পবিত্র নগরী মক্কা থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মিনা প্রান্তর। ৮ জিলহজ জোহর থেকে আরাফার দিন ফজর পর্যন্ত মিনায় অবস্থান করেন হাজীরা। মিনায় অবস্থান করা সুন্নত। এখানে হজ পালনকারীরা ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। 

মিনা প্রান্তরে অবস্থিত প্রায় লক্ষাধিক তাঁবুতে অবস্থান করেন হাজিরা। এখানে নামাজ, তাসবিহ-তাহলিলের মাধ্যমে সময় অতিবাহিত করেন তারা। তাঁবুতে তাঁবুতে চলে আজান-ইকামত ও নামাজ।

মিনাতে অবস্থানের পর ৯ ও ১০ জিলহজ আরাফা, মুজদালিফায় অবস্থানের পর ১০ জিলহজ সূর্য ওঠার আগেই আবার মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন হাজিরা। 

মিনায় গিয়ে দুপুরের আগেই জামরাতে আকাবায় অর্থাৎ বড় জামরায় ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করেন। এরপর ১১ ও ১২ জিলহজেও মিনায় অবস্থিত জামারায় কঙ্কর নিক্ষেপ করেন হাজিরা।

মিনা প্রান্তরে শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করা হাজিদের জন্য ওয়াজিব। এই কাজটি যথাযথভাবে আদায় করতে না পারলে বা কোনো কারণে ছুটে গেলে হজ পালনকারীকে কাফ্ফারা হিসেবে কোরবানি দিতে হবে।

মিনা প্রান্তরে শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের কাজটি মূলত মুসলিম জাতির পিতার হিসেবে খ্যাত নবী হজরত ইবরাহিম আ.-এর অনুসরণে প্রতীকী আমল হিসেবে করা হয়। 

ইবরাহিম আলাইহিস সালাম যখন স্বপ্নযোগে আদেশ পেলেন তার প্রিয় বস্তুকে আল্লাহর জন্য কোরবানি করতে হবে, তখন তিনি কয়েকবার উট কোরবানি করলেন। এরপরও তাকে স্বপ্নে কোরবানির আদেশ দেওয়া হলো।

তখন তিনি বুঝতে পারলেন, তার সন্তান ঈসমাইলকে আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করার আদেশ করা হচ্ছে তাকে। কারণ, তখন তার কাছে ঈসমাইলের থেকে প্রিয় আর কিছু ছিল না।

তিনি ছেলেকে আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করতে প্রস্তুত করলেন এবং তাকে কোরবানি করতে মিনা প্রান্তরে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় শয়তান আল্লাহর খলিলকে বিপথে নেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টায় লিপ্ত হলো। 

সে মিনার তিনটি জায়গায় ইবরাহিম আ. ও ঈসমাইল আ.-কে কুমন্ত্রণা দিয়েছিল। তাদেরকে মহান রবের আদেশ পালন থেকে বিরত রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল। 

ইবরাহিম আ. ছিলেন খলিলুল্লাহ। তিনি শৈশব থেকেই তাওহিদের (আল্লাহর একত্ববাদ) জন্য পরীক্ষা দিয়ে এসেছেন। কুমন্ত্রণার বিপরীতে তিনি সেই তিন জায়গা থেকে পাথর নিক্ষেপ করে শয়তানকে বিতাড়িত করেছিলেন। এবং এখানেই তিনি ঈসমাইল আ.-কে কোরবানির জন্য শুইয়েছিলেন।

মুসলিম মিল্লাতের পিতা ইবরাহিম আ.-এর স্মৃতিবিজড়িত সেই ঘটনাকে চিরজাগ্রত রাখার জন্য কঙ্কর নিক্ষেপকে হজের বিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। 

ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, ইবরাহিম আ. আল্লাহর নির্দেশনা পালন করতে এলে জামরা আকবার কাছে শয়তান তাঁর মুখোমুখি হয়। ইবরাহিম আ. সাতটি পাথর নিক্ষেপ করেন। সে জমিনে মিশে যায়। অতঃপর দ্বিতীয় জামরায় এলে তাকে সাতটি পাথর নিক্ষেপ করেন। সে জমিনে মিশে যায়। অতঃপর তৃতীয় জামরায় এলে তাকে ফের সাতটি পাথর নিক্ষেপ করেন। সে জমিনে মিশে যায়। 

ইবনে আব্বাস রা. বলেন, ‘তোমরা শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ কর। তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষ ইবরাহিম (আ.)-এর রীতিকে অনুসরণ করছ। (সহিহ আত তারগিব, হাদিস : ১১৫৬)

বর্তমানে মিনার এই তিন স্থানে শয়তান বিদ্যমান নেই, তবে হাজিরা যখন ইবরাহিম আ.-এর অনুসরণে প্রতীকী আমল হিসেবে কঙ্কর নিক্ষেপ করে তখন তা দেখে শয়তান অপমানে জ্বলতে থাকে। ইবরাহিম আলাইহিস সালামের পাথর নিক্ষেপের ঘটনা এবং বর্তমানে হাজিদের প্রতীকী পাথর নিক্ষেপের কারণেই মিনা প্রান্তর বিখ্যাত এবং বিশ্ব মুসলিমের কাছে অতি পরিচিত একটি নাম।