সূরা তাকভীরে যে আলোচনা করা হয়েছে
সূরা তাকভীর পবিত্র কোরআনের ৮১ নম্বর সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ২৯। সূরাটি কোরআনের ৩০তম পারায় অবস্থিত ও মক্কায় অবতীর্ণ।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে কেউ কেয়ামতকে প্রত্যক্ষ দেখতে চায় সে যেন সূরা ‘ইযাস সামছু কুওয়িরাত, ইযাস সামায়ুন ফাতারাত ও ইযাস সামায়ূন সাক্কাত’ পড়ে।
বিজ্ঞাপন
(তিরমিজি : ৩৩৩৩, মুসনাদে আহমাদ : ২/২৭, ৩৬, ১০০, মুস্তাদরাকে হাকিম : ২/৫১৫)
সূরা তাকভীর
اِذَا الشَّمۡسُ کُوِّرَتۡ ۪ۙ ١ وَاِذَا النُّجُوۡمُ انۡکَدَرَتۡ ۪ۙ ٢ وَاِذَا الۡجِبَالُ سُیِّرَتۡ ۪ۙ ٣ وَاِذَا الۡعِشَارُ عُطِّلَتۡ ۪ۙ ٤ وَاِذَا الۡوُحُوۡشُ حُشِرَتۡ ۪ۙ ٥ وَاِذَا الۡبِحَارُ سُجِّرَتۡ ۪ۙ ٦ وَاِذَا النُّفُوۡسُ زُوِّجَتۡ ۪ۙ ٧ وَاِذَا الۡمَوۡءٗدَۃُ سُئِلَتۡ ۪ۙ ٨ بِاَیِّ ذَنۡۢبٍ قُتِلَتۡ ۚ ٩ وَاِذَا الصُّحُفُ نُشِرَتۡ ۪ۙ ١۰ وَاِذَا السَّمَآءُ کُشِطَتۡ ۪ۙ ١١ وَاِذَا الۡجَحِیۡمُ سُعِّرَتۡ ۪ۙ ١٢ وَاِذَا الۡجَنَّۃُ اُزۡلِفَتۡ ۪ۙ ١٣ عَلِمَتۡ نَفۡسٌ مَّاۤ اَحۡضَرَتۡ ؕ ١٤ فَلَاۤ اُقۡسِمُ بِالۡخُنَّسِ ۙ ١٥ الۡجَوَارِ الۡکُنَّسِ ۙ ١٦ وَالَّیۡلِ اِذَا عَسۡعَسَ ۙ ١٧ وَالصُّبۡحِ اِذَا تَنَفَّسَ ۙ ١٨ اِنَّہٗ لَقَوۡلُ رَسُوۡلٍ کَرِیۡمٍ ۙ ١٩ ذِیۡ قُوَّۃٍ عِنۡدَ ذِی الۡعَرۡشِ مَکِیۡنٍ ۙ ٢۰ مُّطَاعٍ ثَمَّ اَمِیۡنٍ ؕ ٢١ وَمَا صَاحِبُکُمۡ بِمَجۡنُوۡنٍ ۚ ٢٢ وَلَقَدۡ رَاٰہُ بِالۡاُفُقِ الۡمُبِیۡنِ ۚ ٢٣ وَمَا ہُوَ عَلَی الۡغَیۡبِ بِضَنِیۡنٍ ۚ ٢٤ وَمَا ہُوَ بِقَوۡلِ شَیۡطٰنٍ رَّجِیۡمٍ ۙ ٢٥ فَاَیۡنَ تَذۡہَبُوۡنَ ؕ ٢٦ اِنۡ ہُوَ اِلَّا ذِکۡرٌ لِّلۡعٰلَمِیۡنَ ۙ ٢٧ لِمَنۡ شَآءَ مِنۡکُمۡ اَنۡ یَّسۡتَقِیۡمَ ؕ ٢٨ وَمَا تَشَآءُوۡنَ اِلَّاۤ اَنۡ یَّشَآءَ اللّٰہُ رَبُّ الۡعٰلَمِیۡنَ ٪
সূরা তাকভীরের অনুবাদ
যখন সূর্যকে ভাঁজ করা হবে। এবং যখন নক্ষত্ররাজি খসে-খসে পড়বে। এবং যখন পর্বতসমূহকে সঞ্চালিত করা হবে। এবং যখন দশ মাসের গর্ভবতী উটনীকেও পরিত্যক্ত রূপে ছেড়ে দেওয়া হবে। এবং যখন বন্য পশুসমূহ একত্র করা হবে। এবং যখন সাগরগুলিকে উত্তাল করে তোলা হবে। এবং যখন মানুষকে জোড়া-জোড়া বানিয়ে দেওয়া হবে।
এবং যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে, জিজ্ঞেস করা হবে, তাকে কী অপরাধে হত্যা করা হয়েছিল? এবং যখন আমলনামা খুলে দেওয়া হবে। এবং যখন আকাশের ছাল খসানো হবে। এবং যখন জাহান্নামকে প্রজ্বলিত করা হবে।
এবং যখন জান্নাতকে নিকটবর্তী করা হবে, তখন প্রত্যেক ব্যক্তি জানতে পারবে সে (ভালো-মন্দ) যা কিছু হাজির করেছে।
আমি শপথ করছি সেই সব নক্ষত্রের, যা পিছন দিকে চলে। যা চলতে চলতে অদৃশ্য হয়ে যায়।
এবং শপথ করছি রাতের, যখন তার অবসান হয়। এবং ভোরের, যখন তা শ্বাস গ্রহণ করে।
নিশ্চয়ই এটা (অর্থাৎ কোরআন) এক সম্মানিত ফেরেশতার আনীত বাণী। যে শক্তিশালী, আরশের অধিপতির কাছে মর্যাদাসম্পন্ন। যাকে সেখানে মান্য করা হয়। এবং যে আমানতদার।
(হে মক্কাবাসীগণ!) তোমাদের সঙ্গী (অর্থাৎ হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উন্মাদ নয়। নিশ্চয়ই সে তাকে (অর্থাৎ জিবরাঈলকে) স্পষ্ট দিগন্তে দেখতে পেয়েছে। এবং সে অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে কৃপণ নয়। এবং এটা (অর্থাৎ কোরআন) কোন বিতাড়িত শয়তানের (রচিত) বাণীও নয়।
তা সত্ত্বেও তোমরা কোন দিকে যাচ্ছ? এটা তো জগদ্বাসীদের জন্য উপদেশ, তোমাদের মধ্যে যে সরল পথে থাকতে চায় তার জন্য। তোমরা ইচ্ছা করবে না, যদি না আল্লাহ ইচ্ছা করেন, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক।
আরও পড়ুন
সূরা তাকভীরে যে আলোচনা করা হয়েছে
এই সূরার প্রথম ছয়টি আয়াতের ভাষ্য কিয়ামতের প্রথম অংশ অর্থাৎ শিঙ্গায় প্রথমবার যে ফুৎকার দেয়া হবে তার সাথে সংশ্লিষ্ট।
উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘কেয়ামতের পূর্বে ছয়টি নিদর্শন রয়েছে। মানুষ যখন হাটে-বাজারে থাকবে, তখন হঠাৎ সূর্যের আলো চলে যাবে এবং তারকারাজি দেখা যাবে; ফলে তারা আশ্চর্য হবে। তারা তাকিয়ে দেখার সময়েই হঠাৎ করে তারাগুলো খসে পড়বে।
এরপর পাহাড়গুলো মাটির উপর পড়বে, নড়া-চড়া করবে: এবং পুড়ে যাবে; ফলে বিক্ষিপ্ত ধুলোর মত হয়ে যাবে। তখন মানুষ জিনের কাছে এবং জিন মানুষের কাছে ছুটে আসবে। জন্তু-জানোয়ার-পাখি সব মিশে যাবে এবং একে অপরের সাথে একত্রিত হবে।
আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, আর যখন বন্য পশুগুলোকে একত্র করা হবে। (সূরা তাকভীর : ৫)
তারপর জিন মানুষদের বলবে, আমরা তোমাদের নিকট সংবাদ নিয়ে আসছি। তারা যখন সাগরের নিকট যাবে তখন দেখবে তাতে আগুন জ্বলছে। এ সময়ে সপ্ত যমীন পর্যন্ত এবং সপ্ত আসমান পর্যন্ত এক ফাটল ধরবে। এরপর এক বায়ু এসে তাদেরকে মৃত্যুবরণ করাবে।’ (তাবারী)
এই আলোচনার পর কোরআন ও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সত্যতার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
বলা হয়েছে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহীর মাধ্যমে অদৃশ্য বিষয়ক যা-কিছু জানতেন তা মানুষের কাছে গোপন করতেন না; বরং সকলের কাছেই তা প্রকাশ করে দিতেন।
জাহেলী যুগে যারা কাহিন বা অতীন্দ্রিয়বাদী নামে পরিচিত ছিল, তারাও মানুষকে অদৃশ্য বিষয়ে জানানোর দাবি করত। তারা এটা করত দুষ্ট জিনদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে। জিনরা তাদেরকে নানা রকমের মিথ্যা কথা শুনিয়ে দিত আর তাই তারা মানুষের কাছে প্রকাশ করত। তাও আবার টাকার বিনিময়ে। ফি ছাড়া তারা কাউকে কিছু বলতে চাইত না।
আল্লাহ তায়ালা কাফেরদেরকে বলছেন, তোমরা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ‘কাহিন’ বলছ, অথচ কাহিনরা তো তোমাদের কাছে মিথ্যা বলার ক্ষেত্রেও এমন কার্পণ্য করে যে দক্ষিণা ছাড়া কিছু বলতে চায় না।
কিন্তু মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অদৃশ্য বিষয়ে যেসব সত্য জানতে পারেন, তা তোমাদের কাছে প্রকাশ করতে কোন কার্পণ্য করেন না এবং সেজন্য তিনি কোন বিনিময়ও গ্রহণ করেন না।