শৈশবেই বাবা-মা, দাদাকে হারিয়ে চাচা আবু তালেবের কাছে লালিত-পালিত হয়েছেন হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। চাচা আবু তালেব আমৃত্যু ভাতিজাকে আগলে রেখেছিলেন। তাঁকে নিজের সন্তানদের মতো স্নেহ করতেন। কখনো চোখের আড়াল করতেন না শিশু মুহাম্মদকে। 

চাচার স্নেহ-মমতায় কেটেছে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শৈশব-কৈশোর। চাচার সামনেই হয়েছেন পরিণত যুবক। নবুয়ত লাভ, বিশ্বনেতা হওয়ার প্রথম ধাপ—মানুষকে ইসলামের পথে আহ্বান, এসবই হয়েছে চাচা আবু তালেবের জীবদ্দশায়।

চাচার সঙ্গে সফরে কিশোর মুহাম্মদ সা.

মুহাম্মদ সা.-এর কিশোর বয়সে চাচা আবু তালেব একবার কুরাইশ কাফেলার সঙ্গে সিরিয়ায় বাণিজ্যে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেন। 

সফরের কষ্ট-বিপদাপদের কারণে তিনি মুহাম্মদ সা.-কে সঙ্গে নিতে চাইলেন না। কিন্তু তাঁকে রেখে চাচা সফরে যাবেন দেখে মন খারাপ হলো কিশোর মুহাম্মদ সা.-এর। ভাতিজার বিষাদকিষ্ট চেহারা আবু তালেবের মনে রেখাপাত করলো। তিনিও তাই তাঁকে মক্কায় রেখে যেতে পারলেন না। নিজের সঙ্গে নিয়ে গেলেন সিরিয়ায়।

পাদরি বুহায়রার ইবাদতখানার পাশে কুরাইশ কাফেলা...

সিরিয়ার বসরা শহরে জারজিস নামে এক খিষ্টান পাদরি বসবাস করতেন। তিনি বুহায়রা নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি আসমানী কিতাবগুলোতে বর্ণিত শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমন ও তাকে চেনার আলামত সম্পর্কে পড়েছিলেন।

পাদরি বুহায়রা সবসময় নিজের ইবাদতখানায় বসবাস করতেন। সচারাচর তাকে ইবাদতখানার বাইরে দেখা যেত না। 

কুরাইশ কাফেলা তার ইবাদতখানার পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় তিনি খেয়াল করলেন, আশপাশের গাছগুলো কাফেলার দিকে সেজদার মাধ্যমে সম্মান জানানোর ভঙ্গিতে নুয়ে পড়ছে। প্রচণ্ড রোদের তাপে কাফেলার বিশেষ একটি জায়গায় মেঘখন্ড এসে ছায়া দিচ্ছে।

এ দৃশ্য হতবাক করলো পাদরি বুহায়রাকে। কত বাণিজ্য কাফেলাই তো যায় তার ইবাদতখানার পাশ দিয়ে, কিন্তু এমন দৃশ্য এর আগে কখনো দেখেননি তিনি। এমন দৃশ্য তাকে কাফেলা সম্পর্কে কৌতুহলী করে তুললো। তিনি কাফেলা সম্পর্কে আগ্রহী হলেন।

কুরাইশ তাবুতে পাদরি বুহায়রা...

ইতোপূর্বে পাদরি বুহায়রা কখনো কোনো বাণিজ্য কাফেলা নিয়ে আগ্রহ দেখাননি। কোনো কাফেলার প্রতি তিনি ভ্রুক্ষেপও করতেন না। কিন্তু এবার কুরাইশ কাফেলা সিরিয়ায় তাবু টানার পর তিনি তার দীর্ঘ দিনের রীতি ভেঙ্গে কাফেলার কাছে গেলেন। কাফেলার প্রত্যেককে গভীরভাবে নিরীক্ষণ করলেন। এক এক করে সবাইকে দেখে অবশেষে দেখা পেলেন কিশোর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে। তাঁর পবিত্র চেহারা দেখেই তিনি চিনে ফেললেন যে, এই কিশোরই শেষ নবী, যার আগমনের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে আসমানী কিতাবগুলোতে।

পাদরি বুহায়রা মুহাম্মদ সা.-কে দেখতে পেয়ে তার হাত ধরে বললেন, 


هَذَا سَيِّدُ الْعَالَمِيْنَ هَذَا يَبْعَثُهُ اللهُ رَحْمَةً لِّلْعَالَمِيْنَ

তিনিই বিশ্বনেতা, তিনিই বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহর প্রেরিত রাসূল, তাঁকেই আল্লাহ তায়ালা পুরো বিশ্বের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছেন। 

কিশোর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মানে তিনি কাফেলাকে তার ইবাদতখানায় একবেলা খাবারের জন্য দাওয়াত দিলেন।

পাদরি কাফেলার লোকদের জিজ্ঞেস করে জেনে নিলেন এই কিশোরের অভিভাবক আবু তালেব। 

তিনি আবু তালেবকে বললেন, আপনি তাঁকে কখনো রোমের দিকে নিয়ে যাবেন না। রোমবাসী তাঁকে দেখলে তার গুণাবলী ও লক্ষণ দেখে চিনে ফেলবে এবং তাঁকে হত্যা করবে। তাকে শিগগির মক্কায় নিয়ে যান। পাদরির কথার পর তাড়াতাড়ি ব্যবসার কাজ শেষে কিশোর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে মক্কায় ফিরে গেলেন চাচা আবু তালিব।

(সীরাতুল মুস্তাফা (সা.), ৮৪-৮৮)