হজরত হামজা রা. ছিলেন রাসূল সা.-এর চাচা। তিনি ছিলেন মক্কার প্রভাব ও শক্তিশালী যুবকদের একজন। তার মাঝে তারুণ্যের উদ্দম ছিল পুরো মাত্রায়। সে যুগের মানুষেরা যেসব কাজ খুব শখ করে করতেন তার একটি ছিল, বন-বাদারে ঘুরে পশু শিকার করা। হামজা রা.-এর ছিল পশু শিকারের নেশা। মক্কায় তার প্রভাবের কথা কথা সবাই জানতেন।

ইসলামের প্রথমদিনগুলোতে যখন কেউ ইসলাম গ্রহণের কথা প্রকাশ করার সাহস পেতো না, সেই দিনগুলোতে সবার সামনে ঘোষণা দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন তিনি। তাঁর ইসলাম গ্রহণের সঙ্গে জড়িয়ে আছে চরম ইসলাম বিদ্বেষী আবু জালেহকে নবী অবমাননার জবাবে উচিত শিক্ষা দেওয়ার একটি চমকপ্রদ ঘটনা। ঘটনাটির বিবরণ হলো—

নবীজি সা.-কে আবু জাহেলের আঘাত

চরম ইসলাম বিদ্বেষী আবু জাহেল একদিন সাফা পাহাড়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। মহানবী সা. সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সে নবীজি সা.-কে দেখে অশালীন ও কটু ভাষা ব্যবহার করলো। তাঁকে অপমান করে অনেক কিছু বললো। অপমান করেই থামলো না সে, রাসূল সা.-কে আঘাতও করলো। 

পাশ থেকে একটি পাথর তুলে নিয়ে নবীজি সা.-এর মাথায় আঘাত করল। এতে মহানবী সা. অনেক আঘাত পেলেন। আঘাতের স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকলো। কিন্তু মুহাম্মদ সা. প্রতি উত্তর বা জবাবে তাঁকে কিছুই বললেন না। নিরবে সয়ে গেলেন সব। মুহাম্মদ সা.-কে আহত করে কাবাঘরের পাশে কুরাইশদের আড্ডায় গিয়ে বসলো আবু জাহেল।

ঘটনা শুনলেন হামজা রা....

এদিকে মহানবী সা.-কে আবু জাহেলের আঘাতের পুরো ঘটনা নিজ চোখে দেখেছিল আবদুল্লাহ ইবনে জুদান ইবনে আমর ইবনে কাব ইবনে সাদ ইবনে তায়ম ইবনে মুররার এক মুক্তি পাওয়া দাসী।

এ ঘটনার সময় হামজা রা. মক্কার বাইরে পশু শিকারে গিয়েছিলেন। তিনি শিকার থেকে ফেরার পর আব্দুল্লাহ বিন জুদানের সেই দাসী তাঁকে আবু জাহলের অন্যায় অত্যাচার এবং নবীজি সা,-এর ধৈর্য ধারণের পুরো ঘটনা শোনাল।

ক্রোধে ফেটে পড়লেন হামজা রা.

হামজা রা. তখন শিকার থেকে ফিরেছেন মাত্র। তখনো তাঁর হাতে তীর ধনুক ছিল। ঘটনা শুনে তিনি ক্রোধে ফেটে পড়লেন। এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে তিনি এ সংকল্প নিয়ে ছুটে চললেন যে, যেখানেই আবু জাহলের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে সেখানেই তিনি তার উচিত শিক্ষা দেবেন। তিনি খোঁজ করতে করতে তাকে পেলেন মসজিদুল হারামে,  কুরাইশদের আড্ডায়। 

হামজা রা.-এর হুঙ্কার ও আঘাত

সেখানে তিনি তার মুখোমুখী দাঁড়িয়ে হুঙ্কার দিয়ে বললেন, তুমি আমার ভাতিজা মুহাম্মাদ সা.-কে গালি দিয়েছো, অপমান করেছো এবং পাথর দিয়ে আঘাত করেছ। তোমার এতো সাহস!

এ কথা বলে তিনি তাঁর হাতের ধনুক দিয়ে আবু জাহেলকে আঘাত করলেন। আঘাতের তীব্রতা সইতে না পেরে আবু জাহেল পড়ে গেল।

আঘাতের পর হামজা রা. বললেন, ‘তুমি আমার ভাতিজাকে আঘাত করেছো, আজ থেকে আমিও তাঁর ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করলাম। সাহস থাকলে আমাকে অপমান করো। ওকে যা বলেছিলে, আমাকে বলো। আমি তোমাকে মারলাম, তুমি পাল্টা আমাকে মারো, সাহস থাকলে!’

আবু জাহেলকে হামজা রা. এমভাবে আঘাত করলেন যে, এতে করে আবু জাহেলের বনু মখযুম ও হামজা রা.-এর বনু হাশিম গোত্রের মাঝে দ্বন্দ্ব গেলে যাওয়ার মতো অবস্থা হলো, একে অপরের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। 

কিন্তু আবু জাহল সবাইকে এই বলে নিরস্ত করল যে, আবু উমারাকে (হামজা রা.) যেতে দাও। আমি সত্যিই তার ভাজিতাকে প্রচণ্ড গালমন্দ এবং আঘাত করেছি।

প্রাথমিক পর্যায়ে হামজা রা.-এর ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারটি কিছুটা ভাতিজার প্রতি আবেগ থেকে ছিল। মুশরিকরা তাঁর ভাতিজাকে কষ্ট দিত। এটা সহ্য করা তাঁর পক্ষে খুবই কঠিন ছিল। 

এমন পরিস্থিতিতে তিনি ইসলাম গ্রহণ করলে হয়তো তাঁর দুঃখ কষ্টের কিছু লাঘব হতে পারে এ ধারণার বশবর্তী হয়েই তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন। কিন্তু পরবর্তীতে আল্লাহ তায়ালা ইসলামের প্রতি তাঁর দরদ-ভালোবাসা এতোটাই বাড়িয়ে দিলেন যে তাঁর হাত ধরে মক্কায় ইসলাম শক্তিশালী হতে শুরু করলো। তিনি উহুদ যুদ্ধে ইসলামকে সম্মুন্নত করতে নিজের জীবন বিলিয়ে দিলেন। ইসলামের ইতিহাসে সাইয়্যেদুশ-শুহাদা হিসেবে স্মরণ করা হয় তাঁকে।

(আর রাহীকুল মাখতুম)