আশুরা ভেবে যেসব কাজ করা যাবে না
মুহাররম মাসের সব থেকে মহিমান্বিত দিন আশুরা বা মুহাররমের ১০ তারিখ। হাদিসে আশুরার দিনের অনেক ফজিলত হয়েছে। ইসলামপূর্ব আরব জাহেলি সমাজে এবং আহলে কিতাব- ইহুদী-নাসারাদের মাঝেও ছিল এ দিনের বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা।
আল্লাহ তায়ালা আশুরার দিন কুদরত প্রকাশ করেছেন। বনি ইসরাইলের জন্য সমুদ্রে রাস্তা বের করে দিয়েছেন এবং তাদের নিরাপদে পার করে দিয়েছেন। আর একই রাস্তা দিয়ে ফেরাউন ও তার অনুসারীদের ডুবিয়ে মেরেছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১/৪৮১)
বিজ্ঞাপন
কিন্তু কিছু মানুষ এ দিনের গুরুত্ব প্রকাশ করতে গিয়ে নানান ভিত্তিহীন কথা বলে থাকেন। যা কোনোভাবেই শরিয়ত সমর্থন করে না।
যেমন- এদিন ইউসুফ (আ.) জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। ইয়াকুব (আ.) চোখের জ্যোতি ফিরে পেয়েছেন। ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছেন। ইদরীস (আ.)-কে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। আবার অনেকে বলে, এদিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। অথচ এসব কথার কোনো ভিত্তি শরিয়তে নেই।
আরও পড়ুন
উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রা. বলেন-
كَانُوا يَصُومُونَ عَاشُورَاءَ قَبْلَ أَنْ يُفْرَضَ رَمَضَانُ، وَكَانَ يَوْمًا تُسْتَرُ فِيهِ الكَعْبَةُ، فَلَمّا فَرَضَ اللهُ رَمَضَانَ، قَالَ رَسُولُ الله صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: مَنْ شَاءَ أَنْ يَصُومَهُ فَلْيَصُمْهُ، وَمَنْ شَاءَ أَنْ يَتْرُكَهُ فَلْيَتْرُكْهُ.
(জাহেলি সমাজে) লোকেরা রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার দিন রোজা রাখত। এ দিন কাবায় গেলাফ জড়ানো হতো। এরপর যখন রমজানের রোজা ফরজ হলো তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে এ দিন রোজা রাখতে চায় সে রাখুক। যে না চায় না রাখুক। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৫৯২)
এ হাদিস থেকে বুঝে আসে- জাহেলি সমাজে এ দিনের বিশেষ গুরুত্ব ছিল। এ দিনে তারা কাবা শরীফে গেলাফ জড়াতো। এ দিন তারা রোজা রাখতো। নবীজিও এ দিন রোজা রাখতেন। হিজরতের পরও এ দিন রোজা রাখতেন। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে এ দিনের রোজা ফরজ ছিল। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর এ দিন রোজা রাখা এখন মুস্তাহাব।
অনেকে মুহাররম মাসের এ দিন অর্থাৎ আশুরাকে শুধু হুসাইন রা.-এর শাহাদাতের ঘটনার সঙ্গে মিলিয়ে এ দিন এমন কিছু কাজ করেন যা শরীয়ত সমর্থিত নয়। এসব কাজ থেকে সবাইকে বিরত থাকা উচিত। এ দিন আশুরা মনে করে যেসব কাজ করা যাবে না, তাহলো—
>> আশুরাকে শোক উদযাপনের দিবস মনে করে তা পালন করা যাবে না।
>> শোক-বিলাপ করা, তাজিয়া মিছিল করা যাবে না।
>> আশুরার দিন ও মুহাররম মাসকে অশুভ মনে করা যাবে না।
>> আশুরার দিন সওয়াবের নিয়তে গোসল করা, সুরমা লাগানো খেজাব ব্যবহার করা যাবে না।
>> আশুরার দিন ঘরবাড়ি, মসজিদ ও কবরস্থানে আলোকসজ্জা করা যাবে না।