সিরাতের গল্প
রাসূল সা.-কে আঘাত করতে গিয়ে আবু জাহেলের যে পরিণতি হয়েছিল
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলাম প্রচার শুরু করার পর মক্কার কাফেররা তাঁকে সবদিক থেকে কষ্ট দেওয়া শুরু করে। মানসিক, শারীরিক এমনকি তাকে হত্যার ষড়যন্ত্রও করে তারা।
রাসূল সা. কুরাইশ নেতাদের ইসলামের পথে আহ্বান করার পর তাঁর আহ্বানকে ভালোভাবে নিতে পারেনি আবু জাহেল। সে কুরাইশ নেতৃবৃন্দের মধ্যে ঘোষণা দিয়ে বললো—
বিজ্ঞাপন
‘কুরাইশ ভ্রাতৃবৃন্দ। আপনার অবগত আছেন যে, মুহাম্মাদ সা. আমাদের ধর্মে কলঙ্ক রটাচ্ছে, আমাদের পূর্বপুরুষের নিন্দা করছে, আমাদের জ্ঞান বুদ্ধিকে খাটো বলে রটনা করছে এবং দেবদেবীদের অবমাননা করছে। এ সব কারণে আল্লাহ তায়ালার শপথ করে বলছি যে, আমি এক খণ্ড ভারী এবং সহজে উঠানো সম্ভব এমন পাথর নিয়ে বসব এবং মুহাম্মাদ সা. নামাজের সময় যখন সিজদায় যাবে তখন সেই পাথর মেরে তার মাথা চূর্ণ করে ফেলব। এতে আমাকে সঙ্গ দিয়ে তোমরা আমাকে সাহায্য করো কিংবা না করো এতে আমার কোনো পরোয়া নেই।’
তার একথা শুনে উপস্থিত লোকেরা বলল, ‘আল্লাহর শপথ! আমরা তোমাকে অসহায় ছেড়ে দিতে পারি না। তুমি যা করার ইচ্ছে করেছো করে ফেল।
আরও পড়ুন
পরদিন সকালে আবু জাহেল ঘোষণা অনুযায়ী একখণ্ড পাথর নিয়ে রাসূলুল্লাহ সা.-এর অপেক্ষায় বসে থাকল। রাসূলুল্লাহ সা. যথা নিয়মে আগমন করলেন এবং নামাজে দাঁড়ালেন। কুরাইশ নেতারাও সেখানে উপস্থিত হয়ে আবু জাহলের কথিত কাণ্ড দেখার অপেক্ষায় রইল।
রাসূলুল্লাহ সা. নামাজ শুরু করে সিজদায় যাওয়ার পর আবু জাহেল পাথর উঠিয়ে তাঁর দিকে অগ্রসর হলো, কিন্তু কাছে যেতেই পরাস্ত সৈনিকের মতো কোনোমতে নিজের জীবন নিয়ে সেখান থেকে লেজ গুটিয়ে পালালো। এ সময় তাকে বিবর্ণ এবং ভীত সন্ত্রস্ত দেখাচ্ছিল। তার দু’হাত পাথরের সঙ্গে শক্তভাবে চিমটে লেগে গিয়েছিল। পাথরের গা থেকে হাত ছাড়াতে তাকে যথেষ্ট কষ্ট করতে এবং বেগ পেতে হয়েছিল।
এ অবস্থা দেখে কুরাইশ নেতাদের কিছু লোক দ্রুত তার কাছে এগিয়ে গেল এবং জানতে চাইলো, আবুল হাকাম! কিছুই বুঝলাম না, কী হলো তোমার!
সে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে বলল, ‘আমি রাতে যা বলেছিলাম তা করার জন্যই এগিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু যখন তাঁর (মুহাম্মদ সা.)-এর কাছে গিয়ে পৌঁছলাম তখন একটি উট আমার সামনে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াল। হায় আল্লাহ! কখনো আমি এমন মস্তক, এমন ঘাড় এবং এমন দাঁতবিশিষ্ট উট দেখিনি। মনে হল সে যেন আমাকে খেয়ে ফেলতে চাচ্ছে।
ইবনে ইসহাক বলেন, আমাকে বলা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, ‘উটের রূপ ধারণ করে সেখানে ছিলেন জিবরাঈল আলাইহিস সালাম। আবু জাহেল যদি আমার কাছে যেত তাহলে তার উপর বিপদ অবতীর্ণ হতো।
(ইবনে হিলমা ১/২৯৮-২৯৯, আর রাহীকুল মাখতুম।)