দুর্নীতি ও অন্যের অর্থ আত্মসাতের শাস্তি
‘দুর্নীতি’ শব্দটির সঙ্গে কমবেশি সকলেই পরিচিত। দুর্নীতির বিভিন্ন রকম সংজ্ঞা রয়েছে। ইংরেজিতে দুর্নীতিকে বলা হয় Corruption। দার্শনিক ধর্মতাত্ত্বিক নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো আদর্শের নৈতিক বা আধ্যাত্মিক অসাধুতা বা বিচ্যুতি নির্দেশ করাকে দুর্নীতি বলা হয়ে থাকে।
দুর্নীতি শব্দটি যখন বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তখন সাংস্কৃতিক অর্থে ‘সমূলে বিনষ্ট হওয়াকে নির্দেশ করে।’ দুর্নীতি শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল, পরে দার্শনিক সিমারো। তাদের মতে, যিনি ঘুষ এবং সৎ অভ্যাস ত্যাগ করে অর্থ রোজগার করেন, সেটিই দুর্নীতি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মরিসের মতে, ‘দুর্নীতি হলো ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ব্যবহার।’
বিজ্ঞাপন
দেশে-বিদেশে দুর্নীতি হয়ে থাকে। একেক দেশের দুর্নীতি একেক রকম। কমবেশি পৃথিবীর সকল দেশেই দুর্নীতি হয়ে থাকে। মানব জাতির এটা একটা মজ্জাগত দোষ বা সহজাত প্রবৃত্তিও বটে। প্রতিবছর আন্তর্জাতিক জরিপ ও গবেষণায় দুর্নীতি মেধানুসারে একটা তালিকা করা হয়। এ তালিকায় বাংলাদেশের নামটি প্রথম কাতারেই থাকে।
দুর্নীতি থেকে দেশ, দেশের জনগণ সবার বেঁচে থাকা জরুরি। দুর্নীতি মুক্ত হতে না পারলে পৃথিবীতে মানুষের কাছে অপমান হতে হবে একইসঙ্গে পরকালে আল্লাহ তায়ালার কাছে জববাদিহিতা করতে হবে।
আরও পড়ুন
দুর্নীতিবাজদের সর্তক করতে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আর তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না, এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনে-বুঝে অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে বিচারকদের কাছে পেশ কোরো না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৮)
এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘আমি যাকে তোমাদের কোনো কাজের দায়িত্বশীল করি, এরপর সে সুই পরিমাণ বস্তু বা তার চেয়ে বেশি সম্পদ আত্মসাৎ করল, সেটাই হবে খেয়ানত। কিয়ামতের দিন সেই বস্তু নিয়ে সে উপস্থিত হবে।’ (মুসলিম, হাদিস ১৮৩৩)
অপর হাদিসে আব্দুল্লাহ ইবনে আস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতাকে অভিসম্পাত করেছেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৫৮০)
আরেক হাদিসে কাব ইবনে মালেক আল-আনসারি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছাগলের পালে ছেড়ে দেওয়া হলে পরে তা যতটুকু না ক্ষতিসাধন করে, কারো সম্পদ ও প্রতিপত্তির লোভ এর চেয়ে বেশি ক্ষতিসাধন করে তার ধর্মের।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৭৬)