ণের বিষয়ে এখানে কোরআনের কিছু আয়াত উল্লেখ করা হলো—

কোরআন নাজিলের রাত

আল্লাহ তাআলা কোরআন নাজিল হওয়ার বিষয়টি পবিত্র কোরআনেই বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘আমি একে নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।’ (সুরা : দুখান, আয়াত : ৩-৪)

এ দুইটি আয়াত থেকে জানা যায়, কোরআন এক বরকতময় রাতে অবতীর্ণ হয়েছে এবং এ রাতেই প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা হয়। মহান আল্লাহ কোরআনের অন্যত্র বর্ণনা করেছেন, ‘রমজান মাসই হলো সেই মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য বিধানকারী।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

এখন আমরা একটি আয়াতের অর্থ অনুধাবন করলেই দেখতে পাব যে আল্লাহ সুনির্দিষ্টভাবে কোরআনেই এর নাজিলের সময় সম্পর্কে বলেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আমি একে নাজিল করেছি শবেকদরে।’ (সুরা কদর, আয়াত : ০১)

অর্থাৎ লাইলাতুল কদরেই পবিত্র কোরআন নাজিল করা হয়েছে। কদরের অর্থ হলো সর্বোত্কৃষ্ট, মহান ও সম্মান। এ জন্য একে ‘মহিমান্বিত’ রাত বলা হয়।

হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ

মহান আল্লাহ শবেকদরের ফজিলত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনেই বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘শবে কদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।’ (সুরা : কদর, আয়াত : ৩-৫)

সুরা কদর নাজিলের প্রেক্ষাপট

ইবনে আবি হাতেম (রহ.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) একদিন বনি ইসরাঈলের একজন মুজাহিদ সম্পর্কে আলোচনা করেন। ওই মুজাহিদ এক হাজার মাস পর্যন্ত অস্ত্র সংবরণ ছাড়া জিহাদে নিয়োজিত থাকত। তাফসিরবিদ ইবনে জারির (রহ.) বর্ণনা করেন, বনি ইসরাঈলের এক ব্যক্তি সারা রাত ইবাদতে মশগুল থাকত এবং সারা দিন জিহাদে নিয়োজিত থাকত। সে এক হাজার মাস এভাবে অতিবাহিত করে। মুসলমানরা তার এ ধরনের ইবাদতের কথা শুনে বিস্মিত হলো।

এই পরিপ্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ সুরা কদর নাজিল করেন। আল্লাহ এ রাতের ইবাদতকে শুধু উম্মতে মুহাম্মদির জন্য এক হাজার রাতের ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। যা শুধু উম্মতে মুহাম্মদিরই এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

যে কারণে শবে কদর অতি বরকতময়

কোরআন শবে কদরে নাজিল করা হয়েছে— এর অর্থ এই যে লওহে মাহফুজ থেকে সমগ্র কোরআন দুনিয়ার আকাশে এ রাতেই নাজিল করা হয়েছে। অতঃপর রাসুল (সা.)-এর নবুয়তি জীবনের ২৩ বছরে অল্প অল্প করে তা নাজিল করা হয়েছে। এ রাতকে মোবারক বলার কারণ হলো—এ রাতে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অসংখ্য কল্যাণ ও বরকত নাজিল হয়।

এছাড়াও এ রাতে প্রতিটি প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা আল্লাহ করে থাকেন। এ রাত শুধুই কল্যাণময় ও মঙ্গলময়। এ রাতে ফেরেশতারা আল্লাহর নির্দেশে শান্তি ও কল্যাণ নিয়ে দুনিয়াতে আগমন করেন এবং প্রার্থনারত সব নারী-পুরুষের রহমতের জন্য দোয়া করেন। যা ফজর পর্যন্ত  বলবৎ থাকে। হাদিসে লাইলাতুল কদরের বিষয়ে বহু বর্ণনা রয়েছে।

তাকদিরসংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ের ফয়সালা শবে কদরেই হয়— যা পরবর্তী শবে কদর পর্যন্ত এক বছরে সংঘটিত হবে। অর্থাৎ এ রাতেই প্রত্যেক মানুষের বয়স, মৃত্যু ও রিজিক ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ের ফয়সালা হয়। এর অর্থ এই যে আল্লাহকর্তৃক নির্ধারিত তাকদিরে আগে নির্ধারিত সব ফয়সালা এ রাতে ফেরেশতাদের কাছে অর্পণ করা হয়। কারণ কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনা সাক্ষ্য দেয়— যে আল্লাহ তাআলা সব ফয়সালা মানুষের সৃষ্টিলগ্নেই লিখে দিয়েছেন। এ রাতে ফেরেশতাদের মাধ্যমে যাবতীয় বিধান প্রয়োগ করা হয়।

আল্লাহ আমাদের শবে কদর লাভের ও সৌভাগ্য অর্জনের তাওফিক দান করুন।