প্রতীকী ছবি

পৃথিবীতে শিরক বা খোদাদ্রোহীতা শুরু করেছিল হজরত নূহ আ.-এর জাতি। তাদের আগে সবাই আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করতো। তার জাতির মাঝে খোদাদ্রোহীতা শুরু হয়েছিল সমাজের গণ্য মান্যদের অতিরিক্ত ভক্তি-তোষামোদি দেখানোর মাধ্যমে।

হজরত নুহ আ. এর জাতির পাঁচজন নেককার লোক ছিলেন। তাদের মানুষ হেদায়াতের পথ খুঁজে পেত। নেককাজে আগ্রহ পেত। 

তাদের ইন্তেকালের পর লোকেরা আফসোস করতে লাগল এবং বলতে লাগল- আমরা এখন কার কাছে গিয়ে হেদায়াতের কথা শুনব? এর মধ্যে শয়তান তাদের অন্তরে এ কথার উদয় করে দিলো যে, ওই বুজুর্গ ব্যক্তিরা তো চলে গেছেন; এখন উত্তম পন্থা হলো তাদের মূর্তি বানিয়ে ইবাদতখানায় রেখে দাও, তাতে তোমরা ইবাদতে স্বাদ পাবে।

কথামতো তারা তাদের বুজুর্গ ব্যক্তিদের মূর্তি বানিয়ে তাদের ইবাদতখানায় রেখে দিলো। পরবর্তী প্রজন্ম এই মূর্তিগুলোকে অন্যান্য বস্তু থেকে পৃথকভাবে অনেক বেশি সম্মান প্রদর্শন করত।

তৃতীয় প্রজন্ম এসে ওই মূর্তিগুলোর পূজা শুরু করে দিলো। এভাবেই পর্যায়ক্রমে মূর্তিপূজার প্রচলনের মাধ্যমে শিরকের প্রচলন হয়েছে।

নূহ আ. তার সম্প্রদায়কে এইসব শিরক ও খোদাদ্রোহীতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। কিন্তু তারা অবাধ্যতা থেকে এলো না। তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের বন্যার মাধ্যমে ধ্বংস করে দিলেন। নূহ আ. ও সৎ ব্যক্তিদের রক্ষা করলেন নৌকার মাধ্যমে বিশেষ অনুগ্রহে।  

আল্লাহ তায়ালা নূহ আ.-এর জাতির যে লোকদের ধ্বংস করেছিলেন তাদের মাঝে তার নিজের এক ছেলেও ছিল। সে আল্লাহর ইবাদত ছেড়ে অবাধ্যতায় লিপ্ত হওয়ার কারণে আল্লাহ তাকেও ডুবিয়ে মারেন। কিন্তু কেনানা নবীর নিজের সন্তান হওয়ায় তার প্রতি নবীর মায়া জন্মেছিল এবং তাকে রক্ষা করতে তিনি আল্লাহর কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা নূহ আ.-কে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, আপনার সন্তান নেক লোকদের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই আল্লাহ তাকে রক্ষা করবেন না। 

এ বিষয়টি পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে এভাবে—


نَادَى نُوحٌ ابْنَهُ وَكَانَ فِي مَعْزِلٍ يَا بُنَيَّ ارْكَب مَّعَنَا وَلاَ تَكُن مَّعَ الْكَافِرِينَ، قَالَ سَآوِي إِلَى جَبَلٍ يَعْصِمُنِي مِنَ الْمَاء قَالَ لاَ عَاصِمَ الْيَوْمَ مِنْ أَمْرِ اللهِ إِلاَّ مَن رَّحِمَ وَحَالَ بَيْنَهُمَا الْمَوْجُ فَكَانَ مِنَ الْمُغْرَقِينَ، وَقِيلَ يَا أَرْضُ ابْلَعِي مَاءَكِ وَيَا سَمَاء أَقْلِعِي وَغِيْضَ الْمَاء وَقُضِيَ الأَمْرُ وَاسْتَوَتْ عَلَى الْجُودِيِّ وَقِيلَ بُعْداً لِّلْقَوْمِ الظَّالِمِينَ، وَنَادَى نُوحٌ رَّبَّهُ فَقَالَ رَبِّ إِنَّ ابُنِي مِنْ أَهْلِي وَإِنَّ وَعْدَكَ الْحَقُّ وَأَنتَ أَحْكَمُ الْحَاكِمِينَ، قَالَ يَا نُوْحُ إِنَّهُ لَيْسَ مِنْ أَهْلِكَ إِنَّهُ عَمَلٌ غَيْرُ صَالِحٍ فَلاَ تَسْأَلْنِ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنِّي أَعِظُكَ أَن تَكُونَ مِنَ الْجَاهِلِينَ، قَالَ رَبِّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَسْأَلَكَ مَا لَيْسَ لِي بِهِ عِلْمٌ وَإِلاَّ تَغْفِرْ لِي وَتَرْحَمْنِي أَكُن مِّنَ الْخَاسِرِينَ،

নূহ তার পুত্রকে ডাক দিল- যখন সে দূরে ছিল, হে ছেলে! আমাদের সাথে আরোহণ কর, কাফেরদের সাথে থেকো না’। ‘সে বলল, অচিরেই আমি কোন পাহাড়ে আশ্রয় নেব। যা আমাকে প্লাবনের পানি হ’তে রক্ষা করবে’। 

নূহ বলল, ‘আজকের দিনে আল্লাহর হুকুম থেকে কারু রক্ষা নেই, একমাত্র তিনি যাকে দয়া করবেন সে ব্যতীত। এমন সময় পিতা-পুত্র উভয়ের মাঝে বড় একটা ঢেউ এসে আড়াল করল এবং সে ডুবে গেল’। 

অতঃপর নির্দেশ দেওয়া হল, হে পৃথিবী! তোমার পানি গিলে ফেল (অর্থাৎ হে প্লাবনের পানি! নেমে যাও)। হে আকাশ! ক্ষান্ত হও (অর্থাৎ তোমার বিরামহীন বৃষ্টি বন্ধ কর)। অতঃপর পানি হরাস পেল ও গযব শেষ হল। ওদিকে জূদী পাহাড়ে গিয়ে নৌকা ভিড়ল এবং ঘোষণা করা হল, যালেমরা নিপাত যাও’ । 

এ সময় নূহ তার প্রভুকে ডেকে বলল, হে আমার পালনকর্তা! আমার পুত্র তো আমার পরিবারের অন্তর্ভুক্ত, আর তোমার ওয়াদাও নিঃসন্দেহে সত্য, আর তুমিই সর্বাপেক্ষা বিজ্ঞ ফায়সালাকারী। 

আল্লাহ বললেন, হে নূহ! নিশ্চয়ই সে তোমার পরিবারভুক্ত নয়। নিশ্চয়ই সে দুরাচার। তুমি আমার নিকটে এমন বিষয়ে আবেদন কর না, যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই। আমি তোমাকে সতর্ক করে দিচ্ছি যেন জাহিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। 

নূহ বলল, হে আমার পালনকর্তা! আমার অজানা বিষয়ে আবেদন করা হতে আমি তোমার কাছে পানাহ চাচ্ছি। তুমি যদি আমাকে ক্ষমা না কর ও অনুগ্রহ না কর, তাহ’লে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। ( সূরা হুদ, আয়াত ৪২-৪৭)।