আল্লাহ তায়ালা যেসব পাপ করবেন না, তার একটি হলো শিরক। রাসূল সা. বলেছেন, সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ হলো আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, মানুষ হত্যা করা, পিতামাতার অবাধ্যতা করা এবং মিথ্যা কথা বলা বা মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। (বুখারি, হাদিস :২৫১৯, ২৫৩৫)

অপর হাদিসে রাসূল সা. বলেছেন, জঘন্যতম পাপ এই যে, তুমি কাউকে আল্লাহর সমতূল্য বানাবে, অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।

শিরক হলো আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে কাউকে শরিক করা বা অন্য কোনো কিছুকে ইবাদতের যোগ্য মনে করা। পৃথিবীতে মানব জাতির আগমনের প্রথম পর্যায়ে সবাই আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান রাখতেন এবং তার সঙ্গে কাউকে শরিক করতেন না। পরবর্তীতে মানুষের মাঝে আস্তে শিরক ছড়িয়ে পড়ে।

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে—

كَانَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً فَبَعَثَ اللَّهُ النَّبِيِّينَ مُبَشِّرِينَ وَمُنْذِرِينَ وَأَنْزَلَ مَعَهُمُ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِيَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ فِيمَا اخْتَلَفُوا فِيهِ

প্রথমে সব মানুষ একই পথের অনুসারী ছিল। তাদের মধ্যে যখন মতভেদ শুরু হলো তখন আল্লাহ নবীদেরকে পাঠালেন। তারা ছিলেন সঠিক পথের অনুসারীদের জন্য সুসংবাদদাতা এবং বেঠিক পথ অবলন্বনের পরিণতির ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শনকারী। আর তাদের সাথে সত্য কিতাব পাঠান, যাতে সত্য সম্পর্কে তাদের মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছিল তার মীমাংসা করা যায়। (সূরা আল বাকারা, আয়াত : ২১৩)

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে নূহ আলাইহিস সালাম-এর জাতি পর্যন্ত একহাজার বছরের ব্যবধান ছিল। এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে সব মানুষই তাওহীদের উপর ছিল। 

এরপর নূহ আ.-এর জাতির মধ্যে সর্বপ্রথম শিরকের আবির্ভাব হয়। কতিপয় সৎ লোককে নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কারণেই তাদের মধ্যে শিরক প্রবেশ করে।

এর সূত্রপাত হয় এভাবে—

হজরত নুহ আ: যে জাতির কাছে প্রেরিত হয়েছিলেন সে কওম বা জাতির পাঁচজন ব্যক্তি ছিল যাদের না কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন- ওদ্দা, সুয়া, ইয়াগুস, ইয়াউস ও নাসর। এই পাঁচজন নেককার ছিলেন। এদের দ্বারা মানুষ হেদায়াতের পথ খুঁজে পেত। নেককাজে আগ্রহ পেত। 

তাদের ইন্তেকালের পর কওমের লোকেরা আফসোস করতে লাগল এবং বলতে লাগল- আমরা এখন কার কাছে গিয়ে হেদায়াতের কথা শুনব? এর মধ্যে শয়তান তাদের অন্তরে এ কথার উদয় করে দিলো যে, ওই বুজুর্গ ব্যক্তিরা তো চলে গেছেন; এখন উত্তম পন্থা হলো তাদের মূর্তি বানিয়ে ইবাদতখানায় রেখে দাও, তাতে তোমরা ইবাদতে স্বাদ পাবে।

কথামতো তারা তাদের বুজুর্গ ব্যক্তিদের মূর্তি বানিয়ে তাদের ইবাদতখানায় রেখে দিলো। এ কাজে যদিও তাদের শিরকের উদ্দেশ্য ছিল না।

পর্যায়ক্রমে তাদের পরবর্তী প্রজন্মও শিরক করেনি; কিন্তু তারা এই মূর্তিগুলোকে অন্যান্য বস্তু থেকে পৃথকভাবে অতি বেশি সম্মান প্রদর্শন করত।

তৃতীয় প্রজন্ম এসে ওই মূর্তিগুলোর পূজা শুরু করে দিলো। মূর্তিগুলোর নামে মান্নত করতে শুরু করে দিলো। নিজেদের প্রয়োজন পূরণের জন্য মূর্তিগুলোর কাছে আবেদন নিবেদন করতে শুরু করে দিলো। তাদের কাছে সন্তান, রিজিক চাইতে লাগল। মূর্তিগুলোকে সিজদা করতে লাগল। মূর্তিগুলোকে তাদের মাবুদ হিসেবে বিশ্বাস করতে লাগল।

এভাবেই পর্যায়ক্রমে মূর্তিপূজার প্রচলনের মাধ্যমে শিরকের প্রচলন শুরু হয়ে গেল। আল্লাহ তায়ালা বান্দার সব পাপকাজ ক্ষমা করে দিলেও শিরকের মতো জঘন্যতম পাপ ক্ষমা করবেন না বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন।

ইবনে আব্বাস রা. বলেন, নূহ আ.-এর সম্প্রদায় যেসব দেব-দেবীর পূজা করতো পরবর্তীতে আরবরাও ওই মূর্তির পূজা করতো। দুমাতুল জান্দালের কালব গোত্র ওয়াদ-এর, হুজায়াল গোত্র সুওয়াআ-এর, প্রথমে মুরাদ পরে গুতাইয়া গোত্র ইয়াগূহ এর, হামদান গোত্র ইয়াউক-এর এবং হিমরার গোত্র নাসর-এর পূজা করতো। এই মূর্তিগুলোর সবগুলোই নূহ আ.-এর সম্প্রদায়ের কিছু নেক লোকের নাম।

(সূরা নূহ, তাফসিরে ইবনে কাসির ১১/২৮৩)