প্রতীকী ছবি

ধর্মবর্ণের বৈচিত্র্য মিলেই এই পৃথিবী। পৃথিবীর সূচনালগ্নে সবাই এক ধর্মের অনুসারি হলেও ধীরে ধীরে মানুষ আল্লাহর একত্ববাদ থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। বিভিন্ন দল, উপদলে ভাগ হয়ে যায়। প্রাকৃতিক ও ভৌগলিক অবস্থানের কারণে ভিন্ন ভিন্ন পরিচয় লাভ করে।

জাতি সত্ত্বার বিচারে ভিন্ন ভিন্ন পরিচয় থাকলেও পৃথিবীতে সবার একসঙ্গে মিলেমিশে বসবাসের অধিকার রয়েছে। প্রত্যেক ধর্ম-বর্ণ, জাতির মানুষদের মিলেমিশে একসঙ্গে বসবাস নিশ্চিত করা জরুরি। এ নিয়ে বিশেষ মানবাধিকার আইন রয়েছে। একইসঙ্গে আছে ধর্মীয় বিধান ও নির্দেশনা।

অমুসলিমদের সঙ্গে একইসঙ্গে মিলেমিশে তাদের জান-মালের নিরাপত্তা দানের অনন্য দৃষ্টান স্থাপন করেছিলেন ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি মদিনা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় সেখানে অবস্থিত অমুসলিম ইহুদিদের সঙ্গে ১২ দফা চুক্তি করেছিলেন। সেই চুক্তির অন্যতম ধারা ছিল— ইহুদি ও মুসলমানরা নিজ নিজ দ্বিনের ওপর আমল করবে এবং সবাই পরস্পরের কল্যাণ কামনা করবে।

রাসূল সা.-এর সেই চুক্তি দেড় হাজার বছর পরেও পুরো বিশ্বের মুসলমানদের জন্য অনুসরণীয়-অনুকরণীয়। ইসলামী সমাজ ও মুসলিম রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহুর এই নীতি মানা অবশ্যক। এই নীতির অনুসরণ ছাড়া মুসলিমদের নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় দেওয়া সম্ভব নয়।

আল্লাহর রাসূল সা. প্রকৃত মুসলিমের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে সে ব্যক্তিই প্রকৃত মুসলিম। আর যাকে মানুষ তাদের জান ও মালের জন্য নিরাপদ মনে করে সে-ই প্রকৃত মুমিন। (মিশকাত, হাদিস : ৫৪৯)

বর্তমান বিশ্বে মুসলমানদের ‘আত্মপরিচয়’ যথেষ্ট সংকটের মুখে বলা যেতে পারে। বিভিন্ন অমুসলিম রাষ্ট্রে মুসলিমদের নির্যাতনের চিত্র দেখা গেলেও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে দেখা মেলে ভিন্ন চিত্র। এখানে মুসলিমরা নিজ নিজ দলীয় কোন্দোল, স্বার্থের জন্য এতোটা মরিয়া হয়ে উঠে যে, একজন অপরের জাত শত্রুতে পরিণত হয়। নিজ ধর্মের মানুষদের সঙ্গে যাচাই-বাছাই ছাড়াই চলে হামলা-আক্রমণ। প্রতিহিংসার আগুনে পুড়ে নিজেদের সঙ্গেই তারা এমন সব সহিংস ঘটনার জন্ম দেয় যা অনেক সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গকেও ছাড়িয়ে যায়। প্রতিহিংসার আগুনে পুড়তে হয় অনেক অমুলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে। 

সহিংসতা, নৈরাজ্য, মুসলিম-অমুসলিম কারো ক্ষেত্রেই কাম্য নয়, তবে যেকোনো কারণে অমুসলিমদের ওপর নির্যাতন, জিঘাংসা মেটানোর প্রক্রিয়া মুসলিম ব্যক্তিত্ব বা পরিচয় কোনোটার জন্যই সুখকর নয়। প্রচার মাধ্যমগুলোতে এসব মুসলিমদের নেতিবাচকভাবেই উপস্থাপন করে। তাই অনিচ্ছায় বা ইচ্ছায় অমুসলিম, সংখ্যালঘুদের ওপর যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর আচরণ থেকে বিরত থাকা উচিত। কখনো জুলমকারী হিসেবে নিজেকে উপস্থান করা কাম্য নয়। এসব একজন মুসলিমকে তার কাঙ্খিত পরকালের সুখ, চির শান্তির জান্নাত থেকে দূর সরিয়ে দেয়।

এক হাদিসে আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করল, সে জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না, অথচ তার সুগন্ধ ৪০ বছরের রাস্তার দূরত্ব থেকেও পাওয়া যায়।’(বুখারি, হাদিস : ২৯৯৫)