আশুরায় যেভাবে ফেরাউনের পতন হয়েছে
আশুরা বা ১০ মহররম ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এ দিনের ইতিহাসের সঙ্গে যেসব ঘটনা হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত তার একটি হলো— এদিন আল্লাহ তায়ালা মুসা আ.-কে অত্যাচারী ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা করেন এবং ফেরাউনকে সমুদ্রে চুবিয়ে মারেন।
এদিনই স্বৈরাচারী, খোদাদ্রোহী থেকে মুক্তি লাভ করেন বনী ইসরাঈলের বিখ্যাত নবী মুসা আ.।
বিজ্ঞাপন
ফেরাউন ছিল তৎকালীন যুগের সবথেকে বড় স্বৈরশাসক ও খোদাদ্রোহী। সে নিজেকে রব বলে ঘোষণা করেছিল। নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য প্রজাদের ওপর সবধরনের নির্যাতন চালাতো। প্রজারা যেন তার কোনো সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতে না পারে এজন্য তাদের শিক্ষা-দিক্ষা বন্ধ করে দিয়েছিল। কেউ যেন তার অত্যাচারের ভিত্তি মূলে আঘাত হানতে না পারে এজন্য ছেলে সন্তান জন্ম নিলেই হত্যা করে ফেলতো।
তার এতো কূটচালের মাঝেও আল্লাহ তায়ালার কুদরতে জন্মগ্রহণ করলেন মুসা আ.। তিনি লালিত-পালিতও হলেন ফেরাউনের প্রাসাদে রাজশিশুর মতো আদর-যত্নে।
আরও পড়ুন
নির্ধারিত সময়ে আল্লাহ তায়ালা মুসা আ.-কে নবুয়ত দিলেন। নবুয়ত লাভের পর তিনি ফেরাউনকে স্বৈরাচারী আচরণ ছেড়ে আল্লাহর ওপর ঈমান আনার আহ্বান জানান।
অন্যায়-অত্যাচারের ওপর সাম্রাজ্য গড়ের তোলা ফেরাউন মুসা আ.-এর আহ্বানে সাড়া দিল না। তার আহ্বানকে ব্যাহত করতে সবধরনের চেষ্টা চালালো।
এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, (হে মুসা!) ফেরাউনের নিকট যাও, সে তো সীমালঙ্ঘন করেছে।এবং (তাকে) বল, ‘তোমার কি আত্মশুদ্ধির কোন আগ্রহ আছে? আর আমি কি তোমাকে তোমার প্রতিপালকের পথ দেখাব, ফলে তুমি তাঁকে ভয় করবে?
অতঃপর সে তাকে মহা নিদর্শন দেখাল।কিন্তু সে মিথ্যাজ্ঞান করল এবং অবাধ্য হল। অতঃপর সে পিছন ফিরে প্রতিবিধানে সচেষ্ট হল। সে সকলকে সমবেত করল এবং উচ্চ স্বরে ঘোষণা করল। আর বলল, ‘আমিই তোমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিপালক।’ (সুরা নাজিয়াত, আয়াত, ১৭-২৪)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যদি আমাকে ছাড়া আর কাউকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করো, আমি তোমাকে কয়েদিদের অন্তর্ভুক্ত করব।’ (সুরা শুআরা, আয়াত : ২৯)
সর্বশেষ মুসা আ.-কে তাঁর সম্প্রদায়সহ হত্যার চেষ্টা চালালো ফেরাউন।
ফেরাউনের নির্যাতন বের যাওয়ার পর আল্লাহ তায়ালা মুসা আ.-কে তাঁর সম্প্রদায়সহ মিশর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন।
মুসা আ. তাঁর সম্প্রদায় বনী ইসরাঈলকে নিয়ে মিশর ছেড়ে যাওয়ার সময় ফেরাউন সৈন্যসামন্ত নিয়ে তাদের পিছনে ধাওয়া করল।
মুসা আ. ও তার অনুসারীরা ততক্ষণে লোহিত সাগরের তীরে এসে পৌঁছে গেছেন। এমন সময় তারা পেছন তাকিয়ে দেখতে পেলেন, ফেরাউনের অগণিত সৈন্য তাদের ধরার জন্য এগিয়ে আসছে। তাদের পেছনে এই বিপদ, সামনে প্রকাণ্ড লোহিত সাগর।
তারা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে ভয়ে কাঁপতে লাগলেন। এমন সময় মহান আল্লাহ তাআলা মুসা আ.কে আদেশ করলেন, মুসা, ‘তোমার লাঠি দিয়ে সমুদ্রের ওপর আঘাত করো’। মুসা আ. মহান আল্লাহর নির্দেশমতো তাই করলেন। বিশাল সাগর দুই ভাগে ভাগ হয়ে দেয়ালের মতো দুইপাশে দাঁড়িয়ে রইলো। সেই পথ দিয়ে মুসা আ. ও তার অনুসারীরা নিরাপদে ওপারে চলে গেলেন।
তখনও সাগরের সেই রাস্তা সেভাবেই রয়ে গেলো। তা দেখে ফেরাউন এবং সৈন্যসামন্তও লোহিত সাগরের সেই রাস্তায় নেমে পড়ল। যখন ফেরাউনের বাহিনী সাগরের মাঝামাঝি এসে পৌঁছাল এমন সময় মহান আল্লাহ মুসা আ.-কে বললেন, ‘তাড়াতাড়ি সাগরের ওপরে তোমার লাঠি দিয়ে আবার আঘাত করো’।
মহান আল্লাহর হুকুমমতো মুসা আ. সাগরের পানিতে আঘাত করলেন, অমনি দুই দিক থেকে পানির খাড়া উঁচু স্রোত ফেরাউন ও তার সৈন্যদের ওপর পড়ে তাদের ভাসিয়ে নিয়ে গেলো। ধ্বংস হয়ে গেল ফেরাউন ও তার বাহিনী।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ফেরাউন ও তার বাহিনী জমিনে অন্যায় অহমিকা প্রদর্শন করেছিল। তারা মনে করেছিল তাদেরকে আমার কাছে ফিরে আসতে হবে না। সুতরাং আমি তাকে ও তার সৈন্যদেরকে পাকড়াও করলাম এবং সাগরে নিক্ষেপ করলাম। এবার দেখ, জালিমদের পরিণতি কী হয়ে থাকে! (সূরা কাসাস, আয়াত : ৩৯-৪০)।