মৃত্যু অবধারিত। মৃত্যুকে অস্বীকারের কিছু নেই। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক জীবকে মরণশীল করেই সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আমি পরীক্ষা করার জন্য তোমাদেরকে মন্দ ও ভালোতে লিপ্ত করি এবং তোমাদের সকলকে আমারই কাছে ফিরিয়ে আনা হবে।’(সূরা আম্বিয়া, আয়াত : ৩৫)

সমাজের নিম্ন আয়ের দিন মজুর হোক বা সবচেয়ে প্রতাপশালী কেউ। মৃত্যুর জন্য আল্লাহর নির্ধারিত কাল এলে কারো বাঁচার উপায় নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

وَ لَوۡ یُؤَاخِذُ اللّٰهُ النَّاسَ بِظُلۡمِهِمۡ مَّا تَرَکَ عَلَیۡهَا مِنۡ دَآبَّۃٍ وَّ لٰکِنۡ یُّؤَخِّرُهُمۡ اِلٰۤی اَجَلٍ مُّسَمًّی ۚ فَاِذَا جَآءَ اَجَلُهُمۡ لَا یَسۡتَاۡخِرُوۡنَ سَاعَۃً وَّ لَا یَسۡتَقۡدِمُوۡنَ

আর আল্লাহ যদি মানুষকে তাদের সীমালংঘনের জন্য শাস্তি দিতেন তবে ভূপৃষ্ঠে কোন জীব-জন্তুকেই রেহাই দিতেন না; কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। অতঃপর যখন তাদের সময় আসে তখন তারা মুহুর্তকাল আগাতে বা পিছাতে পারে না। (সূরা নামল, (১৬), আয়াত : ৬১)

অপর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবে, যদিও তোমরা সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান কর।’ (সূরা নিসা, আয়াত, ৭৫)

যখন কোনো মুসলমানের মৃত্যু সংবাদ কেউ শুনতে পায় তখন তার জন্য বেশ কিছু কাজ করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। এমন কিছু কাজের বিবরণ তুলে ধরা হলো—

শোক প্রকাশ

কারো মৃত্যু সংবাদ শুনলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইন্নালিল্লাহ পড়া উচিত।

দোয়াটির আরবি :

إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ، اللَّهُمَّ أْجُرْنِي فِي مُصِيبَتِي وَأَخْلِفْ لِي خَيْرًا مِنْهَا

আরবি উচ্চারণ : ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি; ওয়া আখলিফ-লি খাইরাম মিনহা।

বাংলা অর্থ : আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব। হে আল্লাহ! আমাকে আমার এই বিপদে বিনিময় দান করুন এবং আমার জন্য এরচেয়ে উত্তম ব্যবস্থা করে দিন।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, তারা (মুমিনরা) কোন মুসিবতে আক্রান্ত হলে বলে ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন (আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব)।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৫৬)

এক হাদিসে উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘কোনো মুমিন ব্যক্তি যখন কোনো বিপদ-আপদে আক্রান্ত হয় এবং আল্লাহ তাকে যা বলতে বলেছেন (নিচে উল্লেখিত) তা বলে, তখন আল্লাহ তাকে ওই মুসিবতের উত্তম বদলা এবং আগের চেয়ে উত্তম বিকল্প দান করেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৯১৮)

জানাজা, দাফন-কাফন

শোক প্রকাশের পর দ্রুত মৃতের দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা উচিত। কারণ, কোনো মুসলমান মারা গেলে অপর মুসলমানের ওপর মৃতের গোসল, কাফন, জানাজা, জানাজা বহন ও দাফন করার অবশ্যক হয়ে যায়। 
কেউ মারা গেলে দ্রুতই এই কাজগুলো সম্পাদন করতে হয়। হাদিসে এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। 

এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আলী রা.-কে লক্ষ্য করে বলেন, ‘হে আলী! তিনটি জিনিসের ক্ষেত্রে বিলম্ব করবে না—

১. নামাজের যখন সময় আসবে তখন নামাজ আদায় করা থেকে দেরি করবে না। ২. মৃত ব্যক্তির জানাজা যখন উপস্থিত হবে তখন কাফন-দাফন সম্পন্ন করতে দেরি করবে না। ৩. কোন অবিবাহিতা মেয়ের জন্য যখন কোন উপযুক্ত পাত্র পাবে তখন তাকে পাত্রস্থ করা থেকে বিলম্ব করবে না।’ (তিরমিজি ১/২০৬)

সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত হয়েছে, ‘হজরত তালহা ইবনে বারা রা. অসুস্থ হলে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে গেলেন। অতপর বললেন, আমি তালহার মধ্যে মৃত্যুর আলামত দেখতে পাচ্ছি। অতএব (সে মারা গেলে) এ সম্পর্কে আমাকে অবহিত করবে। আর তোমরা দ্রুত কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করবে। কেননা কোনো মুসলমানের মৃতদেহকে পরিবারস্থ লোকদের মাঝে আটকে রাখা উচিত নয়।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩১৫৯)

মৃতের দাফন-কাফনের আগে যেসব করণীয়

কেউ মৃত্যুবরণ করলে চওড়া পট্টি দিয়ে তার চোয়াল বেঁধে দেওয়া মুস্তাহাব (অসুস্থ ব্যক্তিবিশেষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) এবং তার চোখ বন্ধ করে দেবে। (মুসলিম, হাদিস : ১৫২৮)

চোখ বন্ধ করার সময় এ দোয়া পাঠ করবে—

উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতি রাসুলিল্লাহ, আল্লাহুম্মা ইয়াসসির আলাইহি আমরাহু ওয়া সাহহিল আলাইহি মা-বাদাহু, ওয়াস আদহু বি-লিকাইকা, ওয়াজআল মা খারাজা ইলাইহি মিনমা খারাজা মিনহু।

অর্থ : আল্লাহর নামে শুরু করছি এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিয়ে আসা দ্বিন অনুযায়ী।

হে আল্লাহ! তার বিষয়াদি সহজ করে দিন এবং পরের বিষয়গুলোও তার জন্য সহজ করে দিন। আপনার সঙ্গে সাক্ষাতের সৌভাগ্য তাকে দান করুন। তার কাছে আগন্তুক বস্তুগুলো প্রস্থানকৃত বস্তু থেকে উত্তম করে দিন। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৬৭)

মৃত ব্যক্তির দুই হাত বুকের ওপর রাখবে না, বরং তার দুই পাশেই রাখবে।(সুনানে কুবরা, হাদিস : ৬৮৪৯, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ৩/২৪১)

গোসল দেওয়ার আগে মৃত ব্যক্তির পাশে উচ্চৈঃস্বরে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা মাকরুহ। (মুসনাদ আবদুর রাজ্জাক : ৩/৩৮৬)

মৃত্যুর খবর প্রচার করা এবং অনতি বিলম্বে কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা মুস্তাহাব। (বুখারি, হাদিস : ১১৬৮, আবু দাউদ, হাদিস : ২৮৪৭)

(ফাতাওয়া শামি : ৫/৩৯, ইমদাদুল ফাতাওয়া : ৩/৩৮৫)