বায়তুল্লাহ বা কাবা সর্বপ্রথম ফেরেশতারা নির্মাণ করেন। এরপর জিবরাঈল আ.-এর ইঙ্গিতে হজরত আদম আ. তা পুনর্নিমাণ করেন। তারপর নূহ আ.-এর তূফানের সময় বায়তুল্লাহর প্রাচীর বিনষ্ট হলেও ভিত্তি আগের মতই থেকে যায়। 

পরবর্তীতে আল্লাহর নির্দেশে একই ভিত্তিভূমিতে ইবরাহিম আ. পুত্র ইসমাঈল আ.-কে নিয়ে তা পুনর্নির্মাণ করেন। 

আল্লাহর ইচ্ছায় তখন থেকে অদ্যাবধি কাবা গৃহে অবিরত ধারায় হজ ও তাওয়াফ চালু আছে এবং হরম ও তার অধিবাসীগণ পূর্ণ শান্তি, নিরাপত্তা ও মর্যাদায় সেখানে বসবাস করে আসছেন। 

এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَإِذْ بَوَّأْنَا لِإِبْرَاهِيْمَ مَكَانَ الْبَيْتِ أَن لاَّ تُشْرِكْ بِيْ شَيْئاً وَطَهِّرْ بَيْتِيَ لِلطَّائِفِيْنَ وَالْقَائِمِيْنَ وَالرُّكَّعِ السُّجُوْدِ

‘আর যখন আমি ইবরাহিমকে বায়তুল্লাহর স্থান ঠিক করে দিয়ে বলেছিলাম যে, আমার সাথে কাউকে শরীক করো না এবং আমার ঘরকে পবিত্র রাখো তাওয়াফকারী, সালাতে দন্ডায়মানও রুকূ-সিজদাকারীদের জন্য।’ (সূরা হজ, আয়াত ২৬)। 

বায়তুল্লাহর নির্মাণ কাজ শেষে আল্লাহ তায়ালা ইবরাহিম আ.-কে হজের ঘোষণা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে,

وَأَذِّن فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالاً وَعَلَى كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِينَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيْقٍ- لِيَشْهَدُوا مَنَافِعَ لَهُمْ وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللهِ فِي أَيَّامٍ مَّعْلُومَاتٍ عَلَى مَا رَزَقَهُم مِّن بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْبَائِسَ الْفَقِيرَ- (الحج ২৭-২৮)-

‘আর তুমি মানুষের মধ্যে হজের ঘোষণা জারি করে দাও। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং (দীর্ঘ সফরের কারণে) সর্বপ্রকার কৃশকায় উটের পিঠে সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে। যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থান পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং (কোরবানির) নির্দিষ্ট দিনগুলিতে (১০, ১১, ১২ জিলহজ) তার দেওয়া চতুষ্পদ পশু সমূহ যবেহ করার সময় তাদের উপরে আল্লাহর নাম স্মরণ করে। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং আহার করাও অভাবি ও দুস্থদেরকে’ (সূরা হজ, আয়াত : ২৭-২৮)।

আল্লাহ তায়ালার নির্দেশের পর হজরত ইবরাহিম আ. মাকামে ইবরাহিমে দাঁড়িয়ে এবং কোন কোন বর্ণনা মতে আবু কুবায়েস পাহাড়ের উপরে দাঁড়িয়ে দুই কানে আঙ্গুল ভর সর্বশক্তি দিয়ে উচ্চ কণ্ঠে চারদিকে ফিরে বারবার হজের ঘোষণা দেন।

ইমাম বাগাভী হজরত ইবনু আববাসের সূত্রে বলেন যে, ইবরাহিম আ.-এর সেই ঘোষণা আল্লাহ পাক সাথে সাথে বিশ্বের সকল প্রান্তে মানুষের কানে কানে পৌঁছে দেন।

ইবনু আব্বাস রা. বলেন, ইবরাহীমী আহ্বানের জবাবই হচ্ছে হাজিদের ‘লাববায়েক আল্লা-হুম্মা লাববায়েক’ (জির, হে প্রভু আমি হাজির) বলার আসল ভিত্তি। 

সেদিন থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ চলেছে কাবার পথে কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ উটে, কেউ গাড়ীতে, কেউ বিমানে, কেউ জাহাজে বা অন্য কোনো পরিবহনে করে। 

দিন-রাত, শীত-গ্রীষ্ম উপেক্ষা করে সবসময় চলছে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সাঈ। আর হজের পরে চলছে কোরবানি। এভাবে ইবরাহিম ও ইসমাঈল আ.-এর স্মৃতি চির অম্লান হয়ে আছে মানব ইতিহাসে যুগ যুগ ধরে।