কাজা রোজার নিয়ত কখন করতে হবে?
রমজানের রোজা ফরজ। শরীয়ত সমর্থিত ওজর (অপারগতা) ছাড়া ইচ্ছাকৃত রোজা ভঙ্গকারী— মৌলিক ফরজ লংঘনকারী ও ইসলামের ভিত্তি বিনষ্টকারীরূপে গণ্য। কোনো ব্যক্তি কারণ ছাড়া রোজা ভাঙলে পরবর্তীতে কখনো কাফফারাসহ রোজার কাজার বিধান রয়েছে। তবে ইচ্ছাকৃত রোজা ভঙ্গকারী পরবর্তীতে যতই রোজা রাখুক না কেন, এর ক্ষতিপূরণ সম্ভব হয় না।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ওজর বা অসুস্থতা ছাড়া রমজানের একটি রোজা পরিত্যাগ করবে— সে যদি ওই রোজার পরিবর্তে আজীবন রোজা রাখে তবু ওই এক রোজার ক্ষতিপূরণ হবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৭২৩)
বিজ্ঞাপন
তবে অসুস্থতা ও সফরকালীন অবস্থায় রোজা না রাখার অনুমতি আছে এবং মেয়েদের ঋতুস্রাব ও সন্তান প্রসব-পরবর্তী স্রাবের সময় রোজা রাখা নিষেধ। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেগুলো কাজা করে দেওয়া আবশ্যক।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘নির্দিষ্ট কয়েক দিন (অর্থাৎ রমজান মাসে) রোজা রাখতেই হবে। (তবে সে সময়ে) যদি তোমাদের কেউ অসুস্থ থাকে অথবা সফরে থাকে, সে অন্য সময়ে (ছুটে যাওয়া) দিনগুলো পূর্ণ করে নেবে (অর্থাৎ, যে কয়টা রোজা ছুটে গেছে, সেগুলো অন্য সময়ে কাজা করে দিতে হবে)।’ (সুরা বাকারা: ১৮৪)
আরও পড়ুন
আয়েশা রা. বলেন, ‘রাসূল সা. বেঁচে থাকা অবস্থায় আমাদের যখন ঋতুস্রাব হতো (এবং এ কারণে আমাদের নামাজ ও রোজা ছুটে যেত), তখন তিনি আমাদের ছুটে যাওয়া রোজাগুলো কাজা করে দেওয়ার নির্দেশ দিতেন, কিন্তু নামাজ কাজা করার নির্দেশ দিতেন না।’ (বুখারি ও মুসলিম)
যথাসম্ভব দ্রুত কাজা করে নেওয়া উত্তম। ছুটে যাওয়া রোজাগুলো একনাগাড়ে রাখতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সময় ও সুযোগ অনুসারে একটা, দুইটা করে কাজা করা যাবে।
ইবনে আব্বাস রা. বলেন, ‘রমজানের কাজা রোজা আলাদা আলাদা করে রাখতে কোনো অসুবিধা নেই। (বুখারি, তা’লিকাত)
কাজা রোজা আদায়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রোজার নিয়ত। কাজা রোজা রাখার আগে নিয়ত করতে হবে এবং রাতেই, সুবহে সাদিক তথা ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার আগে কাজা রোজার নিয়ত করা জরুরি। সুবহে সাদিক হয়ে যাওয়ার পর কাজা রোজার নিয়ত করা সহিহ নয়। কেউ কাজা রোজা রাখা ইচ্ছা করার পর যদি রাতে সুবহে সাদিকের আগে নিয়ত না করে ফজরের পর নিয়ত করে তাহলে তা নফল রোজা হিসেবে গণ্য হবে এবং পরবর্তীতে আবার কাজা রোজা আদায় করতে হবে।
(শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, জাস্সাস ২/৪০১; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৪৫৪;আল কাউসার অনলাইন, আযযাখিরাতুল বুরহানিয়া ৩/৪২; আলবাহরুর রায়েক ২/২৬২; রদ্দুল মুহতার ২/৩৮০)