প্রতীকী ছবি

মৃত্যুর পর মানুষ নিজের সঙ্গে কিছুই নিয়ে যেতে পারবে না কাফনের কাপড় ছাড়া— এ কথা সহজে উচ্চারণ করলেও অন্তরে ধারণ করতে পারেন খুব অল্প মানুষ। এর প্রমাণ মেলে মানুষের প্রতিটি কাজকর্ম, বেশি বেশি সম্পদ উপার্জনের কামনা-বাসনা, প্রতিযোগিতা দেখলে।

বর্তমানে মানুষ অর্থ-সম্পদ উপার্জন, ভবিষ্যতের জন্য জমিয়ে রাখায় এতোটাই ব্যস্ত যে জীবন, নিজেকে দেওয়ার মতো সময়ও বের করা দুষ্কর। সম্পদ জমানো ও ভোগ বিলাসের প্রতি মানুষের এই প্রতিযোগিতাপ্রবণ স্বভাব নিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—

اَلۡہٰکُمُ التَّکَاثُرُ ۙ ١ حَتّٰی زُرۡتُمُ الۡمَقَابِرَ ؕ ٢ کَلَّا سَوۡفَ تَعۡلَمُوۡنَ ۙ

(পার্থিব ভোগ সামগ্রীতে) একে অন্যের উপর আধিক্য লাভের প্রচেষ্টা তোমাদেরকে উদাসীন করে রাখে। যতক্ষণ না তোমরা কবরস্থানে পৌঁছ। কিছুতেই এরূপ সমীচীন নয়। (সূরা তাকাসূর, আয়াত ১-৩)

 

ইসলাম মানুষকে জীবিকা ধারণের জন্য উপার্জনের প্রতি উৎসাহী করলেও সম্পদ জমিয়ে রাখার প্রতি বরাবরই অনুৎসাহিত করেছে। সম্পদ জমিয়ে রাখা কখনো কল্যাণকর কিছু নয় বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে কোরআনে। বলা হয়েছে, জমিয়ে রাখা সম্পদ মানুষকে পরকালে জাহান্নামের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির মুখোমুখি করবে। সূরা হুমাযাতে বর্ণিত হয়েছে—

وَیۡلٌ لِّکُلِّ ہُمَزَۃٍ لُّمَزَۃِۣ ۙ ١ الَّذِیۡ جَمَعَ مَالًا وَّعَدَّدَہٗ ۙ ٢ یَحۡسَبُ اَنَّ مَالَہٗۤ اَخۡلَدَہٗ ۚ ٣ کَلَّا لَیُنۡۢبَذَنَّ فِی الۡحُطَمَۃِ ۫ۖ ٤

বহু দুঃখ আছে প্রত্যেক এমন ব্যক্তির, যে পেছনে অন্যের বদনাম করে (এবং) মুখের উপরও নিন্দা করে। যে অর্থ সঞ্চয় করে ও তা বারবার গুণে দেখে। সে মনে করে তার সম্পদ তাকে চিরজীবি করে রাখবে। কক্ষণও নয়। তাকে তো এমন স্থানে নিক্ষেপ করা হবে, যা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলে। (সূরা হুমাযা, আয়াত : ১-৪)

অর্থাৎ, কিছু মানুষের অর্থ লিপ্সা এতোটাই বেশি যে তারা সম্পদ জমিয়ে রাখে, বারবার গুনে রাখে। তাদের সম্পদ জমিয়ে রাখার ধরণে মনে হয় তাদের সম্পদ মনে হয় চিরস্থায়ী।

অথচ যে সম্পদ কোরআন ও হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত যে, কারো প্রয়োজন পূরণে কাজে আসে না এমন করে সম্পদ জমিয়ে রাখা হারাম। 

এ সূরায় আরও বলা হয়েছে, যারা সম্পদ জামানোতে ব্যস্ত তারা মনে করে যে, তার অর্থ-সম্পদ তাকে চিরন্তন জীবন দান করবে। অর্থাৎ অর্থ জমা করার এবং তা গুণে রেখে দেবার কাজে সে এত বেশি ব্যস্ত যে নিজের মৃত্যুর কথা তার মনে নেই। তার মনে কখনো এ চিন্তার উদয় হয় না যে, এক সময় তাকে এসব কিছু ছেড়ে দিয়ে খালি হাতে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হবে। তাছাড়া তাকে এ সম্পদের হিসাবও দিতে হবে। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন কোনো বান্দার দু’পা সামনে অগ্রসর হতে পারবে না যতক্ষণ না তাকে নিম্নোক্ত বিষয় জিজ্ঞাসা করা না হয়, তার জীবনকে কিসে নিঃশেষ করেছে; তার জ্ঞান দ্বারা সে কী করেছে; তার সম্পদ কোত্থেকে আহরণ করেছে ও কিসে ব্যয় করেছে এবং তার শরীর কিসে খাটিয়েছে। (তিরমিজি, হাদিস, ২৪১৭)

এই সম্পদ জমানোর স্বভাব নিয়ে তায়ালা বলেছেন, এই কৃপণ আর সম্পদ জমা করা ব্যক্তিরা যেমন ভেবে থাকে তেমনটি কখনো হবে না, বরং তাদের ‘হুত্বামাহ’ জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। 

জাহান্নামের এই স্তরের আগুন এমন হবে যে, তা মানুষের হৃদয়কে পর্যন্ত গ্ৰাস করবে। এই আগুন এমন জায়গায় পৌছে যাবে যেখানে মানুষের অসৎচিন্তা, ভুল আকীদা-বিশ্বাস, অপবিত্র ইচ্ছা, বাসনা, প্রবৃত্তি, আবেগ এবং দুষ্ট সংকল্প ও নিয়তের কেন্দ্র। 

(ফাতহুল কাদীর, তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন ৮/ ৮৫৯, কুরতুবী)