সাহাবি জীবন
মদিনায় হিজরতকারী প্রথম সাহাবি যিনি
মক্কায় মুসলমানদের ওপর মুশরিকদের নির্যাতন বেড়ে গেল। এ সময় আল্লাহ তায়ালা হিজরতের নির্দেশ দিলেন। মদিনার কিছু লোক মক্কায় হজ করতে এসে ইসলাম গ্রহণ করলেন। তাঁরা মুসলমানদের কাফেরদের নির্যাতন থেকে মুক্তির জন্য মদিনায় নিরাপদ আশ্রয়ের প্রতিশ্রুতি দিলেন রাসূল সা.-এর কাছে।
এরপরই রাসূলুল্লাহ সা. মুসলিমদের এ নতুন দেশে হিজরত করার (দেশত্যাগ করার) অনুমতি প্রদান করলেন।
বিজ্ঞাপন
হিজরতের অর্থ ছিল সবধরনের সুখ সুবিধা ও আরাম আয়েশ ত্যাগ করে এবং ধন দৌলত ও সহায় সম্পদ সবকিছু পরিত্যাগ করে শুধুমাত্র প্রাণ রক্ষা করা। কারণ, মুশরিকবেষ্টিত সমাজে মুসলিমদের জীবন যে কোন মুহূর্তে বিপদগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনাই ছিল অধিক। অধিকন্তু পথের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যেকোন স্থানে বিপদের সম্মখীন হওয়অর সম্ভাবনা ছিল। আর ভ্রমণ ছিল এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। জানা ছিল না আগামীতে কোন ধরণের বিপদাপদ ও দুঃখ কষ্টের সম্মুখীন হতে হবে তাঁদের।
সবধরনের বিপদাপদের সম্ভবনা জেনে শুনে হিজরত শুরু করলেন সাহাবিরা। এদিকে মুশরিকরা তাঁদের যাত্রাপথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে শুরু করল।
সর্ব প্রথম মুহাজির বা হিজরতকারী সাহাবি ছিলেন হজরত আবু সালামাহ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। ইবনে ইসহাক্বের মতে তিনি আকাবার বড় শপথের পূর্বেই হিজরত করেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েরা। যখন তিনি মক্কা থেকে যাত্রা করতে চাইলেন তখন তাঁর শ্বশুর পক্ষ বলল, ‘তোমার ইচ্ছা হলে তুমি হিজরত করতে পারো। কিন্তু আমাদের মেয়েকে তোমার সঙ্গে শহর থেকে বের হতে দিতে পারি না।’
আরও পড়ুন
এ কথা বলার পর তারা তাঁর স্ত্রীকে তাঁর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন। এতে আবু সালামাহ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর আত্মীয়-স্বজন রাগ ও জেদের বসে বললেন, ‘তোমরা যেহেতু তোমাদের মেয়েকে আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছো তাই আমরাও আমাদের সন্তানকে (আবু সালামাহ দম্পতির সন্তান) তোমাদের কাছে রাখতে রাখতে দিবো না।’
এরপর শিশুটিকে নিয়ে তার নানী-দাদী বাড়ির আত্মীয়দের মাঝে টানাটানি শুরু হলো, এতে তার একটি হাত উপড়ে গেল। দাদা বাড়ির লোকজন শিশুটিকে নিজেদের কাছে রেখে দিলো। বাবা-শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কারণে স্ত্রী-সন্তানকে ছাড়াই মদিনায় হিজরত করতে হলো আবু সালামাহ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে।
এদিকে স্বামী-সন্তানের থেকে আলাদা হয়ে উম্মে সালামা রা. ভেঙ্গে পড়েছিলেন। তিনি সকাল-সন্ধ্যা স্বামী-সন্তানের বিরহে চোখের পানি ফেলতেন। এভাবে এক বছর কেটে গেল। কিন্তু তিনি স্বাভাবিক হলেন না। তার এ অবস্থা দেখে এক আত্মীয় পরিবারের লোকজনকে তাঁকে স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ জানালেন। অনুরোধের প্রেক্ষিতে আত্মীয়রা তাকে বলল, তুমি চাইলে স্বামীর কাছে যেতে পার।
অনুমতির পর সন্তানকে দাদার বাড়ী হতে ফেরত নিলেন এবং কোনো সহায়-সঙ্গী ছাড়াই ৫০০ কিলোমিটারের দীর্ঘ ও বিপদ সঙ্কুল পথ পাড়ি দিয়ে মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন উম্মু সালামা।
যাত্রাপথে তানঈম গিয়ে পৌঁছার উসমান বিন আবু তালহার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হল। সবকিছু শুনে তিনি তাঁকে মদিনায় নিয়ে গেলেন। জনবসতি দৃষ্টি গোচর হওয়ার পর তিনি বললেন, ‘এ গ্রামে তোমার স্বামী আছেন, এ গ্রামে চলে যাও। আল্লাহ বরকতময়, বরকত দিন।
(ইবনে হিশাম ১/৪৬৮-৪৭০, আর রাহীকুল মাখতুম)