সূরা আবাসা পবিত্র কোরআনের ৮০ নম্বর সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৪২। সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ ও কোরআনের ৩০তম পারায় অবস্থিত।

সূরা আবাসা

عَبَسَ وَتَوَلّٰۤی ۙ ١ اَنۡ جَآءَہُ الۡاَعۡمٰی ؕ ٢ وَمَا یُدۡرِیۡکَ لَعَلَّہٗ یَزَّکّٰۤی ۙ ٣ اَوۡ یَذَّکَّرُ فَتَنۡفَعَہُ الذِّکۡرٰی ؕ ٤ اَمَّا مَنِ اسۡتَغۡنٰی ۙ ٥ فَاَنۡتَ لَہٗ تَصَدّٰی ؕ ٦ وَمَا عَلَیۡکَ اَلَّا یَزَّکّٰی ؕ ٧ وَاَمَّا مَنۡ جَآءَکَ یَسۡعٰی ۙ ٨ وَہُوَ یَخۡشٰی ۙ ٩ فَاَنۡتَ عَنۡہُ تَلَہّٰی ۚ ١۰ کَلَّاۤ اِنَّہَا تَذۡکِرَۃٌ ۚ ١١ فَمَنۡ شَآءَ ذَکَرَہٗ ۘ ١٢ فِیۡ صُحُفٍ مُّکَرَّمَۃٍ ۙ ١٣ مَّرۡفُوۡعَۃٍ مُّطَہَّرَۃٍۭ ۙ ١٤ بِاَیۡدِیۡ سَفَرَۃٍ ۙ ١٥ کِرَامٍۭ بَرَرَۃٍ ؕ ١٦ قُتِلَ الۡاِنۡسَانُ مَاۤ اَکۡفَرَہٗ ؕ ١٧ مِنۡ اَیِّ شَیۡءٍ خَلَقَہٗ ؕ ١٨ مِنۡ نُّطۡفَۃٍ ؕ  خَلَقَہٗ فَقَدَّرَہٗ ۙ ١٩ ثُمَّ السَّبِیۡلَ یَسَّرَہٗ ۙ ٢۰ ثُمَّ اَمَاتَہٗ فَاَقۡبَرَہٗ ۙ ٢١ ثُمَّ اِذَا شَآءَ اَنۡشَرَہٗ ؕ ٢٢ کَلَّا لَمَّا یَقۡضِ مَاۤ اَمَرَہٗ ؕ ٢٣ فَلۡیَنۡظُرِ الۡاِنۡسَانُ اِلٰی طَعَامِہٖۤ ۙ ٢٤ اَنَّا صَبَبۡنَا الۡمَآءَ صَبًّا ۙ ٢٥ ثُمَّ شَقَقۡنَا الۡاَرۡضَ شَقًّا ۙ ٢٦ فَاَنۡۢبَتۡنَا فِیۡہَا حَبًّا ۙ ٢٧ وَّعِنَبًا وَّقَضۡبًا ۙ ٢٨ وَّزَیۡتُوۡنًا وَّنَخۡلًا ۙ ٢٩ وَّحَدَآئِقَ غُلۡبًا ۙ ٣۰ وَّفَاکِہَۃً وَّاَبًّا ۙ ٣١ مَّتَاعًا لَّکُمۡ وَلِاَنۡعَامِکُمۡ ؕ ٣٢ فَاِذَا جَآءَتِ الصَّآخَّۃُ ۫ ٣٣ یَوۡمَ یَفِرُّ الۡمَرۡءُ مِنۡ اَخِیۡہِ ۙ ٣٤ وَاُمِّہٖ وَاَبِیۡہِ ۙ ٣٥ وَصَاحِبَتِہٖ وَبَنِیۡہِ ؕ ٣٦ لِکُلِّ امۡرِیًٴ مِّنۡہُمۡ یَوۡمَئِذٍ شَاۡنٌ یُّغۡنِیۡہِ ؕ ٣٧ وُجُوۡہٌ یَّوۡمَئِذٍ مُّسۡفِرَۃٌ ۙ ٣٨ ضَاحِکَۃٌ مُّسۡتَبۡشِرَۃٌ ۚ ٣٩ وَوُجُوۡہٌ یَّوۡمَئِذٍ عَلَیۡہَا غَبَرَۃٌ ۙ ٤۰ تَرۡہَقُہَا قَتَرَۃٌ ؕ ٤١ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡکَفَرَۃُ الۡفَجَرَۃُ ٪ 

সূরা আবাসার অনুবাদ

(রাসূল) মুখ বিকৃত করল ও চেহারা ফিরিয়ে নিল। কারণ তার কাছে অন্ধ লোকটি এসে পড়েছিল। (হে রাসূল!) আপনার কি জানা আছে? হয়ত সে শুধরে যেত! অথবা উপদেশ গ্রহণ করত এবং উপদেশ দান তার উপকারে আসত!

আর যে ব্যক্তি অগ্রাহ্য করছিল। আপনি তার প্রতি মনোযোগ দিচ্ছেন। অথচ সে নিজেকে না শোধরালে তোমার উপর কোন দায়িত্ব আসে না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি শ্রম ব্যয় করে আপনার কাছে এলো। এ অবস্থায় যে, সে আল্লাহকে ভয় করে, তার প্রতি আপনি অবজ্ঞা প্রদর্শন করছেন! 

কিছুতেই এমন করা উচিত নয়। এ কোরআন তো এক উপদেশবাণী। যার ইচ্ছা সে একে স্মরণ রাখবে। এটা লিপিবদ্ধ আছে এমন সহীফাসমূহে, যা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। উচ্চ স্তরের, পবিত্র। এমন লিপিকরদের হাতে লিপিবদ্ধ, যারা অতি মর্যাদাসম্পন্ন, পুণ্যবান।

ধ্বংস হোক মানুষ, সে কত অকৃতজ্ঞ! (একটু চিন্তা করে দেখুক) আল্লাহ তাকে কিসের দ্বারা সৃষ্টি করেছেন? শুক্রবিন্দু থেকে, তিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন, এরপর তাকে এক বিশেষ পরিমিতিও দান করেছেন। অতঃপর তার জন্য পথ সহজ করে দিয়েছেন।

অতঃপর তার মৃত্যু ঘটিয়ে তাকে কবরস্থ করেছেন, তারপর যখন ইচ্ছা করবেন, তাকে পুনরায় উত্থিত করবেন। কখনও নয়, আল্লাহ তাকে যে বিষয়ে আদেশ করেছিলেন, এখনও পর্যন্ত সে তা পালন করেনি।

অতঃপর মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক! আমি উপর থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করেছি। তারপর ভূমিকে বিস্ময়করভাবে বিদীর্ণ করেছি। তারপর আমি তাতে উৎপন্ন করেছি শস্য, আঙ্গুর, শাক-সবজি, যয়তুন, খেজুর। নিবিড়-ঘন বাগান, এবং ফলমূল ও ঘাস-পাতা। তোমাদের নিজেদের ও তোমাদের গবাদি পশুর ভোগের জন্য।

পরিশেষে যখন কান বিদীর্ণকারী আওয়াজ এসেই পড়বে। (তখন এ অকৃতজ্ঞতার পরিণাম টের পাবে।) (তা ঘটবে সেই দিন), যে দিন মানুষ তার ভাই থেকেও পালাবে। এবং নিজ পিতা-মাতা থেকেও। এবং নিজ স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি থেকেও। (কেননা) সে দিন তাদের প্রত্যেকের এমন দুশ্চিন্তা দেখা দেবে, যা তাকে অন্যের থেকে ব্যস্ত করে রাখবে।

সে দিন অনেক মুখমণ্ডল হবে উজ্জ্বল। সহাস্য, প্রফুল্ল। এবং সে দিন অনেক মুখমণ্ডল হবে ধুলোমলিন, কালিমা সেগুলোকে আচ্ছন্ন করে রাখবে। এরাই তারা, যারা ছিল কাফের, পাপিষ্ঠ।

সূরা আবাসায় যে আলোচনা

সূরা আবাসাতে বেশ কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনার শুরু হয়েছে অন্ধ সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে মাকতুম রা.-এর একটি বিশেষ ঘটনার মাধ্যমে। এরপর আল্লাহ তায়ালা মানুষের সৃষ্টি, তাদের অকৃতজ্ঞ স্বভাব, মৃত্যু, মৃত্যু পরবর্তী জীবন, কিয়ামত, কিয়ামতের ভয়াবহতা। কিয়ামতের দিন নেককার ও বদকারের অবস্থা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করেছেন। 

সূরা আবাসায় কিয়ামত দিবসের আলোচনা

এ সূরার ৩৩ নম্বর আয়াত থেকে কিয়ামত দিবসের আলোচনা করা হয়েছে। এর আগে মানুষকে দেওয়া আল্লাহ তায়ালার বিভিন্ন নিয়ামতের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে—

মানুষ এতো নিয়ামত পাবার পরও এখন আল্লাহ তায়ালার অকৃতজ্ঞতা ও কুফর করে। কিন্তু যেদিন যেদিন কর্ণবিদারক নাদ আসবে, (অর্থাৎ কিয়ামত শুরু হবে, তখন সব অকৃতজ্ঞতার মজা টের পেয়ে যাবে। 

এরপর সেদিনের (কিয়ামত) অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে, যে সেদিন মানুষ পালিয়ে বেড়াবে তার ভাই, মা-বাবা, স্ত্রী, সন্তানদের কাছ থেকে। (অর্থাৎ কেউ কারও প্রতি দরদ দেখাবে না।) 

কারণ সেদিন প্রত্যেকেরই নিজের এক চিন্তা থাকবে, যা তাকে অপর থেকে নির্লিপ্ত রাখবে। (এরপর মুমিন ও কাফিরদের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে।) 

অনেক মুখমণ্ডল সেদিন (ঈমানের কারণে) উজ্জ্বল, সহাস্য ও প্রফুল্ল হবে এবং অনেক মুখমণ্ডল সেদিন কুফরের কারণে, ধূলি ধূসরিত হবে। তাদেরকে কালিমা আচ্ছন্ন করে রাখবে। তারাই কাফির, পাপাচারীর দল। (কাফির বলে ভ্রান্ত বিশ্বাসী এবং পাপাচারী বলে ভ্রান্ত কর্মী হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে)