রাতের আধারে লুকিয়ে মহানবী সা.-এর তিলাওয়াত শুনত কুরাইশ নেতারা
মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কাবাসীকে প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া শুরু করার পর কাফের ও কুরাইশ নেতারা সর্বোতভাবে তার আহ্বান ব্যাহত করার চেষ্টা করে।
তারা কোথাও মুসলমানদের দেখলে ঠাট্টা বিদ্রুপ করত। তুলনামূলক দুর্বল মুসলমানদের কাছে পেলে তাদের নির্যাতন করত। প্রকাশ্যে কোরআন তিলাওয়াত সহ্য করতে পারত না তারা।
বিজ্ঞাপন
মক্কায় কুরাইশদের সামনে সর্বপ্রথম উচ্চস্বরে কোরআন তিলাওয়াত করা সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে নির্দয়ভাবে প্রহার করে কাফেরেরা।
একদিন দুপুরে কাবা চত্ত্বরে কুরাইশ নেতারা আড্ডায় বসে গল্পগুজব করছিল। এ সময় কাবা প্রাঙ্গণে মাকামে ইবরাহিমের কাছে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে বিসমিল্লাহসহ সূরা আর রহমান তিলাওয়াত শুরু করেন তিনি।
তার তিলাওয়াত শুনে কুরাইশ নেতারা একযোগে তার ওপর হামলা করে বসে। তারা তার মুখমণ্ডলে আঘাত করে তাকে রক্তাক্ত করে।
আরও পড়ুন
প্রকাশ্যে কোরআন তিলাওয়াতের বিরোধিতা করলেও কুরাইশ নেতারা রাতের আধারে গোপনে লুকিয়ে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তিলাওয়াত শুনত। তবে প্রকাশ্যে কোরআন তিলাওয়াতের বিরোধিতার পর লুকিয়ে লুকিয়ে তিলাওয়াত শোনার বিষয়টি কেউ জেনে ফেললে সম্মান-হানি হবে ভেবে পরস্পরের কাছে তিলাওয়াত শোনার বিষয়টি তারা একে অপরের কাছে গোপন রাখত।
একদিন রাতে রাসূল সা. নামাজে কোরআন তিলাওয়াত করছিলেন। এ সময় তার তিলাওয়াত শোনার জন্য লুকিয়ে লুকিয়ে নিজেদের ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লো আবু সুফিয়ান, আবু জাহল, আখনাস ইবনে শুরায়ক ইবনে আমর ইবনে সাকাফীর মতো কুরাইশের শীর্ষ নেতারা।
কোরআন তিলাওয়াত শোনা শেষে যখন তারা নিজের বাড়িতে ফিরে যাচ্ছিল, তখন পথিমধ্যে একজনের সঙ্গে আরেকজনের সাক্ষাৎ হলো। মুখোমুখি হওয়ার পর তারা একে অপরকে তিরস্কার করল। তারা প্রতিজ্ঞা করল আর কখনো রাতের আধারে চুপিসারে নবী মুহাম্মদের কোরআন তিলাওয়াত শুনবে না।
প্রতিজ্ঞার পরও পরদিন রাতে তারা আবার লুকিয়ে নবীজির কোরআন তিলাওয়াত শুনতে গেল। তিলাওয়াত শোনা শেষে বাড়িতে ফেরার পথে আবার একজনের সঙ্গে আরেকজনের দেখা হলো। সেদিনও আর কখনো লুকিয়ে তিলাওয়া না শোনার প্রতিজ্ঞা করল। কিন্তু তৃতীয় দিনও তারা আবারও লুকিয়ে লুকিয়ে নবীজি সা.-এর তিলাওয়াত শুনলো।
সীরাতুন্নবী ১ম খণ্ড/২৭৮