রমজানে নারীদের ঘরের কাজে সহযোগিতা করলে যে সওয়াব পাবেন
আল্লাহ তায়ালা রমজান মাসকে রহমত, বরকত ও নাজাত দিয়ে পরিপূর্ণ করেছেন। এক একটি নেক আমলের সওয়াব ৭০ গুণ বৃদ্ধি করেছেন। রমজানে রোজা রাখার পাশাপাশি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, নফল ইবাদত, তারাবি, কোরআন তিলাওয়াত, তাসবিহ পাঠ, তাহাজ্জুদ-সহ আরও অনেক আমল রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
রমজানে বেড়ে যায় নারীর কাজের চাপ
পুরুষেরা বাইরের কাজ বা অফিস থেকে ফিরে যথাযথভাবে আমল করতে পারলেও নারীদের জন্য তা কষ্টকর হয়ে যায়। তারা ভোরে সবার আগে বিছানা ছেড়ে উঠে ঘরের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ঘরদোর পরিষ্কার করা, বাচ্চা সামলানো, রান্নাবান্না করা, খাবার পরিবেশন করা, সবার ভালো-মন্দের খবর নেওয়া, এসব করেই সারাদিন পার করতে হয়। ভোররাতে সবার আগে উঠলেও রাতে সবার পরে বিছানায় যেতে হয়।
সারাদিনের কাজ শেষে শরীরজুড়ে নামে ক্লান্তি
রমজানে নারীদের কাজের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। দিনের দীর্ঘ একটা সময় তারা রান্নাঘরেই কাটিয়ে দেন। নানা পদের ইফতার তৈরি, সেহরির রান্না, রাতের খাবার তৈরি করা-সহ আরও অনেক কাজে ব্যস্ত থাকেন তারা।
রোজা রেখে এতো কাজের পরে তাদের শরীরজুড়ে ক্লান্তি নামে। ফলে তারা রোজা রাখতে পারলেও অন্যান্য ইবাদতগুলো ঠিকমতো পালন করতে পারেন না। এ কারণে এসব ইবাদতের ফজিলত থেকে দূরে থাকেন তারা।
আরও পড়ুন
নারীর সহযোগিতায় পরিবারের অন্যদের এগিয়ে আসা...
এজন্য পরিবারের পুরুষ ও অন্য সদস্যদের নারীদের কাজে সহযোগিতা করা উচিত। যেন নারীরাও রমজানের রহমত-বরকত লাভ করতে পারেন অন্য সবার মতো।
সহমর্মিতার মাস
তাকওয়া অর্জনের পাশাপাশি রমজান সহমর্মিতারও মাস। পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহায়তার মাধ্যমে এ মাসের ইবাদতসমূহ যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব। নবীজি সা. বলেন, রমজান মাস হলো সহানুভূতি ও সহমর্মিতার মাস। (সহিহ ইবনে খুযাইমা, হাদিস : ১৮৮৭)
নবীজি নিজেও পরিবারের সদস্যদের কাজে সহযোগিতা করতেন
আল্লাহর রাসূল সা. নিজেও পরিবারের সদস্যদের কাজে সহযোগিতা করতেন। এক হাদিসে আম্মাজান আয়েশা রা. বলেন, নবীজি সা. ঘরের মানুষের বিভিন্ন সেবায় অংশ নিতেন। এরপর নামাজের সময় হলে বেরিয়ে যেতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০৪৮)
অন্য এক হাদিসে আয়েশা রা. বলেন, নবীজি সা. নিজের কাপড় নিজে সেলাই করতেন, জুতা মেরামত ও সাংসারিক যাবতীয় কাজ করতেন। (ফাতহুল বারি, ১৩/৭০)
ঘরের কাজে নারীদের সহযোগিতা নবীজির আদর্শ
হাদিসের বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, গৃহস্থালী কাজে অংশ নেওয়া নবীজির আদর্শ। তাই এতে লজ্জা পাওয়ার কোনো কারণ নেই।
অথচ আমাদের সমাজে ঘরের কাজে পুরুষের অংশ গ্রহণকে বিদ্রুপের চোখে দেখা হয়, এসব নিয়ে হাসি তামাশাও করেন কেউ কেউ। কিন্তু যে কাজ আমাদের নবীজি করেছেন, তা আমাদের জন্য সুন্নাহ এবং করতে পারা নিশ্চয় গৌরবের। এছাড়া একজন মুমিনের জন্য নবীজির সুন্নাহ পালন করা তাকে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।
রমজানেও নারীর ভুল-ত্রুটি ধরতে পটু অনেকে
বান্দাকে সংযম শেখাতে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র রমজানে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আহার পরিহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই রমজানে অতিমাত্রায় ভোজনবিলাসী হয়ে ওঠেন। সেই চাহিদার জোগান দিতেই নারীরা দিনের বেশিরভাগ সময় রান্না ঘরে পার করে দেন। আগুনের তাপে, ঘামে ভিজে রান্না করার পরেও রান্নায় একটু এদিক-সেদিক হলে পরিবারের অনেকেই নিজের রাগ-ভালো না লাগা নিয়ন্ত্রণ করতে না পরে কটুকথা শুনিয়ে দেন। যা কখনোই কাম্য নয়।
আরও পড়ুন
নবীজি কখনো খাবারের দোষত্রুটি ধরতেন না
আল্লাহর রাসূল সা.-এর অনুপম শিক্ষা হলো, কখনো খাবারের দোষত্রুটি না ধরা। আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবীজি সা. কখনো খাবারের দোষত্রুটি ধরতেন না। তার পছন্দ হলে খেতেন, অপছন্দ হলে রেখে দিতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫১৯৮)
রমজানের বিধান সবার জন্য সমান
রমজানের রোজা নারী-পুরুষ উভয়ের ওপর ফরজ। পুরুষের পাশাপাশি রোজা রাখা ও অন্যান্য নফল ইবাদত করার হক নারীদেরও রয়েছে। তাদেরও ইচ্ছা জাগে নফল ইবাদতের। তাই রমজান মাসে বাহারি খাবারে সংযমী হয়ে নারী ও গৃহকর্মীদের কাজের বোঝা হালকা করে দিতে হবে। যাতে তারাও সব রকম নফল ইবাদতের অংশীদার হতে পারে।
নবীজি সা. বলেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসে নিজের অধীনস্থদের কাজের চাপ কমিয়ে দেয়, আল্লাহ তায়ালা তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন। (শুয়াবুল ঈমান, ৩৩৩৬)
এজন্য রমজানে সংযমী আচরণ, সহানুভূতি, সহমর্মিতা গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে পুরো বছর এই শিক্ষা ধরে রাখতে হবে।