সালেহ আ. নিজ সম্প্রদায়কে যে আহ্বান জানিয়েছিলেন
আল্লাহ তায়ালা হজরত সালেহ আ.-কে সামূদ সম্প্রদায়ের কাছে নবী হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। তিনি নিজের সম্প্রদায়কে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত ও আল্লাহ ছাড়া অন্য যেসব মূর্তির তারা পূজা করতো তা পরিত্যাগ করার উপদেশ দিয়েছিলেন। তিনি তাদের বলেন—
আল্লাহ তায়ালা মানুষের প্রথম সৃষ্টি মাটি দিয়ে শুরু করেছিলেন। তিনি তোমাদের সবার পিতা হজরত আদম আ.-কে এই মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তায়ালাই তোমাদেরকে নিজ অনুগ্রহে পৃথিবীতে বসতি স্থাপন করার সুযোগ দিয়েছেন। এর কারণে তোমরা এখানে জীবনযাপন করছো। তোমরা যেসব পাপ কাজ করো তার জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। তাঁর ইবাদতেই মনোনিবেশ করা তোমাদের একান্ত কর্তব্য। তিনি তোমাদের খুব কাছে।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়টি পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে এভাবে—
وَ اِلٰی ثَمُوۡدَ اَخَاهُمۡ صٰلِحًا ۘ قَالَ یٰقَوۡمِ اعۡبُدُوا اللّٰهَ مَا لَكُمۡ مِّنۡ اِلٰهٍ غَیۡرُهٗ ؕ هُوَ اَنۡشَاَكُمۡ مِّنَ الۡاَرۡضِ وَ اسۡتَعۡمَرَكُمۡ فِیۡهَا فَاسۡتَغۡفِرُوۡهُ ثُمَّ تُوۡبُوۡۤا اِلَیۡهِ ؕ اِنَّ رَبِّیۡ قَرِیۡبٌ مُّجِیۡبٌ
আর আমি সামূদ(সম্প্রদায়) এর কাছে তাদের ভাই সালিহকে নবী হিসেবে প্রেরণ করলাম। সে বলল, হে আমার কওম! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া কেউ তোমাদের মাবূদ নেই, তিনি তোমাদেরকে যমীন হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে তাতে আবাদ করেছেন। অতএব তোমরা তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর মনোনিবেশ কর তাঁরই দিকে; নিশ্চয়ই আমার রাব্ব নিকটে রয়েছেন এবং তিনি আবেদন গ্রহণকারী। (সূরা হুদ, আয়াত : ৬১)
আরও পড়ুন
সালেহ আ.-এর এই আহ্বানের প্রেক্ষিতে সম্প্রদায়ের লোকেরা তাঁকে বললো—
قَالُوۡا یٰصٰلِحُ قَدۡ كُنۡتَ فِیۡنَا مَرۡجُوًّا قَبۡلَ هٰذَاۤ اَتَنۡهٰنَاۤ اَنۡ نَّعۡبُدَ مَا یَعۡبُدُ اٰبَآؤُنَا وَ اِنَّنَا لَفِیۡ شَكٍّ مِّمَّا تَدۡعُوۡنَاۤ اِلَیۡهِ مُرِیۡبٍ
তারা বলল— হে সালিহ! তুমিতো ইতোপূর্বে আমাদের মধ্যে আশা-ভরসা স্থল ছিলে। তুমি কি আমাদেরকে ওই বস্তুর ইবাদত করতে নিষেধ করছ যাদের ইবাদাত আমাদের পিতৃ-পুরুষেরা করে এসেছে? আর যে ধর্মের দিকে তুমি আমাদের ডাকছ, বস্তুতঃ আমরা তৎসম্বন্ধে গভীর সন্দেহের মধ্যে রয়েছি, যা আমাদেরকে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ফেলে রেখেছে। (সূরা হুদ, আয়াত : ৬২)
অর্থাৎ, সালেহ আ,-এর সম্প্রদায় এটাই বলতে চাচ্ছিল যে, আপনার বুদ্ধিমত্তা, বিচারবুদ্ধি, বিচক্ষণতা, গাম্ভীর্য ও মর্যাদাশালী ব্যক্তিত্ব দেখে আমরা আশা করেছিলাম আপনি ভবিষ্যতে একজন বিরাট নামীদামী ব্যক্তি হবেন। একদিকে যেমন বিপুল বৈষয়িক ঐশ্বর্যের অধিকারী হবেন তেমনি অন্যদিকে আমরাও অন্য জাতি ও গোত্রের মোকাবিলায় আপনার প্রতিভা ও যোগ্যতা থেকে লাভবান হবার সুযোগ পাবো। কিন্তু আপনি এ তাওহীদ ও আখেরাতের নতুন ধূয়া তুলে আমাদের সমস্ত আশা-আকাঙ্খা বরবাদ করে দিয়েছেন।
আল্লাহ তায়ালা বাল্যকাল থেকেই নবীদেরকে যোগ্যতা ও উন্নত স্বভাব চরিত্রের অধিকারী করে থাকেন। যার ফলে সবাই তাদেরকে শ্রদ্ধা করতে বাধ্য হতো।
কিন্তু নবুওয়াতের দাবী ও মুর্তি পুজা থেকে বারণ করার সঙ্গে সঙ্গেই সেসব লোক তাঁর বিরোধিতা ও শত্রুতা শুরু করেছিল। তাদের প্রত্যাশার বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে যখন তিনি তাওহীদ ও আখেরাত এবং উন্নত চারিত্রিক গুণাবলীর দাওয়াত দিতে থাকলেন তখন তারা তাঁর ব্যাপারে শুধু নিরাশই হলো না বরং তাঁর প্রতি হয়ে উঠলো অসন্তুষ্ট।
তারা বলতে লাগলো, বেশ ভালো কাজের লোকটি ছিল কিন্তু কি জানি তাকে কি পাগলামিতে পেয়ে বসলো, নিজের জীবনটাও বরবাদ করলো এবং আমাদের সমস্ত প্রত্যাশাও ধূলায় মিশিয়ে দিল।
আররের মুশরিকরাও একই কাজ করেছিল। মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াতের কথা ঘোষণা করার পূর্বে সমগ্র আরববাসী তাকে সত্যবাদী ও বিশ্বাসী মনে করত এবং আল-আমীন উপাধিতে ভূষিত করেছিল। কিন্তু যখনই তিনি এক আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহ্বান জানালেন তখনই তারা বিরোধিতা করতে লাগল।
(তাফসিরে ইবনে কাসির, ১২/৮১)