ফিতরা যারা দেবেন
ফিতরা আদায় করা ইসলামি বিধান মতে ওয়াজিব। যতটুকুতে জাকাতের নিসাব ধর্তব্য— ঠিক ততটুকুতেই ফিতরার নিসাব। অর্থাৎ কারো কাছে সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা তার সমমূল্যের নগদ অর্থ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অতিরিক্ত হয়ে ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় বিদ্যমান থাকলে, তার ওপর ফিতরা দেওয়া ওয়াজিব।
যার ওপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব, তিনি নিজের পক্ষ থেকে যেমন আদায় করবেন, তেমনি নিজের অধীনদের পক্ষ থেকেও আদায় করবেন। তবে এতে জাকাতের মতো বর্ষ অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়। (ফাতহুল কাদির : ২/২৮১)
শরিয়তে ফিতরার পরিমাণের মাপকাঠি
ফিতরার পরিমাণ সম্পর্কে শরিয়তে দুইটি মাপকাঠি রয়েছে; তা হচ্ছে— এক. ‘এক সা’ ও ‘নিসফে সা’। খেজুর, পনির, জব ও কিশমিশ দিয়ে আদায় করলে এক ‘সা’= ৩২৭০.৬০ গ্রাম (প্রায়) অর্থাৎ তিন কেজি ২৭০ গ্রামের কিছু বেশি (ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হিসাবে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম)। দুই. আর গম দিয়ে আদায় করলে ‘নিসফে সা’= ১৬৩৫.৩১৫ গ্রাম বা ১.৬৩৫৩১৫ কেজি (প্রায়) অর্থাৎ এক কেজি ৬৩৫ গ্রামের কিছু বেশি প্রযোজ্য হবে। (আওজানে শরইয়্যাহ, পৃষ্ঠা : ১৮)
বিজ্ঞাপন
মহানবী (সা.)-এর যুগে মোট চারটি পণ্যের মাধ্যমে সদকাতুল ফিতর আদায় করা হতো- খেজুর, কিশমিশ, জব ও পনির। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘আমাদের সময় ঈদের দিন এক সা খাদ্য দ্বারা সদকা আদায় করতাম। আর তখন আমাদের খাদ্য ছিল জব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর।’ (বুখারি)
ওপরে উল্লেখিত খাদ্যবস্তু যেমন দেওয়া যাবে, তেমনি সেগুলোর পরিবর্তে কোনো একটিকে মাপকাঠি ধরে তার মূল্যও আদায় করা যাবে। মূল্যের দিক থেকে খাদ্যবস্তুগুলোর মাঝে তফাৎ থাকায় সবচেয়ে কম দামের বস্তুকে মাপকাঠি ধরে ফিতরা আদায় করলেও তা আদায় হয়ে যাবে।
জনপ্রতি ফিতরার মূল্য কতো?
বর্তমান বাজারদর হিসাবে যেহেতু গমের দামই সবচেয়ে কম, তাই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রতিবছর আধা ‘সা’ গমকে মাপকাঠি ধরে ওই সময়ের বাজারদর হিসাবে তার মূল্য ফিতরার সর্বনিম্ন পরিমাণ (এ বছর তা ৭০ টাকা) ঘোষণা করা হয়। আর পনির দ্বারা আদায় করলে সর্বোচ্চ বাজার মূল্যে এবার ফিতরা দুই হাজার ৩১০ টাকা।
নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী বেশি মূল্যের খাদ্যবস্তুকে মাপকাঠি ধরে ফিতরা আদায় করা উত্তম। কারণ সদকার ক্ষেত্রে গরিবদের প্রয়োজন পূরণ ও তাদের স্বার্থ সংরক্ষণই হলো গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য আদায়কারীর সামর্থ্যও বিবেচনায় রাখা হয়।