মহানবী সা.-এর ওপর ওহী নাজিল হতো যেভাবে
সঠিকভাবে সত্যপথে মানুষের জীবন পরিচালনার জন্য আল্লাহ তায়ালা নবী-রাসুলদের কাছে বিধান পাঠিয়েছেন। নবী-রাসূলরা সে জীবন বিধান মানুষের কাছে পৌঁছে দেন। নবী-রাসূলদের কাছে আল্লাহর বিধান নাজিল বা পাঠানোর পদ্ধতিকে ওহী বলা হয়।
ওহী শব্দের শব্দিক অর্থ : গোপনে দ্রুত ইঙ্গিত করা। আল্লাহর পক্ষ হতে জিবরাঈল আলাইহিস সালামের মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যে আহকাম নাজিল হয়েছে, তাকে ওহী বলা হয়।
বিজ্ঞাপন
ওহী দুই প্রকার। প্রথম প্রকার, প্রত্যক্ষ ওহী; যার নাম ‘কিতাবুল্লাহ’ বা ‘আল-কোরআন’। এর ভাব, ভাষা উভয়ই মহান আল্লাহর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা হুবহু প্রকাশ করেছেন।
দ্বিতীয় প্রকার: পরোক্ষ ওহী যার নাম সুন্নাহ বা হাদিস’। এর ভাব আল্লাহর, তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা নিজের ভাষায়, নিজের কথায়, নিজের কাজ ও সম্মতির মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।
আরও পড়ুন
প্রথম প্রকারের ওহী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সরাসরি নাজিল হতো এবং তার কাছে উপস্থিত লোকজন তা উপলব্ধি করতে পারতেন। কিন্তু দ্বিতীয় প্রকারের ওহী তার উপর প্রচ্ছন্নভাবে নাজিল হতো এবং অন্যরা তা উপলব্ধি করতে পারতেন না।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ওহী নাজিল হতো কয়েক পদ্ধতি বা কয়েকভাবে। প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর ওহী নাজিলে পদ্ধতি ছিল ৬ টি। তাহলো—
স্বপ্নযোগে
আম্মাজান আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সর্বপ্রথম যে ওহি আসে তা ছিল নিদ্রাবস্থায় স্বপ্নযোগে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস, ৩)
অন্যান্য নবী-রাসূল আ.-ও স্বপ্নযোগে ওহী লাভ করতেন। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে পুত্র, নিশ্চয়ই আমি ঘুমের ভেতর স্বপ্ন দেখেছি যে আমি তোমাকে জবাই করছি।’ (সূরা সফফাত, আয়াত, ১০২)
ইলহামের মাধ্যমে
ইলহাম হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিনের অন্তরে কোনো কিছু ঢেলে দেওয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই ‘রুহুল কুদুস’ (জিবরাইল) আমার অন্তরে ঢেলে দিয়েছে যে কোনো ব্যক্তি মারা যায় না যতক্ষণ না তার জীবনকাল পূর্ণ হয় এবং সে পূর্ণ জীবিকা লাভ করে।’ (সহিহ আল-জামি, হাদিস, ২০৮৫)
ঘণ্টাধ্বনির মতো
হারিস ইবনে হিশাম রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আপনার কাছে ওহী কি রূপে আসে? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোনো কোনো সময় তা ঘণ্টাধ্বনির মতো আমার কাছে আসে। আর এটি-ই আমার ওপর সবচেয়ে বেদনাদায়ক হয় এবং তা শেষ হতেই ফেরেশতা যা বলে তা আমি মুখস্থ করে নিই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস, ২)
ফেরেশতা মানুষের আকৃতিতে ওহী নিয়ে আগমন করতেন
আল্লাহর নির্দেশনা নিয়ে কখনো কখনো ফেরেশতা মানুষের আকৃতিতে আসত। এ অবস্থায় উপস্থিত সাহাবিরা ফেরেশতাদের দেখতে পেতেন।
সহিহ বুখারির হাদিসে জিবরিলে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিবরাইল আলাইহিস সালাম একজন পথিকের বেশে হাজির হন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ওহী কিভাবে আসে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আবার কখনো ফেরেশতা মানুষের রূপধারণ করে আমার সঙ্গে কথা বলে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস, ২)
ফেরেশতা আপন আকৃতিতে
জিবরাইল আলাইহিস সালাম একাধিকবার আপন আকৃতিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘একবার আমি হাঁটছি, হঠাৎ আসমান থেকে একটা শব্দ শুনতে পেয়ে আমার দৃষ্টিকে ওপরে তুললাম। দেখলাম, সেই ফেরেশতা, যিনি হেরা গুহায় আমার কাছে এসেছিলেন, আসমান ও জমিনের মধ্যে একটি আসনে উপবিষ্ট। এতে আমি শঙ্কিত হলাম।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস, ৪)
সরাসরি আল্লাহর সঙ্গে কথোপকথন
ইসরা বা মিরাজের রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সরাসরি আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি নামাজের নির্দেশ লাভ করেন। মুসা আলাইহিস সালামের সঙ্গেও আল্লাহ কথা বলেন। কিন্তু মুসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর দর্শন লাভ করেননি। পৃথিবীতে কেবল মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভের অনন্য মর্যাদা লাভ করেন।
ইরশাদ হয়েছে, ‘মুসার সঙ্গে আল্লাহ সাক্ষাৎ বাক্যালাপ করেছিলেন।’ (সুরা নিসা, আয়াত, ১৬৪)
এনটি