সূরা আবাসা পবিত্র কোরআনের ৮০ নম্বর সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৪২। সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ ও কোরআনের ৩০তম পারায় অবস্থিত।

সূরা আবাসায় যে আলোচনা

সূরা আবাসাতে বেশ কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনার শুরু হয়েছে অন্ধ সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে মাকতুম রা.-এর একটি বিশেষ ঘটনার মাধ্যমে। এরপর আল্লাহ তায়ালা মানুষের সৃষ্টি, তাদের অকৃতজ্ঞ স্বভাব, মৃত্যু, মৃত্যু পরবর্তী জীবন, কিয়ামত, কিয়ামতের ভয়াবহতা। কিয়ামতের দিন নেককার ও বদকারের অবস্থা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করেছেন। 

মৃত্যুর পর পুনরুত্থান

এ সূরার ২১ ও ২২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মানুষের মৃত্যু এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থান সর্ম্পকে আলোচনা করেছেন। এবং যারা পুনরুত্থানকে বিশ্বাস করে না তাদের নিন্দা করা হয়েছে।

কীসের ভিত্তিতে মানুষ পুনরুত্থান অস্বীকার করে!

যারা পুনরুত্থানকে অবিশ্বাস করে তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে তারা কতই না অকৃতজ্ঞ। কোনো দলিল-প্রমাণ ছাড়াই শুধু ধারণার বশবর্তী হয়ে একটি বিষয়কে অসম্ভব মনে করে থাকে। নিজেদের বিদ্যা-বুদ্ধির স্বল্পতা সত্ত্বেও ঝট করে আল্লাহ তায়ালার বাণীকে অস্বীকার ও অবিশ্বাস করে বসে।

মানুষের সৃষ্টি...
 
পুনরুত্থান সম্পর্কে বোঝাতে গিয়ে বলা হয়েছে, মানুষ কি কখনো চিন্তা করে দেখেছে আল্লাহ তাকে কোন ধরনের ঘৃণ্য জিনিসের মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন। যিনি অস্তিত্বহীন মানুষকে শুক্র বিন্দু বা বীর্যের মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন। তিনি কি তাদের পুনরায় দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করতে পারবেন না?

সৃষ্টির পরবর্তী ধাপ সহজ করেছেন মানুষের জন্য...

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টির পর তার ভাগ্য নির্ধারণ করেছেন। অর্থাৎ, বয়স, জীবিকা, আমল এবং সৎ ও অসৎ হওয়া। তারপর তার জন্য মায়ের পেট থেকে বের হওয়ার পথ সহজ করে দিয়েছেন। 

আমি উপর থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করেছি। তারপর ভূমিকে বিস্ময়করভাবে বিদীর্ণ করেছি। তারপর আমি তাতে উৎপন্ন করেছি শস্য, আঙ্গুর, শাক-সবজি, যয়তুন, খেজুর। নিবিড়-ঘন বাগান, এবং ফলমূল ও ঘাস-পাতা। তোমাদের নিজেদের ও তোমাদের গবাদি পশুর ভোগের জন্য। (সূরা আবাসা, আয়াত : ২৫-৩২)

মানুষের খাবার...

পুনরুত্থান বুঝানোর জন্য আল্লাহ তায়ালা এসব আলোচনার পর বলেছেন, মানুষ তার খাবারের প্রতি খেয়াল করে দেখুক। এতেই সে মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত হওয়ার প্রমাণ পাবে। 

শুষ্ক আনাবাদী জমিতে সবুজ-সতেজ ফসল...

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, হে মানুষ! শুষ্ক আনাবাদী জমি থেকে আমি যেমন সবুজ-সতেজ গাছের জন্ম দিয়েছি, সেই জমি থেকে ফসল উৎপন্ন করে তোমাদের আহারের ব্যবস্থা করেছি। ঠিক তেমনি পচে-গলে বিকৃত হয়ে যাওয়া হাড় থেকে আমি একদিন তোমাদের পুনরুত্থান ঘটাবো।

আকাশ থেকে ক্রমাগত বৃষ্টি...

আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা তো দেখতেই পাচ্ছো যে, আমি আকাশ থেকে ক্রমাগত বারি বর্ষণ করি। এবং সেই পানি জমিতে পৌঁছিয়ে দেই। তারপর ওই পানির স্পর্শ পেয়ে বীজ থেকে শস্য উৎপন্ন হয়। কত রকমারী শস্য ফলে। কোথাও আঙ্গুর, কোথাও তরি-তরকারি উৎপন্ন হয়।

আল্লাহ তায়ালা যায়তুন উৎপন্ন করেন। বৃষ্টির পানিতে তা সতেজ হয়। যায়তুন তরকারি হিসেবে রুটির সঙ্গে খাওয়া যায়। জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। এর থেকে তেলও পাওয়া যায়।

আল্লাহ তায়ালা খেজুরও সৃষ্টি করেছেন। খেজুর গাছে কাঁচা-পাকা, শুকনো এবং ভেজা খেজুর মানুষ খাবার হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। আবার এই খেজুর থেকেই মানুষ শিরা এবং সিরকা তৈরি করে। 

আল্লাহ তায়ালা বাগানও সৃষ্টি করেছেন, বাগান ফলে-ফুলে ভরে থাকে। তিনি পশুদের খাবারের জন্য ঘাস-পাতা সৃষ্টি করেছেন, এসব পশুদের খাবার।

তাফসিরে ইবনে কাসির, ১৮/ ৫২-৫৫

সূরা আবাসা

عَبَسَ وَتَوَلّٰۤی ۙ ١ اَنۡ جَآءَہُ الۡاَعۡمٰی ؕ ٢ وَمَا یُدۡرِیۡکَ لَعَلَّہٗ یَزَّکّٰۤی ۙ ٣ اَوۡ یَذَّکَّرُ فَتَنۡفَعَہُ الذِّکۡرٰی ؕ ٤ اَمَّا مَنِ اسۡتَغۡنٰی ۙ ٥ فَاَنۡتَ لَہٗ تَصَدّٰی ؕ ٦ وَمَا عَلَیۡکَ اَلَّا یَزَّکّٰی ؕ ٧ وَاَمَّا مَنۡ جَآءَکَ یَسۡعٰی ۙ ٨ وَہُوَ یَخۡشٰی ۙ ٩ فَاَنۡتَ عَنۡہُ تَلَہّٰی ۚ ١۰ کَلَّاۤ اِنَّہَا تَذۡکِرَۃٌ ۚ ١١ فَمَنۡ شَآءَ ذَکَرَہٗ ۘ ١٢ فِیۡ صُحُفٍ مُّکَرَّمَۃٍ ۙ ١٣ مَّرۡفُوۡعَۃٍ مُّطَہَّرَۃٍۭ ۙ ١٤ بِاَیۡدِیۡ سَفَرَۃٍ ۙ ١٥ کِرَامٍۭ بَرَرَۃٍ ؕ ١٦ قُتِلَ الۡاِنۡسَانُ مَاۤ اَکۡفَرَہٗ ؕ ١٧ مِنۡ اَیِّ شَیۡءٍ خَلَقَہٗ ؕ ١٨ مِنۡ نُّطۡفَۃٍ ؕ  خَلَقَہٗ فَقَدَّرَہٗ ۙ ١٩ ثُمَّ السَّبِیۡلَ یَسَّرَہٗ ۙ ٢۰ ثُمَّ اَمَاتَہٗ فَاَقۡبَرَہٗ ۙ ٢١ ثُمَّ اِذَا شَآءَ اَنۡشَرَہٗ ؕ ٢٢ کَلَّا لَمَّا یَقۡضِ مَاۤ اَمَرَہٗ ؕ ٢٣ فَلۡیَنۡظُرِ الۡاِنۡسَانُ اِلٰی طَعَامِہٖۤ ۙ ٢٤ اَنَّا صَبَبۡنَا الۡمَآءَ صَبًّا ۙ ٢٥ ثُمَّ شَقَقۡنَا الۡاَرۡضَ شَقًّا ۙ ٢٦ فَاَنۡۢبَتۡنَا فِیۡہَا حَبًّا ۙ ٢٧ وَّعِنَبًا وَّقَضۡبًا ۙ ٢٨ وَّزَیۡتُوۡنًا وَّنَخۡلًا ۙ ٢٩ وَّحَدَآئِقَ غُلۡبًا ۙ ٣۰ وَّفَاکِہَۃً وَّاَبًّا ۙ ٣١ مَّتَاعًا لَّکُمۡ وَلِاَنۡعَامِکُمۡ ؕ ٣٢ فَاِذَا جَآءَتِ الصَّآخَّۃُ ۫ ٣٣ یَوۡمَ یَفِرُّ الۡمَرۡءُ مِنۡ اَخِیۡہِ ۙ ٣٤ وَاُمِّہٖ وَاَبِیۡہِ ۙ ٣٥ وَصَاحِبَتِہٖ وَبَنِیۡہِ ؕ ٣٦ لِکُلِّ امۡرِیًٴ مِّنۡہُمۡ یَوۡمَئِذٍ شَاۡنٌ یُّغۡنِیۡہِ ؕ ٣٧ وُجُوۡہٌ یَّوۡمَئِذٍ مُّسۡفِرَۃٌ ۙ ٣٨ ضَاحِکَۃٌ مُّسۡتَبۡشِرَۃٌ ۚ ٣٩ وَوُجُوۡہٌ یَّوۡمَئِذٍ عَلَیۡہَا غَبَرَۃٌ ۙ ٤۰ تَرۡہَقُہَا قَتَرَۃٌ ؕ ٤١ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡکَفَرَۃُ الۡفَجَرَۃُ ٪ 

সূরা আবাসার অনুবাদ

(রাসূল) মুখ বিকৃত করল ও চেহারা ফিরিয়ে নিল। কারণ তার কাছে অন্ধ লোকটি এসে পড়েছিল। (হে রাসূল!) আপনার কি জানা আছে? হয়ত সে শুধরে যেত! অথবা উপদেশ গ্রহণ করত এবং উপদেশ দান তার উপকারে আসত!

আর যে ব্যক্তি অগ্রাহ্য করছিল। আপনি তার প্রতি মনোযোগ দিচ্ছেন। অথচ সে নিজেকে না শোধরালে তোমার উপর কোন দায়িত্ব আসে না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি শ্রম ব্যয় করে আপনার কাছে এলো। এ অবস্থায় যে, সে আল্লাহকে ভয় করে, তার প্রতি আপনি অবজ্ঞা প্রদর্শন করছেন! 

কিছুতেই এমন করা উচিত নয়। এ কোরআন তো এক উপদেশবাণী। যার ইচ্ছা সে একে স্মরণ রাখবে। এটা লিপিবদ্ধ আছে এমন সহীফাসমূহে, যা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। উচ্চ স্তরের, পবিত্র। এমন লিপিকরদের হাতে লিপিবদ্ধ, যারা অতি মর্যাদাসম্পন্ন, পুণ্যবান।

ধ্বংস হোক মানুষ, সে কত অকৃতজ্ঞ! (একটু চিন্তা করে দেখুক) আল্লাহ তাকে কিসের দ্বারা সৃষ্টি করেছেন? শুক্রবিন্দু থেকে, তিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন, এরপর তাকে এক বিশেষ পরিমিতিও দান করেছেন। অতঃপর তার জন্য পথ সহজ করে দিয়েছেন।

অতঃপর তার মৃত্যু ঘটিয়ে তাকে কবরস্থ করেছেন, তারপর যখন ইচ্ছা করবেন, তাকে পুনরায় উত্থিত করবেন। কখনও নয়, আল্লাহ তাকে যে বিষয়ে আদেশ করেছিলেন, এখনও পর্যন্ত সে তা পালন করেনি।

অতঃপর মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক! আমি উপর থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করেছি। তারপর ভূমিকে বিস্ময়করভাবে বিদীর্ণ করেছি। তারপর আমি তাতে উৎপন্ন করেছি শস্য, আঙ্গুর, শাক-সবজি, যয়তুন, খেজুর। নিবিড়-ঘন বাগান, এবং ফলমূল ও ঘাস-পাতা। তোমাদের নিজেদের ও তোমাদের গবাদি পশুর ভোগের জন্য।

পরিশেষে যখন কান বিদীর্ণকারী আওয়াজ এসেই পড়বে। (তখন এ অকৃতজ্ঞতার পরিণাম টের পাবে।) (তা ঘটবে সেই দিন), যে দিন মানুষ তার ভাই থেকেও পালাবে। এবং নিজ পিতা-মাতা থেকেও। এবং নিজ স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি থেকেও। (কেননা) সে দিন তাদের প্রত্যেকের এমন দুশ্চিন্তা দেখা দেবে, যা তাকে অন্যের থেকে ব্যস্ত করে রাখবে।

সে দিন অনেক মুখমণ্ডল হবে উজ্জ্বল। সহাস্য, প্রফুল্ল। এবং সে দিন অনেক মুখমণ্ডল হবে ধুলোমলিন, কালিমা সেগুলোকে আচ্ছন্ন করে রাখবে। এরাই তারা, যারা ছিল কাফের, পাপিষ্ঠ।