প্রতীকী ছবি

দেশে এখন কাঠফাটা রোদ্দুর। এক চিলতে ছায়া অনেকের জন্য পরম আরাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঝে মাঝে কালবৈশাখী এসে আবহাওয়া খানিক শীতল ও সতেজ করে দিলেও খাঁ খাঁ তাপদাহ সর্বত্র বিরাজমান। পাশাপাশি চলছে পবিত্র রমজান মাস। তাই অনেকে জানতে চান— গরমের দিনে রোজা রাখার সওয়াব কি জিহাদের সমান? কিংবা কষ্ট হওয়ার পরও রোজা রাখলে কি অনেক সওয়াব?

মূলত গরমে রোজা রাখা জিহাদের সমান বলে— কোনো হাদিস আছে, এমনটা আমাদের জানা নেই। তবে এ কথা প্রত্যেক মুসলিমের জ্ঞাত যে, রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ। এটি ইসলামের অন্যতম একটি রোকন বা স্তম্ভ। প্রতিদানের দিক থেকে অনেক মর্যাদাপূর্ণ আমল।

আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একদিন রোজা রাখবে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে রাখবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ২৮৪০; মুসলিম, হাদিস : ১১৫৩)

আরও পড়ুন : যে চার ব্যক্তি রোজা ভেঙে ফেলতে পারবেন

এছাড়া হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রোজা এমন একটি ইবাদত যার পুরষ্কার স্বয়ং আল্লাহ দান করবেন। আরও বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের আশায় রোজা রাখার বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা বান্দার অতীত জীবনের পাপ মোচন করে দেন। রমজানে অনেক রোজাদারকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ঘোষণা করেন। রোজাদারদের রইয়ান নামক বিশেষ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। এমন আরও অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।

তবে কেউ যদি প্রচণ্ড রোদ-গরম, পরিশ্রমের কাজ অথবা লম্বা দিন হওয়ার পরও কষ্ট করে রোজা রাখে— তাহলে কষ্ট অনুযায়ী মহান আল্লাহ তাকে বেশি সওয়াব দান করবেন, ইনশাআল্লাহ। কেননা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) ওমরাহ আদায়ের ক্ষেত্রে উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তোমার কষ্ট ও খরচ অনুযায়ী তোমাকে সওয়াব দেওয়া হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ১৭৮৭; মুসলিম, হাদিস : ১২১১)

এছাড়াও বহু হাদিসে কষ্ট অনুযায়ী বেশি সওয়াবের কথা বর্ণিত হয়েছে, যেমন—
♦ কারও বাড়ি যদি মসজিদ থেকে দূরে হয়, তারপরও কষ্ট করে পায়ে হেঁটে মসজিদে এসে জামাতে সালাত আদায় করে— তার সওয়াবের পরিমাণ বেশি।
♦ কারও কোরআন তিলাওয়াত করা কষ্টসাধ্য হওয়ার পরও পড়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখলে তার জন্য তার দ্বিগুণ সওয়াব রয়েছে। 
♦ মক্কা বা মক্কার আশেপাশে অবস্থানকারীদের চেয়ে যারা দূর-দূরান্ত থেকে বহু পথ পাড়ি দিয়ে, বহু কষ্ট করে অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে হজ করতে আসে— তাদের সওয়াব বেশি; এতে কোনও সন্দেহ নেই।

এসব বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, আল্লাহর নির্দেশ পালন করতে গিয়ে যদি কারও বেশি কষ্ট-ক্লান্তি ও পরিশ্রম হওয়ার পরও ধৈর্যের সঙ্গে সওয়াবের আশায় তা পালন করে— তাহলে সাধারণ আমলকারীর চেয়ে তার সওয়াবের পরিমাণ বেশি হয়। সুতরাং কষ্টসাধ্য রোজায় সওয়াব বেশি হবে ইনশাআল্লাহ।

অতএব পরকালে সাফল্যপ্রত্যাশী ও মুক্তিকামী প্রতিটি ঈমানদারের ওপর অবশ্য কর্তব্য হলো— পরিশ্রম, ডিউটি, গরম ও লম্বা দিন ইত্যাদির ওজুহাতে রোজা পরিত্যাগ না করা। বরং রোজার গুরুত্ব-মর্যাদা ও বিশাল সওয়াব প্রাপ্তির আশায়— ধৈর্যের সঙ্গে রোজা পালন করা। আল্লাহ তওফিক দান করুন। আমিন।