যে দেশের মুসলিমরা সবচেয়ে কম সময় রোজা রাখে
বিশ্বজুড়ে পবিত্র রমজান মাস চলছে। রমজানে মুসলিমদের ঘরে ঘরে আনন্দের বার্তা বয়ে যায়। রোজা রাখার ক্লান্তি-অবসাদ ও কাজ-কর্মের পরিশ্রান্তিও মুসলিমদের আনন্দ দূর করতে পারে না। বরং এক অনাবিল ও অনির্বচনীয় সুখে মাতোয়ারা থাকে তারা। রোজা রাখার দৈনিক সময় সবচেয়ে কম হোক কিংবা সবচেয়ে বেশি; তাদের আনন্দ-রেশ ও খুশির আবির সবসময় উজ্জ্বল।
ভৌগলিক অবস্থান ও সময়কালের পার্থক্যে প্রতি বছর বিশ্বের মুসলিমরা নানা সময় ধরে পবিত্র রমজানের রোজা রাখেন। যেমন সবচেয়ে কম সময় ১১ ঘণ্টা বিশ মিনিট রোজা রাখে, তেমনি ১৯ ঘণ্টা ৫৭ মিনিটও রোজা রাখে মুসলিমরা।
বিজ্ঞাপন
নিউজিল্যান্ডে মুসলিমরা যেমন আছে
শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে নিউজিল্যান্ড সারাবিশ্বে প্রসিদ্ধ। অর্থনৈতিকভাবে বেশ উন্নত এবং সমৃদ্ধশালীও। কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে নিউজিল্যান্ড দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত। অস্ট্রেলিয়া থেকে পূর্ব-দক্ষিণে ১ হাজার মাইলের দূরত্বে এর অবস্থান। নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণে জনমানবহীন এন্টার্কটিকা। সেই হিসেবে দেশটিকে পৃথিবীর সর্ব দক্ষিণের দেশ বলা যায় অনায়াসে।
আয়তন ও জাতি-গোষ্ঠী
নিউজিল্যান্ডের আয়তন ২ লাখ ৬৭ হাজার ৭১০ বর্গকিলোমিটার। এটি পৃথিবীর ৭৫তম বৃহৎ দেশ। বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী নিউজিল্যান্ডে বসবাস করে। ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পর ইউরোপ, এশিয়া, মিডলইস্ট ও আফ্রিকাসহ নানা দেশের বহু মানুষ এখানে এসে বসতি স্থাপন করে। যার বর্তমান সংখ্যা ইউরোপিয়ান ৭১.২ শতাংশ, মাওরি ১৪.১ শতাংশ, এশিয়ান ১১.৩ শতাংশ, প্যাসিফিক ৭.৬ শতাংশ, মধ্যম পূর্ব লাতিন আমেরিকান, আফ্রিকান ১.১ শতাংশ, অন্যান্য ১.৬ শতাংশ অথবা বলা যায় ৫.৪ শতাংশ নাগরিকের পরিচয়ই অজ্ঞাত।
মুসলমানদের আগমন
রংতুলিতে আঁকা ছবির মতো সুন্দর নিউজিল্যান্ড। নয়নাভিরাম ও মনোরম সৌন্দর্যের দেশটিতে ইসলামের আগমন হয় অভিবাসীদের মাধ্যমে। সর্বপ্রথম চীন থেকে স্বর্ণ-অনুসন্ধান পেশায় জড়িত ১৫ জন মুসলিম নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছিলেন। তারা ওটাগো অঞ্চলের ডানস্টান স্বর্ণক্ষেত্রে তারা কাজ করতেন।
সরকারী পরিসংখ্যান মতে ১৯৫০ সালে নিউজিল্যান্ডে মুসলমান অধিবাসী ছিল দেড় শ জনের মতো। ১৯৬০ সালে এ সংখ্যা ২৬০-এ পৌঁছে। ১৯৭০ সালে ফিজি থেকে ভারতীয় বংশোদ্ভুত মুসলমানরা নিউজিল্যান্ডে বসতি স্থাপন শুরু করেন। তাদের অনুসরণে নব্বইয়ের দশকের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের উদ্বাস্তু মুসলমানরা নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমায়। এভাবে নিউজিল্যান্ডে মুসলিমদের জনসংখ্যা ক্রমে বাড়তেই থাকে।
মুসলমানদের সংখ্যা
নিউজিল্যান্ডে বর্তমানে মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় লাখের খানেক। দেশের সামগ্রিক পরিসংখ্যানে ১.১%। তবে মুসলিমদের অনেক অভিজ্ঞ ও পণ্ডিত আলেম এবং ধর্মীয় ব্যক্তিত্বও রয়েছেন। তাদের অনেকেই ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করেছেন। নিউজিল্যান্ডে ইসলাম প্রচারে ও মুসলিমদের ধর্মীয় কার্যক্রমে তারা সবসময় নিয়োজিত।
মসজিদ ও ধর্মীয় শিক্ষালয়
নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে মুসলিম বসতি রয়েছে। ফলে তাদের আবাসস্থল ঘেঁষে মসজিদ গড়ে তোলা হয়েছে। মসজিদসংলগ্ন কমপ্লেক্সে শিশুদের প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও বেশি কিছু হেফজখানাও গড়ে উঠেছে। কিছু মসজিদের উদ্যোগে ‘সানডে স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ছুটির দিন শিশুদের দিনব্যাপী ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হয় তাতে। আবার বেশ কিছু অনেক আধুনিক মাদরাসাও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
দেশটির রাজধানী ওয়েলিংটন ছাড়াও অকল্যান্ড, ক্রাইস্টচার্চ, নেপিয়ার ও হ্যামিলটনে মুসলমানদের বসবাস রয়েছে। অকল্যান্ডে প্রায় পনেরটি মসজিদ রয়েছে। প্রতিটি মসজিদসংলগ্ন প্রতিষ্ঠানেই শিশুদের জন্য হেফজ, নাজেরা ও প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে।
মুসলমানদের সংগঠন ও অন্যান্য
নিউজিল্যান্ডে ‘ফেডারেশন অব ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশন অব নিউজিল্যান্ড’ (FIANZ) নামে একটি সংগঠন রয়েছে। এটি ১৯৭৯ সালে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। নিউজিল্যান্ড সরকারের নিবন্ধিত সমাজসেবামূলক এই সংগঠনটি মুসলমানরা পরিচালনা করে থাকেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তারা ইসলাম চর্চা, ইসলামী শিক্ষা, সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়ন ছাড়াও নানা ধরনের সমাজসেবামূলক কাজ করে আসছে।
এছাড়াও সংগঠনটির দায়িত্বশীলরা নিউজিল্যান্ডে হালাল গোশত প্রস্তুত ও বিপণনের কাজে আলেমদের সঙ্গে পরামর্শ করে কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করেন এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে তার তত্ত্বাবধান করেন।
ধর্ম পালন ও বিভিন্ন আয়োজন
নিউজিল্যান্ডে মুসলিমদের সংখ্যা তুলনামূলক কম। তবে ধর্ম পালন, ইসলামী রীতি-নীতিতে অভ্যস্ততায় তারা দারুণ সক্রীয়। পাশাপাশি ইসলামের প্রচার-প্রসারেও বেশ সচেষ্ট। নিউজিল্যান্ডে বসবাসকারী স্থানীয় জনগন ও অন্যান্যদের মাঝে ইসলামের বিশ্বাস, মূল্যবোধ প্রচারে তারা বিভিন্নভাবে কাজ করেন। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেন। এই উপলক্ষ্য কেন্দ্র করে তারা আন্তঃধর্মীয় আলোচনা, ইসলামি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেলা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিশেষ ডিনার এবং ইসলামি শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজনও করেন।