প্রতীকী ছবি

রিকশা চালক, গার্মেন্টস শ্রমিক, মাটি কাটার কাজ করেন—  এ জাতীয় পেশায় যুক্ত ব্যক্তিদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। এ কারণে তাদের জন্য রোজা রাখা কঠিন। তবে এই ব্যক্তিদের ওপরও রোজা ফরজ। রমজান মাসে কঠোর পরিশ্রমের কারণে রোজা না রাখার কোনো সুযোগ নেই। এবং পরিশ্রমের অজুহাতে রোজা না রাখা জায়েজ নেই। 

যারা কঠোর পরিশ্রমের পেশায় যুক্ত তাদের উচিত রমজানে এমন কাজ থেকে বিরত থাকা, যে কাজের চাপের কারণে রোজা ছাড়তে হয়। একান্ত যাদের পক্ষে এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যু্ক্ত হওয়া কঠিন তাদের জন্য রমজানে কর্মঘণ্টা বা কাজের পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে নেওয়া উচিত। 

যেমন, বছরের অন্যান্য দিনগুলোতে পুরো দিন কাজ করলেও রমজানে অর্ধদিবস কাজ করে বাকি সময় বিশ্রাম নেবেন। এতে করে পরিশ্রম কমে যাবে, রোজা রাখাও সহজ হবে। তবে পরিশ্রমের অজুহাতে রোজা ছাড়ার অবকাশ নেই।

তবে এ জাতীয় পেশার অথবা অন্য কোন রোজাদার যদি রমজান মাসে এমন কঠোর পরিশ্রম করে, যার কারণে প্রাণবায়ু বের হওয়ার আশঙ্কা হয়, তাহলে সেই দিনের রোজা ছেড়ে দেওয়ার আবকাশ আছে তার জন্য এবং পরবর্তীতে এই রোজার কাজা আদায় করে নিতে হবে। এমন পরিস্থিতির কারণে রোজা ভাঙলে কাফফারা আদায় করতে হবে না, শুধু কাজা করে নিলেই হবে

আর যাদের অধীনে কঠোর পরিশ্রমের পেশায় যুক্ত ব্যক্তিরা কাজ করেন তাদেরও উচিত নিজের অধীস্তদের কাজ কমিয়ে দেওয়া। কারণ, আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,  রমজানে যে ব্যক্তি তার অধিনস্তদের কাজ হালকা করে দিবে আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন। (শুআবুল ইমান; বায়হাকি)

মনে রাখতে হবে, সুস্থ মস্তিষ্ক, প্রাপ্ত বয়স্ক সবার জন্য রোজা রাখা ফরজ। রোজা ফরজ হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمْ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারীতা (তাকওয়া) অর্জন করতে পার। (সূরা বাকারা, আয়াত, ১৮৩) 

অপর আয়াতে আল্লাহ তায়লা বলেছেন, 

فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمْ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ

কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে যেন এ মাসের রোজা রাখে’’। (সূরা বাকারা, আয়াত, ১৮৫) 

এক ব্যক্তি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন আমাকে বলুন, আল্লাহ আমার উপর রোজা থেকে কি ফরজ করেছেন? উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমার উপর রমজান মাসের রোজা ফরজ করা হয়েছে। তবে তুমি এর চেয়ে বেশি নফল রোজা রাখতে পার। (বুখারি)

কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা না রাখলে তার কঠোর শাস্তি হবে। এ বিষয়ে এক হাদিসে হজরত আবু উমামা বাহিলি রা. বলেন—

আমি রাসূল সা.-কে বলতে শুনেছি, একবার আমি ঘুমিয়েছিলাম। এ সময় দুজন মানুষ এসে আমার দুই বাহু ধরে আমাকে দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে গেল। সেখানে নিয়ে তারা আমাকে বলল, পাহাড়ে উঠুন। আমি বললাম, আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তারা বলল, আমরা আপনার জন্য সহজ করে দিচ্ছি। তাদের আশ্বাস পেয়ে আমি উঠতে লাগলাম এবং পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত গেলাম। সেখানে প্রচণ্ড চিৎকারে শব্দ শোনা যাচ্ছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কীসের শব্দ? তারা বলল, এটা জাহান্নামিদের চিৎকার। এরপর তারা আমাকে এমন কিছু লোকের কাছে নিয়ে গেল, যাদের পায়ের টাকনুতে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের গাল ছিন্নভিন্ন এবং তা থেকে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? তারা বলল, এরা হচ্ছে এমন রোজাদার যারা রোজা পূর্ণ করার আগে ইফতার করত।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস, ৭৪৯১)

এনটি