মানুষের জীবন সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা নবী-রাসুলদের কাছে বিধান পাঠিয়েছেন। নবী-রাসুলরা সে জীবন বিধান মানুষের কাছে পৌঁছে দেন। এই বিধানকে ওহী বলা হয়।

ওহী-এর শব্দিক অর্থ: গোপনে দ্রুত ইঙ্গিত করা। আল্লাহর পক্ষ থেকে জিবরাঈল আ.-এর মাধ্যেমে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যে বিধান নাজিল হয়েছে, তাকে ওহী বলা হয়।

ওহী দুই প্রকার। প্রথম প্রকার : প্রত্যক্ষ ওহী; যার নাম ‘কিতাবুল্লাহ’ বা ‘আল-কোরআন’। এর ভাব, ভাষা উভয়ই মহান আল্লাহর। রাসূলুল্লাহ সা. তা হুবহু প্রকাশ করেছেন।

দ্বিতীয় প্রকার : পরোক্ষ ওহী যার নাম সুন্নাহ বা হাদিস। এর ভাব আল্লাহর, তবে নবী সা. তা নিজের ভাষায়, নিজের কথায়, নিজের কাজ ও সম্মতির মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। 

প্রথম প্রকারের ওহী রাসূলুল্লাহ সা.-এর উপর সরাসরি নাজিল হতো এবং তাঁর কাছে উপস্থিত লোকজন তা উপলব্ধি করতে পারতেন। কিন্তু দ্বিতীয় প্রকারের ওহী তাঁর উপর প্রচ্ছন্নভাবে নাজিল হতো এবং অন্যরা তা উপলব্ধি করতে পারতো না।

ওহীর প্রকৃতি এবং প্রকারভেদ সম্পর্কে আল্লামা ইবনে কাইয়্যেম যে আলোচনা করেছেন তা তুলে ধরা হলো—

১. সত্য স্বপ্ন : স্বপ্নের মাধ্যমে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর ওহী অবতীর্ণ হতো।

২. ফিরিশতা দেখা না দিয়ে অর্থাৎ অদৃশ্য অবস্থান থেকেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্তরে ওহী প্রবেশ করিয়ে দেন। এ প্রসঙ্গে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—

(‏إن روح القدس نفث في روعى أنه لن تموت نفس حتى تستكمل رزقها، فاتقوا الله وأجملوا في الطلب، ولا يحملنكم استبطاء الرزق على أن تطلبوه بمعصية الله ، فإن ما عند الله لا ينال إلا بطاعته‏)

জিবরাঈল আ. আমার অন্তরে এ কথা নিক্ষেপ করলেন যে, কোন আত্মা সে পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করবে না যে পর্যন্ত তার ভাগ্যে যতটুকু খাদ্যের বরাদ্দ রয়েছে পুরোপুরিভাবে তা পেয়ে না যাবে। অতএব, তোমরা আল্লাহকে সমীহ কর এবং রুজি অন্বেষণের জন্য ভাল পথ অবলম্বন কর। রুজি প্রাপ্তিতে বিলম্ব হওয়ায় তোমরা আল্লাহর অসন্তোষের পথ অন্বেষণে যেন উদ্বুদ্ধ না হও। কারণ, আল্লাহর নিকট যা কিছু রয়েছে তা তাঁর আনুগত্য ছাড়া পাওয়া দুস্কর।

৩. ফেরেশতা মানুষের আকৃতি ধারণ করে নবী কারীম সা.-কে সম্বোধন করতেন। তারপর তিনি যা কিছু বলতেন নবী কারীম সা. তা মুখস্থ করে নিতেন। এ সময় সাহাবীরাও ফেরেশতাকে দেখতে পেতেন।

৪. ওহী অবতীর্ণ হওয়ার সময় নবী কারীম সা.-এর কাছে ঘন্টার টুন টুন ধ্বনির মতো ধ্বনি শোনা যেত। ওহী নাজিলের এটাই ছিল সব চাইতে কঠিন অবস্থা। টুন টুন ধ্বনির সংকেত প্রকাশ করতে করতে ফিরিশতা ওহী নিয়ে আগমন করতেন এবং নবীজি সা.-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। 

ওহী নাজিলের সময় কঠিন শীতের দিনেও রাসূলুল্লাহ সা.-এর কপাল থেকে ঘাম ঝরতে থাকত। তিনি উটের ওপর আরোহণ অবস্থায় থাকলে উট বসে পড়ত। 

৫. মহানবী সা. ফিরিশতাকে কোনো কোনো সময় নিজস্ব জন্মগত আকৃতিতে প্রত্যক্ষ করতেন এবং আল্লাহর ইচ্ছায় সেই অবস্থাতেই তিনি তাঁর কাছে ওহী নিয়ে আগমন করতেন। নবী কারীম সা.-এর এ রকম অবস্থা দু’বার সংঘটিত হয়েছিল যা আল্লাহ তায়ালা সূরাহ ‘নাজমে’ উল্লেখ করেছেন।

৬. পবিত্র মিরাজ রজনীতে রাসূলুল্লাহ সা. যখন আকাশের উপর অবস্থান করছিলেন সেই সময় আল্লাহ তায়ালা নামাজ এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে সরাসরি হুকুমের মাধ্যমে ওহীর ব্যবস্থা করেছিলেন।

(যাদুল মাআদ ১/১৮, আর রাহীকুল মাখতুম)