ইমাম আহমদ রহ. সাঈদ ইবনে হিশাম রা. থেকে বর্ণনা করেন, সাঈদ ইবনে হিশাম রা. একবার ইবাদত ও আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে জীবন কাটিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা করলেন। এই ইচ্ছা থেকে নিজের পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সব সম্পত্তি বিক্রি করে দিলেন। বিক্রয় লব্ধ অর্থ দিয়ে যুদ্ধ সরঞ্জাম কিনে আজীবন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের উদ্দেশ্যে রোম সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে জিহাদে বের হওয়ার মনস্থ করলেন।

নিজ গোত্রের লোকদের কাছে তিনি মনের কথা ব্যক্ত করলেন। শুনে তারা বললেন, আল্লাহর রাসূল সা.-এর জীবদ্দশায় আমাদের ছয়জন ব্যক্তি এমন ইচ্ছা পোষণ করলে রাসূল সা. তাদের বারণ করে বলেছিলেন, আমার মধ্যেই কি তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ নেই? এই কথা শুনে সাঈদ ইবনে হিশাম নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন।

তিনি ইবনে আব্বাস রা.-এর কাছে গিয়ে বিতর নামাজ সম্পর্কে জানতে চাইলেন। ইবনে আব্বাস রা. তাঁকে আম্মাজান আয়েশা রা.-এর কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন।

তিনি আয়েশা রা.-এর কাছে গিয়ে বললেন, হে উম্মুল মুমিনীন! রাসূল সা. এর চরিত্র কেমন ছিল? উত্তরে আয়েশা রা. বললেন, তুমি কি কোরআন পড়ো না? এই কোরআনই ছিল রাসূল সা.-এর চরিত্র।

এরপর রাসূল সা.-এর তাহাজ্জুদ সম্পর্কে জানতে চাইলে আয়েশা রা. বলেন, সূরা মুযযাম্মিলের শুরুতে আল্লাহ তায়ালা তাহাজ্জুদ ফরজ করেছিলেন। ফলে রাসূল সা. ও সাহাবিরা পুরো এক বছর রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়তেন। এ কারণে তাদের পা ফুলে যেত। ১২ মাস এভাবে তাহাজ্জুদ পড়ার পর আল্লাহ তায়ালা সূরার শেষাংশ নাজিল করে তাহাজ্জুদ নামাজ নফল করে দেন।

এরপর রাসূল সা.-এর বিতর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে আয়েশা রা. বলেন, আমরা (রাসূল সা.-এর স্ত্রীরা) রাতেবেলা রাসূল সা.-এর জন্য মিসওয়াক ও অজুর পানি প্রস্তুত করে রাখতাম। সময়মতো তিনি ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে মিসওয়াক ও অজু করে একসঙ্গে ১১ রাকাত নামাজ পড়তেন। এরপর আল্লাহর জিকির করে দোয়া করতেন।

এরপর রাসূল সা. যখন বৃদ্ধ হয়ে গেলেন, তাঁর শরীর ভারি হয়ে গেল, তখন তিনি নয় রাকাত নামাজ পড়তেন। রাসূল সা.-এর অভ্যাস ছিল যে তিনি কোনো নামাজ শুরু করলে তা নিয়মিত পড়তেন। (শুরু করে কয়েকদিন পর আবার ছেড়ে দিতেন না।)

কোনো ব্যস্ততা, ঘুম বা রোগ ব্যাধির কারণে নামাজ পড়তে না পারলে দিনের বেলা ১২ রাকাত পড়ে নিতেন। তিনি আরও বলেন, রাসূল কোরআন এক রাতে পুরো কোরআন খতম করেছেন বা রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে ধারাবাহিক একমাস রোজা রেখেছেন বলে আমার জানা নেই। (মুসলিম, তাফসিরে ইবনে কাসির, ১১/৩১১)