হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ইসলাম পূর্ণাঙ্গ মানুষ মনে করে। ভিন্নভাবে তাদের জন্মের বিষয়টি আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি বৈচিত্র্যের অংশ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, 

هُوَ الَّذِیۡ یُصَوِّرُكُمۡ فِی الۡاَرۡحَامِ كَیۡفَ یَشَآءُ ؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَكِیۡمُ

তিনি মাতৃগর্ভে তোমাদেরকে যেমন ইচ্ছা তেমন রূপ দেন, তিনি ছাড়া অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই; (তিনি) প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। ( সূরা আল ইমরান, আয়াত : ৬)।

অপর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 

 وَ مِنۡ اٰیٰتِهٖ خَلۡقُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ اخۡتِلَافُ اَلۡسِنَتِكُمۡ وَ اَلۡوَانِكُمۡ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِكَ لَاٰیٰتٍ لِّلۡعٰلِمِیۡنَ

‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে আছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই অনেক নিদর্শন আছে।’ (সূরা রুম, আয়াত : ২২)

কোরআনের এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে বোঝা যায় অঙ্গ, আকৃতি ও আচরণের ভিত্তিতে মানুষকে ভাগ করা হয়নি। কোরআন-হাদিসে কোথাও মানুষের কোনো ত্রুটিকে কেন্দ্র করে তাকে মন্দ বলা বা তাচ্ছিল্য করার নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। আল্লাহ তায়ালার কাছে সব ত্রুটিহীন অথবা ত্রুটিপূর্ণ মানুষই সমান এবং হাশরের ময়দানে সব ধরনের মানুষই জিজ্ঞাসিত হবে। 

আল্লাহ তায়ালার কাছে মানুষের আকার-আকৃতি সৌন্দর্যের কোনো মূল্য নেই। আকার-আকৃতি ও সৌন্দর্য তো আল্লাহ তায়ালারই দান। তিনি দেখেন মানুষের অন্তরের সৌন্দর্য ও আমল। এক হাদিসে আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত —

عَنْ أبي هُريْرة عَبْدِ الرَّحْمن بْنِ صخْرٍ رضي االله عَنْهُ قال : قالَ رَسُولُ االله صَلّى االلهُ عَلَيْهِ وسَلَّم: »إِنَّ االله لا يَنْظُرُ إِلى أَجْسامِكْم ، وَلا إِلى صُوَرِآُمْ ، وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ وَأَعمالِكُمْ « رواه مسلم

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তোমাদের দেহ এবং তোমাদের আকৃতি দেখেন না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমল দেখেন।’  (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫১৪৪, ৬০৬৬, মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৪, তিরমিজি, হাদিস : ১১৩৪, ১৯৮৮, নাসায়ী, হাদিস : ৩২৩৯)

তাই হিজড়ারাও মানুষের অন্তর্ভূক্ত। নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতসহ সবকিছু পালন করাই হিজড়াদের জন্য ফরজ। তাদের কারো কাছে হজ ফরজ হওয়ার মতো সম্পদ থাকলে তাদেরকেও হজ পালন করতে হবে।

তবে হজ পালনের ক্ষেত্রে চেহারা ও আচার-আচরণের দিক থেকে পুরুষ হিজড়ারা পুরুষদের মতো এবং নারী হিজড়ারা নারীদের মতো হজব্রত পালন করবেন। হজ আদায়কালে ছেলে হিজড়াকে পুরুষদের মতো ইহরাম পরতে হবে এবং মেয়ে হিজড়ারা মহিলাদের মতো নারীসুলভ স্বাভাবিক পোশাকেই ইহরামের নিয়ত করবেন। 

নারী হিজরাদের হজ পালনের ক্ষেত্রে একজন মাহরাম পুরুষ বেছে নিতে হবে এবং নারীদের মতোই হজের সব নিয়ম-কানুন তিনি পালন করবেন।

কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে সৎকর্ম করবে, সে পুরুষ বা নারী যদি সে বিশ্বাসী হয়, তবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (সূরা মুমিন, আয়াত : ৪০)