রাসূল সা. মদিনায় হিজরতের সময় সেখানে তিন শ্রেণীর মানুষের বসবাস ছিল। একশ্রেণী ছিল মুসলমান আনসার সাহাবি। অপর শ্রেণী ছিল পৌত্তলিক, যারা আগে থেকেই মদিনায় অবস্থান করছিল। তৃতীয় শ্রেণী ছিল ইহুদি।

এই হুইদিরা রোমীয়দের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে হেজাযে আশ্রয় নিয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে এরা ছিল হিব্রু। হেজাযে আশ্রয় নেওয়ার পর চাল-চলন, কথাবার্তা ও পোশাক পরিচ্ছদে তাদেরও আরব মনে হতো। মদিনায় বসবাস শুরুর পর তারা তাদের গোত্র ও সন্তানদের নামকরণও করতো আরবদের মতো। আরবদের সঙ্গে তাদের বৈবাহিক সম্পর্কও স্থাপিত হয়েছিল। এসবের পরেও তারা নিজেদের বংশ-গৌরব নিয়ে অহংকার করতো। তারা নিজেদের ইসরাঈলী অর্থাৎ, ইহুদি হওয়ার কারণে গর্ববোধ করতো। আরবদের মনে করতো নিকৃষ্ট। 

আরবদের উম্মি বলে গালি দিতো। উম্মি বলে তারা বোঝাতে চাইতো আরবরা নির্বোধ, মুর্খ, নিচু ও অছ্যুত। তারা বিশ্বাস করতো আরবদের ধন-সম্পদ তাদের জন্য বৈধ। যেভাবে ইচ্ছা ভোগ করা যাবে।

ভাগ্য গণনা, জাদু, ঝাঁড়ফুঁক এসবই ছিল ইহুদিদের ধর্ম বিশ্বাস ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের অংশ। এসবের মাধ্যমে তারা নিজেদের জ্ঞানী, পণ্ডিত ও আধ্যাত্মিক নেতা মনে করতো।

ইহুদিরা ধন-সম্পদ উর্পাজনের ব্যাপারে দক্ষ ছিল। তারা খাদ্য-সামগ্রী, খেজুর,মদ এবং পোশাকের ব্যবসা করতো। তারা খাদ্য সামগ্রী পোশাক এবং মদ আমদানি করতো, খেজুর রফতানি করতো। আরও বিভিন্ন কাজে নিজেদের ব্যস্ত রাখতো।

ব্যবসা-বাণিজ্যে তারা আরবদের কাছ থেকে দিগুণ, তিনগুণ মুনাফা লাভ করতো। তারা সুদও খেতো। আরব সর্দারদের সুদের ওপর টাকা ধার দিতো।

ইহুদিরা ষড়যন্ত্র এবং যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিতে পটু ছিল। তারা প্রতিবেশি গোত্রগুলোর মাঝে সূক্ষ্ণভাবে শত্রুতার বীজ বপন করতো। একটি গোত্রকে অন্য গোত্রের বিরুদ্ধে এমনভাবে উত্তেজিত করে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত লাগিয়ে দিতো যে তারা ঘূণাক্ষরেও বুঝতে পারতো না যে এতে ইহুদিদের ইন্ধন রয়েছে।

কখনো দুই গোত্রের যুদ্ধ বন্ধের সম্ভবনা দেখা গেলে তারা নতুন ফন্দি এঁটে তাদের মধ্যে আবার যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিতো। এবং আরবদের ধ্বংসের দৃশ্য বসে বসে দেখতো। সে সময় তাদের মোটা অংকের সুদে টাকা ধার দিতো। 

এতে ইহুদিরা দুইভাবে লাভবান হতো। একদিকে নিজের সম্প্রদায়কে নিরাপদ রাখতো। অপরদিকে সুদের ব্যবসা জমজমাট রাখতো। 

নবীজি সা. যখন মদিনায় হিজরত করেন তখন এই ইহুদিদের তিনটি গোত্র মদিনায় বসবাস করতো। 

১. বনু কাইনুকা। এরা ছিল খাযরাজ গোত্রের মিত্র। এরা মদিনার ভেতরেই বসবাস করতো।

২. বনু নাযির।

৩. বনু কোরাইযা। এ দুটি গোত্র ছিল আওস গোত্রের মিত্র। মদিনার শহরতলী এলাকায় বসবাস করতো এরা। 

ইহুদিরা ইসলামের প্রতি শত্রুতা পোষণ করতো। এর অন্যতম কারণ ছিল তারা চেয়েছিল নবী মুহাম্মদ সা. তাদের বংশোদ্ভূত কেউ হোক। কিন্তু তা না হওয়ায় তারা নিজেদের আভিজাত্যের কোনো গুরুত্ব পাচ্ছিল না। তাই মদিনায় নবীজির আগমন, ইসলামের সূচনাকাল থেকেই তারা মুসলমানদের প্রতি চরম বিদ্বেষ পোষণ করেছিল। তবে তাৎক্ষণিক তারা তাদের বিদ্বেষ প্রকাশ করেনি। একটু দেরিতে তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ করেছিল এবং তা প্রকাশ করেছিল।

(আর রাহীকুল মাখতুম, ১৯০)