রাসূল সা.এর আগমনের আগ পর্যন্ত মদিনার নাম ছিল ইয়াসবির। রাসূলের আগমনের পর এর নাম হয় মদিনাতুর রাসূল বা রাসূলের নগরী। রাসূল সা. মদিনায় আগমনের পর এতে সর্বপ্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন। যা মসজিদে নববী হিসেবে বিশ্বখ্যাত। মসজিদে নববী ছাড়াও মদিনায় আরও অনেক বিখ্যাত ও ঐতিহাসিক মসজিদ রয়েছে। এমন কিছু মসজিদের তালিকা—

মসজিদে কুবা

রাসূল সা. মদিনায় হিজরতের সময় প্রথমে কুবা নামক এলাকায় অবস্থান করেন। সেখানে তিনি যেই জায়গায় তার উট বাঁধেন সেখানে নিজ হাতেই একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এটিই হলো কুবা মসজিদ। রাসূল সা.-এর হাতে নির্মাণ করা মুসলমানদের প্রথম মসজিদ।

মসজিদে কুবা মসজিদে নববী থেকে দক্ষিণ দিকে প্রায় ৩.২ কি.মি. দূরে অবস্থিত। মসজিদটিতে ২০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।

মসজিদে জুমআ 

হিজরতের পথে মসজিদে কুবা থেকে ৮০০ মিটার উত্তরে অগ্রসর হয়ে বনু সালেম গোত্রের এলাকায় পৌঁছেন। এখানেই তিনি সর্বপ্রথম জুমার নামাজ আদায় করেন এবং একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এটাই হলো মসজিদে জুমা।

মসজিদে নববী থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২.৫ কি.মি.।

সর্বশেষ ১৪১২ হিজরিতে বাদশাহ ফাহাদের সময় এর সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়। বর্তমানে এখানে একসঙ্গে ৬৫০ জন মুসল্লী নামাজ আদায় করতে পারেন।

মসজিদে ইতবান ইবনে মালিক

বনু সালেম গোত্রের প্রসিদ্ধ সাহাবি হজরত ইতবান ইবনে মালিক রা. শেষ বয়সে অন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এবং বাড়ি ও মহল্লার মসজিদের মাঝে পানি প্রবাহিত হওয়ার উপত্যকা থাকার কারণে যখন মহল্লার মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করতে অপারগ হয়ে পড়েন, তখন তার অনুরোধে  নবীজি সা. তার বাড়িতে গিয়ে এক স্থানে নামাজ আদায় করেন। পরবর্তীতে এখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল, যার নাম মসজিদে ইতবান ইবনে মালিক। বর্তমানে এ মসজিদটি আর নেই। তবে এটি মসজিদে জুমার একটু উত্তরে দেয়াল ঘেরা একটি স্থানের মধ্যে ছিল।

কিবলাতাঈন মসজিদ: এ মসজিদে একই নামাজ দুই কিবলামুখী হয়ে সম্পন্ন হয়েছিল। নামাজ পড়তে দাঁড়িয়ে ওহি পাওয়ার পর নবী (সা.) ‘মসজিদ আল-আকসা’ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নামাজের মাঝখানে মক্কামুখী হয়ে পরবর্তী অংশ সম্পন্ন করেছিলেন। এ জন্য এ মসজিদের নামকরণ করা হয় কিবলাতাঈন (দুই কিবলা মসজিদ)। মসজিদের ভেতরে মূল পুরোনো মসজিদের অংশ অক্ষত রেখে চারদিকে দালান করে মসজিদ বর্ধিত করা হয়েছে।

মসজিদে আবু বকর রা.

এটি মসজিদে গামামাহর উত্তরে অবস্থিত। হজরত আবু বকর (রা.) খলিফা থাকাকালে এ মসজিদে ঈদের সালাত পড়াতেন। তাই এটি মসজিদে আবু বকর (রা.) হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

মসজিদে কুবা, মসজিদে কিবলাতাঈন, ওহুদ পাহাড়, খন্দকের পাহাড় প্রভৃতি দেখার জন্য মসজিদে নববীর বাইরে প্রবেশপথের কাছে ট্যাক্সিচালকেরা প্যাকেজের ব্যবস্থা করে থাকেন। খরচ মাত্র ১০ রিয়াল।

সময় পেলে দেখতে পারেন মসজিদে নববীর উত্তর দিকের গেট দিয়ে বেরিয়েই সাহাবাদের মসজিদ, মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়, বাদশাহ ফাহাদ কোরআন শরিফ ছাপাখানা প্রকল্প।

মসজিদে ফাতাহ 

এই মসজিদটি জাবালে সাল এর পশ্চিম ঢালে একটু উঁচুতে অবস্থিত। মসজিদটি ভূমি থেকে প্রায় সাড়ে চার মিটার উঁচুতে অবস্থিত। খন্দকের যুদ্ধের সময় পরিদর্শনের সুবিধার জন্য এই স্থানে রাসূল সা. তাবু স্থাপন করেছিলেন। এখানে তিনি তিনদিন দোয়া করেছিলেন। ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহ. এখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। এর নামকরণ করা হয় মসজিদে ফাতাহ।

মসজিদে মিকাত

মদিনা থেকে মক্কা যাওয়ার পথে মসজিদে নববী থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে এ মসজিদটি অবস্থিত। মদিনাবাসীর মিকাত বলে এ মসজিদটি মসজিদে মিকাত নামে পরিচিত।

মসজিদে গামামাহ

এ মসজিদকে মোসাল্লাহও বলা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রথম ঈদের সালাত ও শেষ জীবনের ঈদের সালাতগুলো মসজিদে গামামাহয় আদায় করেন। এখানে রাসূলুল্লাহ সা. বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়েছেন বলে একে মসজিদে গামামাহ বলা হয়। এটি মসজিদে নববীর দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত।