আবু আব্দুল্লাহ বিলাল। বাবার নাম রাবাহ, মায়ের নাম হামামাহ। মক্কায় জন্ম হলেও হাবশী বংশোদ্ভুত ক্রীতদাস ছিলেন তিনি। বনু জুমাহা ছিল তাদের মনিব।

হাবশী দাস হিসেবে তাঁর বাহ্যিক রং কালো হলেও অন্তর ছিল দারুণ স্বচ্ছ। আরবের গৌরবর্ণের লোকেরা যখন আভিজাত্য ও কৌলিণ্যের বিভ্রান্তিতে লিপ্ত হয়ে হকের দাওয়াত অস্বীকার করেছিলেন, তখন তাঁর হৃদয় ঈমানের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল। রাসূল সা.-এর ইসলামের আহ্বানের প্রথম দিনগুলোতে যে সব ব্যক্তি প্রকাশ্যে মুসলমান হওয়ার ঘোষণার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন তিনি ছিলেন তাঁদের অন্যতম।

সামাজিক অবস্থানের কারণে ইসলাম গ্রহণের কথা ঘোষণার পর তার ওপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। ইসলাম গ্রহণের শাস্তি হিসেবে মক্কার কাফেররা তাঁকে মরুভূমির উত্তপ্ত বালু, পাথরকুচি ও জ্বলন্ত অঙ্গারের ওপর শুইয়ে দেওয়া হতো। গলায় রশি বেঁধে ছাগলের মতো মক্কার অলিতে-গলিতে তাঁকে টেনে নিয়ে বেড়াতো শিশুরা। তবুও তাওহীদের শক্ত রশি হাত ছাড়া করেননি তিনি।

আবু জাহেল তাঁকে উপুড় করে শুইয়ে দিয়ে পিঠের ওপর পাথরের বড় চাক্কি রেখে দিতো। দুপুরে সূর্যের প্রচণ্ড তাপে যখন অস্থির হয়ে উঠতেন, তখন আবু জাহেল বলতো— বেলাল, এখনো সময় আছে, মুহাম্মদের আল্লাহ থেকে ফিরে আসো। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে আহাদ আহাদ বলে উঠতেন।

অত্যাচারী মুশরিকদের মধ্যে উমাইয়্যা ইবনে খালাফ ছিল সর্বাধিক উৎসাহী। সে শাস্তি ও যন্ত্রণার নিত্য নতুন কলা-কৌশল প্রয়োগ করতো। নানা রকম পদ্ধতিতে কষ্ট দিতো। কখনো গরুর কাঁচা চামড়ায় ভরে, কখনো লোহার বর্ম পরিয়ে উত্তপ্ত রোদে বসিয়ে বলতো, বলো, তোমার আল্লাহ লাত-উযযাহ। কিন্তু তখনো তিনি মুখে শুধু আহাদ আহাদ বলে যেতেন।

প্রভাবে প্রতিদিন তাঁর ওপর নির্যাতন চালাতো মক্কার মুশরিকেরা। একদিন আবু বকর রা. তাঁর ওপর চলা এই অত্যাচার দেখে মর্মাহত হলেন এবং তাঁকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে গোলাম থেকে আজাদ করলেন।

মক্কায় হিজতের আগ পর্যন্ত ইসলাম দুর্বল ছিল। হিজরতের পর মদিনায় সবল হয়। মদিনা থেকেই ইসলামি আচার-আচরণ ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মূল ভিত্তি স্থপান শুরু হয়। মসজিদ প্রতিষ্ঠা, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, নামাজের জন্য আজানের প্রচলন হয়। হজরত বিলাল রা. ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেন। তাঁর আজানের ধ্বনি, নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, তরুণ-যুবক সবাইকে আকৃষ্ট করতো।

মদিনার বাইরেও বিভিন্ন সফরে তিনি রাসূল সা.-এর মুয়াজ্জিন ছিলেন। ইসলামের প্রধান প্রধান সব যুদ্ধেই তিনি অংশ গ্রহণ করেছিলেন। বদর যুদ্ধে তিনি ইসলামের চির শত্রু উমাইয়্যা ইবনে খালফকে হত্যা করেন।

মক্কা বিজয়ের দিনে রাসূল সা.-এর সঙ্গী ছিলেন এবং রাসূল সা.-এর সঙ্গে কাবার ভেতরে প্রবেশের সৌভাগ্য লাভ করেন।

তিনি হিজরি ২০ সালে ৬০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তাঁর বিশেষ আমল ছিল সবসময় অজু অবস্থায় থাকা। তাঁর এই আমলটি আল্লাহর রাসূল সা. অনেক পছন্দ করেছিলেন। মুসলমানদের জন্যও এ আমল অনুসরণীয়। এ আমলের কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতে ভ্রমণের সময় বেলাল রা.-এর জুতার শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন। 

হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত বেলালকে রা.-কে বললেন, তোমার সর্বোত্তম আমল সম্পর্কে আমাকে বলো, আমি জান্নাতে তোমার জুতার শব্দ শুনতে পেয়েছি। বেলাল রা. বললেন, আমার সর্বোত্তম আমল হলো, আমি রাতে ও দিনে অজু অবস্থায় থাকি। আর যখনই অজু করি তখনই সাধ্যমতো নামাজ আদায় করি।’ (কানজুল উম্মাল : ৩৫৪৫৪)