ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়া নিহত হয়েছেন। আন্তার্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে তাঁর মৃত্যুর খবর প্রকাশের পর শোক ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে। আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন অনেকেই। তাঁকে বর্তমান যুগের সালাহুদ্দীন আইয়ূবী বলেও অভিহিত করেছেন কোনো কোনো সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী। 

ইন্তেকালের পর ইসমাইল হানিয়ার কোরআন তিলাওয়াতের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। যেখানে তিনি নামাজের ইমামতি করছিলেন এবং আল্লাহর রাস্তায় জীবন বিলিয়ে দেওয়া শহীদদের মর্যাদা সম্পর্কিত একটি আয়াত তিলাওয়াত করছিলেন।

আল জাজিরা আরবির ফিলিস্তিন ভার্সনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজ থেকেও ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছে। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে— ‘ফিলিস্তিনের গাজায় একটি মসজিদে হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়ার কণ্ঠে কোরআন তিলাওয়াত। যিনি আজ সকালে তেহরানে নিহত হয়েছেন'। 

ইসমাইল হানিয়ার ভাইরাল তিলাওয়াতের দৃশ্যটিতে তিনি যে আয়াতটি তিলাওয়াত করছিলেন তা ইসলামের জন্য শহীদদের মৃত্যু পরবর্তী জীবন ও মর্যাদা সম্পর্কিত। আয়াতে বলা হয়েছে—

وَ لَا تَحۡسَبَنَّ الَّذِیۡنَ قُتِلُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ اَمۡوَاتًا ؕ بَلۡ اَحۡیَآءٌ عِنۡدَ رَبِّهِمۡ یُرۡزَقُوۡنَ فَرِحِیۡنَ بِمَاۤ اٰتٰهُمُ اللّٰهُ مِنۡ یَسۡتَبۡشِرُوۡنَ بِنِعۡمَۃٍ مِّنَ اللّٰهِ وَ فَضۡلٍ ۙ وَّ اَنَّ اللّٰهَ لَا یُضِیۡعُ اَجۡرَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَفَضۡلِهٖ ۙ وَ یَسۡتَبۡشِرُوۡنَ بِالَّذِیۡنَ لَمۡ یَلۡحَقُوۡا بِهِمۡ مِّنۡ خَلۡفِهِمۡ ۙ اَلَّا خَوۡفٌ عَلَیۡهِمۡ وَ لَا هُمۡ یَحۡزَنُوۡنَ 

আর যারা আল্লাহর পথে জীবন দিয়েছে, তাদেরকে তুমি মৃত মনে করো না, বরং তারা তাদের রবের নিকট জীবিত। তাদেরকে রিজিক দেওয়া হয়। আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে যা দিয়েছেন তা লাভ করে তারা আনন্দিত আর যে সব ঈমানদার লোক তাদের পেছনে (পৃথিবীতে) রয়ে গেছে, এখনও তাদের সাথে এসে মিলিত হয়নি, তাদের কোন ভয় ও চিন্তা নেই জেনে তারা আনন্দিত। তারা আল্লাহর কাছ থেকে অনুগ্রহ ও নিয়ামত লাভ করার কারণে আনন্দিত হয়; আর এ জন্য যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না। (সূরা আল ইমরান, আয়াত : ১৬৯-১৭০)

প্রসঙ্গত, ইরানের রাজধানী তেহরানে আবাসস্থলে গুপ্তহত্যার শিকার হন ইসমাইল হানিয়া। হামলায় হানিয়ার এক দেহরক্ষীও নিহত হয়েছেন।

ইসমাইল হানিয়া হামাসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। গত শতকের আশির দশকের শেষ দিকে প্রতিষ্ঠিত হয় এই গোষ্ঠীটি। 

২০০৬ সালে ফিলিস্তিনের জাতীয় নির্বাচনে গাজায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে হামাস। তার পুরষ্কার হিসেবে হানিয়াকে ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। কিন্তু তার কিছু দিন পরেই গাজায় হামাস ও ফাতাহের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাত শুরু হলে হানিয়াকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেন আব্বাস। 

২০১৭ সালে হামাসের রাজনৈতিক বিভাগের প্রধান হন হানিয়া। তার পরের বছরই তাকে ‘সন্ত্রাসী’ তকমা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। এই ঘোষণার পর গাজা ছেড়ে কাতারে চলে যান হানিয়া। গত কয়েক বছর সেখানেই বসবাস করছিলেন তিনি।