শবে কদরে যে আমল করবেন
‘শবে কদর’ বা ‘লাইলাতুল কদর’। বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ রাত। ২৬ রমজান শেষে যে রাত আসে— তা আমাদের দেশে কদরের রাত হিসেবে পরিচিত। যদিও এই রাত শবে কদর হওয়ার নিশ্চিত কোনো আলামত নেই। তবুও এই রাতের ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম ও হাদিসবিশারদদের বিভিন্ন মত থাকার কারণে অবহেলা করারও কোনো সুযোগ নেই।
২৭ রমজান কি শবে কদর?
বিজ্ঞাপন
শবে কদর শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতেই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। শবে কদর সম্পর্কে সর্বাধিক বিশুদ্ধ ও বিতর্কমুক্ত অভিমত এটিই। তাই শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে অবহেলা উচিত নয়। কিন্তু এরপরও কারো জন্য ইবাদত করা সম্ভব হলেও ২৭তম রাতে কিছুতেই উদাসীন থাকা কাম্য নয়।
সুতরাং এই রাতের ফজিলত লাভে সচেষ্ট হওয়া প্রত্যেকের কর্তব্য। অন্তত এশা ও ফজরের নামাজ যদি জামাতের সঙ্গে আদায় করা যায়, তবুও সারারাত নামাজ পড়ার সমান সওয়াব পাওয়া যাবে।
অন্তত যে আমল করা উচিত
বিশেষ করে ওই দিন মাগরিব ও এশার নামাজ মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে আদায় করা উচিত। তাহলে হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী শবে কদরের ফজিলত লাভ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এশা ও ফজর জামাতের সঙ্গে পড়ে, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৫৬)
প্রসঙ্গত, কেউ কেউ বলে থাকেন যে, ২৭ তম রমজানকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া অবৈধ কিংবা বিদআত! অথচ ২৭তম রাতের পক্ষে হাদিস এসেছে। আবার সাহাবায়ে কেরামদের আমলও রয়েছে। শুবা (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উবাই ইবনে কাব (রা.) শবেকদরের রাত্রিতে বলেন, ‘আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি তা সম্পর্কে অবগত আছি। (আর তা হলো ২৭তম রাত্রি) কেননা রাসুল (সা.) এ রাতে আমাদের নামাজে দাঁড়াতে আদেশ করতেন। (মুসলিম, হাদিস : ৭৬২)
অনুরূপ মুয়াবিয়া (রা.), আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), হাসান (রা.) ও আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.)-ও ধারণা করতেন বলে তাফসিরের বিখ্যাত গ্রন্থ কুরতুবিতে উল্লেখ রয়েছে।
শবে কদরে আরও যে আমল করতে পারেন
দুই ব্যক্তি বা পরিবারের মধ্যকার ঝগড়াবিবাদ মিটিয়ে দেওয়া শবেকদরের অন্যতম ইবাদত। উবাদা ইবনে সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসুল (সা.) ‘লাইলাতুল ক্দর’ এর ব্যাপারে খবর দিতে বের হলেন। এ সময় দু্ইজন মুসলমান ঝগড়া করছিলেন। তখন নবী কারিম (সা.) বললেন, ‘আমি আপনাদের ‘লাইলাতুল কদর’ এর ব্যাপারে অবহিত করতে বের হয়েছিলাম। কিন্তু অমুক অমুক ব্যক্তি বিবাদে লিপ্ত হওয়ায় তা (সেই জ্ঞান) উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। আশা করি, উঠিয়ে নেওয়াটা আপনাদের জন্য বেশি ভালো হয়েছে। আপনারা সপ্তম (২৭ তম), নবম (২৯ তম) এবং পঞ্চম (২৫ তম) তারিখে এর সন্ধান করুন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৯)
উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- হে আল্লাহর রাসুল, আমি যদি জানতে পারি যে, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর— তাহলে তখন কোন দোয়া পড়বো? তখন তিনি বললেন, তুমি বলো—
اللَّهمَّ إنَّك عفُوٌّ كريمٌ تُحِبُّ العفْوَ، فاعْفُ عنِّي
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিম; তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি।
অর্থ : হে আল্লাহ, আপনি মহানুভব ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫১৩)