ভুল, পদস্খলন, বিষয়গুলো মানুষের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। পৃথিবীতে মানুষের আগমনের সূচনা একটি ভুল থেকেই। 

আল্লাহ তায়ালা আদম আ. ও হাওয়া আ.-কে জান্নাতে বিচরণের নির্দেশ দিয়ে বললেন, তোমরা এখানে ঘুরে বেড়াও, চিত্ত-বিনোদন করো, কিন্তু এই গাছটির নিকটবর্তী হয়ো না।

আল্লাহর আদেশ মেনে চলছিলেন তারা। কিন্তু হঠাৎ একদিন অভিশপ্ত শয়তানের প্ররোচনায় ভুল করে বসলেন। গেলেন সেই গাছের নিচে, খেলেন তার ফল। আল্লাহ তাদের জান্নাত থেকে বের করে দিলেন, ক্ষমার পরে পৃথিবীতে পাঠালেন নিজের প্রতিনিধি হিসেবে।

পৃথিবীতে তাদের মাধ্যমে মানুষের বংশ বিস্তার হলো। তারা হলেন আদি-পিতা ও আদি-মাতা। ধীরে ধীরে আবার ভুল করতে শুরু করলো। আল্লাহর একত্ববাদ ভুলে শিরক, সমূহ অন্যায়ে জড়িয়ে পড়লো। লোভ-পাপ, ক্ষমতা, আধিপত্যের জেরে মানুষকে হত্যা করতে শুরু করলো। আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তি তালিকায় নিজের নাম লিখিয়ে ফেললো। 

এতোসবের মাঝেও ভুল বুঝতে পেরে প্রায়শ্চিত্তের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করলে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে ক্ষমা করে দেন।

আল্লাহ তায়ালা মানুষের সব পাপ ক্ষমা করে দেন। কখনো তাকে নিরাশ করেন না। তিনি বলেছেন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি অতি ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু। (সূরা যুমার, আয়াত : ৫৩)

তাই কোনো ভুল হয়ে গেলে, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। মানুষ যেসব পাপ বা ভুল করে এরমধ্যে কিছু রয়েছে আল্লাহর হক সংশ্লিষ্ট। আবার কিছু আছে বান্দার হক সংশ্লিষ্ট। 

আল্লাহ তায়ালা মানুষের সেসব পাপ বা ভুলই ক্ষমা করেন যা তাঁর নিজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। বান্দার সঙ্গে সংশিষ্ট ভুল বা পাপ আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করেন না।

এসব পাপ তিনি তখনই ক্ষমা করবেন যখন অপরাধী তার কৃতপাপ বা ভুলের জন্য ভুক্তভোগীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবেন এবং সেই ব্যক্তি তাকে ক্ষমা করবেন। এজন্য কারো ওপর কোনো জুলুম করে ফেললে তাৎক্ষণিক ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।

ক্ষমা প্রার্থনা মানুষকে ছোট করে না। বরং অন্যের কাছে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে।

আর কোনো ভুল হয়ে গেলে তা স্বীকার করে নেওয়াই নবী-রাসুলদের বৈশিষ্ট্য। মুসা আ. অনুতপ্ত হয়ে বলেছিলেন, ‘মুসা বলল, এটা শয়তানের কাণ্ড। সে তো প্রকাশ্য শত্রু ও বিভ্রান্তকারী। সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো নিজের প্রতি অবিচার করেছি। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন। অতঃপর তিনি তাকে ক্ষমা করলেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ’ (সূরা কাসাস, আয়াত : ১৫-১৬)

এর মাধ্যমে বুঝা যায় ইসলামের দৃষ্টিতে ভুলের ওপর অটল থাকাই নিন্দনীয়।

রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, প্রত্যেক মানুষ ভুল করে, সর্বোত্তম ভুলকারী যে অনুতপ্ত হয় (এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে)। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৪৯৯)